স্ত্রীর নামে সম্পদ দিয়ে মিথ্যে যৌতুক মামলায় জেল,শেষে রাস্তায় মৃত্যু

    0
    279

    স্ত্রীকে ভালোবেসে বাপ, মা, ভাইদের ছেড়েছেন আবু জাফর (৫৪)। প্রবাসে কষ্টকর জীবন কাটিয়ে যা জমিয়েছেন, তার সবটুকু দিয়ে স্ত্রী রোজি আক্তারের নামে নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকায় জায়গা কিনে গড়েছেন বাড়ি। সেই স্ত্রী তাকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে পাঠান। আর নিজে এখানকার সবকিছু বিক্রি করে সন্তানদের নিয়ে চলে যান নোয়াখালী মাইজদী নিজের বাপের বাড়ি। যার জন্য সব করেছেন, তার মামলায় জেল খেটে বের হয়ে ধাক্কা খেলেন আবু জাফর, যখন শুনেন স্ত্রী সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছেন। দুঃখে, অপমানে স্ত্রী-সন্তানদের কাছে আর ফিরে যাননি। ঘুরতেন মাজারে-মাজারে ফকিরি বেশে। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে তার মৃতদেহ পড়ে ছিল আমানত শাহ মাজারের সামনে রাস্তায়। পাশে ছিল পথ চলতি মানুষের দেওয়া কিছু ভাংতি টাকা। এক সময়ের কোটিপতি আবু জাফরের করুণ মৃত্যু হলো রাস্তায়। দাফন হলো সাধারণ মানুষের দেওয়া অর্থে। সন্তানকে এ খবর জানানো হয় মোবাইল ফোনে। পরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে সেই ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

    কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে যদি বলি, ঘটনাটা আমার জন্য অনেক বড় একটা শিক্ষা। সংসার, অর্থ-বিত্ত এসব কিছুই আমাদের নয়। তবু আমরা লোভ লালসার বশবর্তী হয়ে ছুটে বেড়াই অর্থের পেছনে। আবু জাফর জীবনে যা উপার্জন করলেন, আপন মানুষকে বিশ্বাস করে সব লিখে দিলেন। তাকেই মরে পড়ে থাকতে হলো রাস্তায়।

    আব জাফরের লাশ উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কোতোয়ালী থানার সাবইন্সপেক্টর (এসআই) বাবলু পাল আজাদীকে বলেন, সোমবার বেলা সাড়ে বারোটার দিকে খবর পাই রাস্তার পাশে এক লোক পড়ে আছেন। সাড়া দিচ্ছেন না। গিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি। দ্রুত চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঞ্জাবি পরিহিত শ্মশ্রুমণ্ডিত ওই ব্যক্তির পকেট খুঁজে ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) আর একটি প্রেসক্রিপশন পাই। এনআইডিতে ঠিকানা লেখা আছে, বাড়ি নং ১৬১৩, কাজির দেউড়ি ২ নং গলি। সেখানে গিয়ে জানতে পারি, একসময় সেখানে তার জায়গাসমেত বাড়ি ছিল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত ছিলেন। ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের সময় দেশে ফিরে আসেন। কুয়েতে যা উপার্জন করেন তার সব টাকা জমা থাকতো স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা থেকে জায়গাটা কেনা ও বাড়ি করা। ১০/১২ বছর পূর্বে তার স্ত্রী রোজি আক্তার আবু জাফরের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করেন। এ মামলাটা করার কারণে তিনি মনে খুব আঘাত পান। কারণ মামলায় লেখা ছিল, যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর করতেন তিনি।

    তিনি জানান, আবু জাফর ভালোবেসেই রোজি আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন। তাকে বিয়ে করার কারণে মা-বাবা, ভাইদের ত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। স্ত্রী রোজি আক্তারের অ্যাকাউন্টেই ছিল আবু জাফরের উপার্জিত সব টাকা। অথচ তার বিরুদ্ধে মামলা হলো কিনা যৌতুক চেয়ে নির্যাতনের! নীরবে আদালতের রায় মেনে তিনি জেলে যান। জেল খেটে বের হয়ে শুনেন তার সাধের বাড়িঘর আর নেই। স্ত্রী সব বিক্রি করে দুই ছেলে ফাহিম, নাইম ও মেয়ে প্রিয়াংকাকে নিয়ে চলে গেছেন বাপের বাড়ি মাইজদীতে।

    এসআই বাবলু পাল বলেন, আমরা কাজীর দেউড়ি গিয়ে জানতে পারি, তার আদি বাড়ি ছিল আলকরণে। বাবা মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ভাগ বণ্ঠন হয়ে যায়। নিউ মার্কেটে একটি দোকানে চাকরি করেন। তার এক ভাইয়ের খোঁজ পাই। পরে তার মাধ্যমে অন্য ভাই, ভাইপোদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারি, তাদের সাথে আবু জাফরের সম্পর্ক চুকে গেছে রোজি আক্তারকে বিয়ের পরপরই।

    এদিকে আমানত শাহ মাজারে থাকা ভবঘুরেরা জানায়, আবু জাফর মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়ান। হাত পেতে যা পান তা দিয়ে পেট চলে। গত দুই মাস ধরে আমানত শাহ মাজারে আসা-যাওয়া করছিলেন তিনি। একবার এলে দুই-তিন দিন থাকতেন। এবার এসেছিলেন দুদিন আগে। রাস্তার পাশে যেখানে বসেছিলেন, সেখানেই একসময় শুইয়ে পড়েন। অনেকে ভেবেছিলেন ঘুমাচ্ছেন। পরে সাড়া শব্দ না পেয়ে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, তার লাশ তার ভাইদের মাধ্যমে চৈতন্যগলি কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ।সূত্রঃদৈনিক আজাদী