সুনামগঞ্জে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে পুলিশ সুপারের মত বিনিময়

    0
    256

    “পুলিশ প্রশাসনকে সাংবাদিক কমিউনিকেটিভ ও সৌহার্দপূর্ণ হওয়া উচিতঃপুলিশ সুপার বরকতুল্লাহ খান” 

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৬এপ্রিলঃ জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া,সুনামগঞ্জ থেকে : সুনামগঞ্জ জেলার নবাগত পুলিশ সুপার মো: বরকতুল্লাহ খান,জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ঐতিহ্য ও সুনামকে ধরে রাখতে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করেছেন। তিনি বলেছেন,সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজ ও রাস্ট্রের গোয়েন্দা।পুলিশ প্রশাসনের চাইতেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরো তীক্ষè ও গভীর থেকে গভীরতর হয়। তাই পুলিশ প্রশাসনকে সাংবাদিক কমিউনিকেটিভ ও সৌহার্দপূর্ণ হওয়া উচিত।

    বিদায়ী পুলিশ সুপার হারুন-অর রশীদ সুনামগঞ্জের সাংবাদিক সমাজের সাথে যে সৌভাতৃত্ববোধ ও সহমর্মীতা রেখে গেছেন তারই ধারাবাহিকতায় আমি কাজ করে যাবো। বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে প্রথম কর্মদিবেস যোগদানের পরপরই জেলার কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্র মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীদের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে নবাগত পুলিশ সুপার এসব কথা বলেন।

    অতিরিক্ত  পুলিশ সুপার বাবু সঞ্জয় সরকারের সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন,সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ,এ এস পি (সার্কেল) বাবু কানন কুমার দেবনাথ। পুলিশ অফিসারদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন,সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শহিদুল্লাহ,ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ সামছুল ইসলাম,ডি আই ওয়ান মোঃ আনোয়ার হোসেন মির্জা, ডিবি ওসি কাজী মুক্তাদির হোসেন,ডি আই টু মোঃ আব্দুল লতিফসহ জেলা পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

    সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি লতিফুর রহমান রাজু, দৈনিক সুনামগঞ্জের খবর পত্রিকার সম্পাদক পংকজ দে,সুনামগঞ্জের ডাকের নির্বাহী সম্পাদক কে জি মানব তালুকদার, মোহনা টিভির জেলা প্রতিনিধি কুলেন্দু শেখর দাশ,আলোকিত বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি আল-হেলাল,দৈনিক আজকের সুনামগঞ্জ এর সম্পাদক আবেদ মাহমুদ চৌধুরী,দৈনিক আমাদের সময়ের জেলা প্রতিনিধি বিন্দু তালুকদার,দৈনিক সুনামগঞ্জের সময়ের সম্পাদক ও দৈনিক দিনকালের জেলা প্রতিনিধি সেলিম আহমদ তালুকদার, বৈশাখী টিভির জেলা প্রতিনিধি অরুন চক্রবর্তী, দৈনিক সুনামকন্ঠের ষ্টাফ রিপোর্টার আকরাম উদ্দিন, এসএ টিভির জেলা প্রতিনিধি মাহতাব উদ্দিন তালুকদার, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি মাছুম হেলাল,এনটিভির জেলা প্রতিনিধি দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী,যমুনা টিভির প্রতিনিধি মাহমুদুর রহমান তারেক,দৈনিক আজকালের খবরের জেলা প্রতিনিধি আমিনুল হক,ইন্ডিপেেেন্ডন্ট টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন ও দৈনিক প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল শহীদসহ আরো অনেকে।

    তিনি বলেন সুনামগঞ্জ মরমী কবির দেশ। এ জেলার অধিকাংশই হচ্ছে জল জোৎ¯œার মানুষ,আবেগ প্রবণ মানুষ। আমিও আপনাদের পাশের জেলা নেত্রকোনার লোক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের কারনে এ জেলার ফসলহানী হওয়ার পরও মানুষ ধৈর্য্যের সাথে নিয়মত্রান্ত্রিক আন্দোলন করছে। অন্য জেলা হলে যে কিহতো তা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই জানেন। তিনি বলেন,আমি যোগদানের আগে সিলেটে নেমেই দুই মহান আউলিয়ার মাজার জেয়ারত করে দোয়া করেছি আল্লাহ যেন এই সংকট মোকাবেলায় আমাদেরকে ধৈর্য্যের সাথে পথ চলতে সাহায্য করেন।

    সুনামগঞ্জ জেলা জঙ্গীবাদমুক্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন,তারপরও এজন্য সাংবাদিকদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই শুরু হবে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ প্রশাসনের কেউ যদি মাদক ব্যাবসার সাথে কোননা কোনভাবে জড়িত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। মাদকের ছোবলে আমাদের যুবশক্তি পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা সবচেয়ে বেশী মরণব্যাধি। এর বিপননও সহজলভ্য। প্রাইভেট হেলিকপ্টারে পর্যন্ত এগুলো বাইরে থেকে নিয়ে আসে। সুনামগঞ্জে কিছু কিছু জায়গায় ইয়াবা ব্যবসা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করবো এগুলো সমূলে বিনাশ করতে। শহরটাকে সিসিটিভির আওতায় আনাসহ এ জেলাকে নিয়ে আমার কিছু পরিকল্পনা আছে। সাংবাদিকদের নিয়ে সকল পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।

    পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষা আমরা স্বচ্ছতার সাথে করার চেষ্টা করবো। জঙ্গীবাদের সাথে মূল ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। বিদেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে ধর্মীয় উগ্র ব্যক্তিরা এর নামে ফায়দা হাছিলের চেষ্টা করছে। জঙ্গী ও তাদের অবস্থান বাসা বাড়ী ভাড়াটেদের সম্পর্কে আমরা তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে দিয়েছি। মাদক জঙ্গীবাদের স্থান সুনামগঞ্জে হবেনা।

    সাংবাদিক আল-হেলাল বলেন,২০০০ইং সালের দিকে সুনামগঞ্জ সদর থানার সাবেক ওসি তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী হাছননগরের একটি বাসা থেকে ৩ সোহেল নামে ৩ যুবককে আটক করেছিলেন। তারা নিজেদেরকে আল্লাহর দল বলে পরিচয় দিয়েছিলো। পুরাতন এই মামলার কাগজপত্র ঘেটে এদের সম্পর্কে নতুন করে ইনফরমেশন নেয়া যেতে পারে আটককৃত যুবকরা পরবর্তীতে কোন জঙ্গী কানেকশনের সাথে জড়িত হয়েছে কিনা। জাতীয় জঙ্গী সিফাত এর বাড়ী ছাতকে। অতীতে সারা দেশের ন্যায় সুনামগঞ্জেও জঙ্গীরা সিরিজ বোমা ফাটিয়েছিলো। তাই জঙ্গী না থাকলেও মাঝে মাঝে জঙ্গী অপতৎপরতার ঘটনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায়না।

    সম্প্রতি ছাতকে দুই দল আলেম ওলামাদের মধ্যে প্রকাশ্য দাঙ্গা,বনগাও বিজিবি ক্যাম্পের নিকটে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জঙ্গী মনোভাবসম্পন্ন লোকদের হামলাসহ জাতির জনকের প্রতিকৃতি অবমাননা,শহরে জাকের পার্টির সভায় হামলা ও মসজিদের নামে জায়গা দখলসহ নানাবিধ ঘটনায় দুএকজন ধর্ম ব্যাবসায়ী মাঝে মাঝে শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় বলেও সভায় অবগত করা হয়।

    আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেন এর সহযোগী শের আলীকে কারা সুনামগঞ্জে এনেছিলো এবং আফগান ফেরত মুজাহিদ কারা,কারা এখনও সক্রিয় থেকে ধর্মানুভুতিকে ব্যাবহার করে গুজব রটিয়ে ভয়াবহ তান্ডবের মাধ্যমে সমাজে শান্তি বিনষ্ট করছে তাদের উপর তীক্ষè নজরদারী রাখার জন্য সভায় আহবাণ জানানো হয়।

    সাংবাদিক জাকির হোসেন ও মাহমুদুর রহমান তারেক ধর্মপাশার শানবাড়ী ঘাটে,জামালগঞ্জের দূর্লভপুরে ও সুনামগঞ্জ শহরতলীর ধোপাজান সুরমা নদীতে বালি পাথর ব্যবসায়ী শ্রমিকদেরকে আগ্নেয়াস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিভিন্ন নামে চাঁদা আদায়কারী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার দাবী জানান। শহরতলীর সুরমা নদীতে চাঁদাবাজদের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন কর্তৃক চাঁদা আদায়ের কথাও সভায় উত্থাপন করা হয়।

    সাংবাদিক মাহতাব উদ্দিন তালুকদার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের রক্তি ও বৌলাই নদীতে একই কায়দায় চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা তুলে ধরেন। সভায় শহরতলীর পশ্চিম ইব্রাহিমপুর গ্রামের একটি দোকান থেকে শহরের চান্দিঘাট এলাকা দিয়ে ভারতীয় মদ আমদানী ও ইব্রাহিমপুর গ্রামের কবরস্থানে মদ রেখে চোরাইভাবে বিক্রয়কারী মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করার দাবী জানানো হয়।

    সাংবাদিক আকরাম উদ্দিন ইব্রাহিমপুর গ্রামে রাতের বেলা বিভিন্ন দোকান ও স্পটে মাদক বিক্রির পাশাপাশি জুয়া ও ঘাপলা খেলার প্রতিযোগীতা বন্ধ ও গ্রামের সামনের সুরমা নদীতে চাঁদা আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহনপূর্বক ঐ গ্রামে আইনের শাসন প্রতিষ্টার দাবী করেন। সভায় আরো উল্লেখ করা হয় সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া নাতনী পরিচয়ে জনৈক মহিলা কন্সষ্টেবল নিয়োগ পেলেও পরবর্তীতে সহকারী পুলিশ সুপারের তদন্তে অবৈধ নিয়োগের সত্যতা পেয়ে ঐ মহিলা চাকুরীচ্যুত হয়।

    কিন্তু যারা উক্ত নিয়োগে জালিয়াতি ও ভূয়া সনদ সরবরাহ করে অপরাধ সংগঠন করেছে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশ থাকা স্বত্তেও দিরাই থানা ওসি এচক্রটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেননি। তিনি জেলা পুলিশ সুপারের অফিসিয়েল আদেশ কিভাবে লঙ্ঘণ করে যাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখারও দাবী জানানো হয়। পুলিশ যদি ভাল কাজ করে তাহলে তাদেরকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানানো হবে। কিন্তু পুলিশের অনেক ঝুকিপূর্ণ কাজ সহজে সেসব সাংবাদিকরা করে থাকেন তাদেরকে যেন পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয় এ দাবীও জানানো হয়।

    স্পেশ্যাল ব্রা  মালিবাগ থেকে সুনামগঞ্জে নবাগত পুলিশ সুপার মোঃ বরকতুল্লাহ খান আরো বলেন, সাংবাদিকরা একে অন্যের পরিপূরক সহায়তাকারী। সমাজে যে সমস্ত অনাচার অত্যাচার নির্যাতন হচ্ছে এইগুলো পুলিশ সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে মোকাবেলা করতে চায়। তিনি এই জেলা থেকে মাদককে র্নিমূলের পাশাপাশি দেশব্যাপী যে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের আতংঙ্ক আছে তাথেকে জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য বাসার মালিকদের বাসা ভাড়া প্রদানকালে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে তাদের ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর পরিচয়পত্রসহ জেনে শুনে তাদের বাসা ভাড়া প্রদান করা জরুরী পরামর্শ দেন।

    এ জেলায় কাউকে আইন অমান্য করে চলতে দেয়া হবে না এজন্য যদি কোন পুলিশ অফিসার কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত থাকে তাকে জানালে তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি কোন চাল ব্যবসায়ী যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের চাল বিক্রি নিয়ে সিন্ডিকেট করেন তাহলে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ঐ সমস্ত চাল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোটের মাধ্যম ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান। জেলার সার্বিক আইন শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাবাবিক রাখতে জেলার গণমাধ্যমকর্মীদের একান্ত সহযোগিতা চান তিনি।