স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি

    0
    380

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪নভেম্বর,বিশেষ প্রতিনিধিঃ  শিশুরাই দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তিনিও শিশুদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। অপরদিকে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩ টি দেশ স্বাক্ষরকৃত জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ, জাতীয় শিশুনীতি ২০১১ এবং সর্বশেষ পাস হওয়া শিশু আইন, ২০১৩ অনুসারে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যাবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাদেরকে এ ধরনের কাজে প্রলুদ্ধ বা বাধ্য করা যাবে না। এমনকি গত নির্বাচনী ইশতেহারে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল যে তারা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের ব্যবহার করবে না। কিন্তু দেশি-বিদেশী সকল আইন-কানুন, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এবং দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অঙ্গীকারকে উপক্ষা করে সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি সিদ্ধান্ত মতে দেশের সব স্কুলে ইউনিট কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

    বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ ধরনের সংবাদ দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শিশু অধিকার কর্মী ও শিশুদের নিয়ে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনগুলো। প্রতিবাদে সরব হয়েছেন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে।

    বিশ্ব জুড়ে শিশুর অধিকার সুরক্ষায় ১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে শিশু অধিকার কনভেনশন বা সনদ (সিআরসি) গৃহীত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর ২০ নভেম্বর সার্বজনীন শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

    তবে এ বছর সার্বজনীন শিশু দিবসের একদিন পরে ২১ নভেম্বর মঙ্গলবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত স্কুল কমিটি গঠন সংক্রান্ত এক নোটিশে সংশ্লিষ্ট ইউনিটসমূহকে দেয়া নির্দেশনাকে মেনে নিতে পারছেন শিশু অধিকার কর্মীরা। এ সিদ্ধান্তকে স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিশুদের বিকাশের জন্য হুমকি স্বরুপ হিসেবে দেখা হচ্ছে যা শিশুদের সুরক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে বাধাগ্রস্ত করবে। আর এর ফলে শিশুর সামাজিকীকরণ হবে ভিন্নভাবে।

    এই পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আজ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ মডেল ইয়ূথ পার্লামেন্টের প্রধান নির্বাহী ও বাংলাদেশ শিশু সংসদের সাবেক আইনমন্ত্রী সোহানুর রহমান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি শিশুর অধিকার রয়েছে শিশুর মত করে বেড়ে ওঠার। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা মাধ্যমে তাঁদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা শুধু অমানবিকই নয়; দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক অপরাধও। যদিও শিশুদের ভোটাধিকার নেই, থাকার কথাও নয়। আর তাই ভোটের রাজনীতিতে শিশুরা গুরুত্বহীন বলেই বিবেচিত হয়ে থাকে। শিশুদের রাজনীতিতে অংশগ্রহন মানে দেশের ভবিষ্যৎকে গলা টিপে হত্যা করার শামিল! শিশু বয়সেই তারা মাঠের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে নিজেদের জীবনের পাশাপাশি দেশের ভবিষ্যতকেও অন্ধকারে ঠেলে দেবে। আমাদেরকে শিশুবান্ধব রাষ্ট্র গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই সব ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে’’।

    শিশুদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে তাদেরকে সব ধরণের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিকালীন সময়ে দলীয় কর্মসূচি থেকে বাইরে রাখার মাধ্যমে শিশু অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছে সংগঠনটি।

    উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অনুচ্ছেদ ২৭ এ শিশুদের উন্নয়নের ব্যাপারে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশুর শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য উন্নত জীবন মানের ব্যবস্থার প্রতি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেবে। অনুচ্ছেদ ২৮ এ দেয়া হয়েছে শিশুর শিক্ষা লাভের অধিকার। জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এর ৬.৭.৪. অনুচ্ছেদে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে” শিশুদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার, প্রলোভন বা জোর করে জড়িত করা হবে না”। একইভাবে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাশকৃত শিশু আইনেও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শিশুদের ব্যাবহার সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে বিবৃতিটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

    সোহানুর রহমান বিবৃতিতে আরো বলেন, ‘‘জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের ৩২ টি অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন করে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন যেন রাজনীতিতে শিশুদের ব্যাবহার না করা হয়। অথচ তারাই স্কুলগামী শিশুদের ঝূকিপূর্ণ রাজনীতির মাঠে আনার ব্যাবস্থা নিয়েছে। যা আমাদের হতাশ করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশে তরুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়া যেতেই পারে। তাই বলে স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলীগ বা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের কমিটি গঠন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আজ ছাত্রলীগ কমিটি করলে কাল আর এক দল পাল্টাপাল্টিভাবে কমিটি করবে। এমনিতেই তৃণমূলে স্টুডেন্ট কেবিনেটের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। এতে কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাবে, ক্ষমতা প্রর্দশন করতে গিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পরবে। আমরা শিশুদের আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত পরিহার করা হোক।

    আশা রাখি, মেধাবীদের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নের্তৃবৃন্দ এই বিষয়টা নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাববেন এবং বাংলাদেশের সোনালী ভবিষ্যতের স্বার্থে হলেও তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন। ছাত্র রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তবে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দেশের সেকেন্ড পার্লামেন্টখ্যাত ডাকসুসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ হয়ে আছে। সুতরাং ডাকসুসহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনরায় চালু করতে  ছাত্রলীগ  এই ব্যাপারে সোচ্চার হবে বলে আমরা  আশা করি ।