সুনামগঞ্জে কয়লা পাচাঁর:সোর্স পরিচয়ধারীসহ গ্রেফতার-২

    0
    346

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০২ ফেব্রুয়ারি,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ   সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একাধিক মামলার জেলখাটা আসামীরা লাউড়গড়,চাঁনপুর,টেকেরঘাট,বালিয়াঘাট, চাঁরাগাঁও ও বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে পাচাঁর করছে কয়লা,চুনাপাথর,মদ,গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা,মোটর সাইকেল, গরু,ঘোড়া ও অস্ত্র। কয়লা চোরাচালান ও ডিপু থেকে চুরির অপরাধে বিজিবি অধিনায়কের (সিও) সোর্স পরিচয়ধারী হযরত আলী(৩৫) ও তার ছোট ভাই আলী আকবর(২৬) কে গ্রেফতার করে আজ ০১.০২.১৮ইং বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় মামলা নং-১ দায়ের করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। কিন্তু টেকেরঘাট সীমান্ত দিয়ে ১৮মে.টন ও লাউড়গড় সীমান্ত দিয়ে ১০মে.টন কয়লা পাচাঁর করাসহ বালিয়াঘাট সীমান্ত থেকে ১বস্তা মদ আটক করার পরও এব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিজিবি।

    এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানাযায়-উপজেলার বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের ১১৯৩নং সীমান্ত পিলার এলাকা দিয়ে গত ৩১.০১.১৮ইং বুধবার ভোরে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়কের সোর্স পরিচয় দিয়ে হযরত আলী,মঞ্জল মিয়া ও বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয় দিয়ে আলী হোসেন গং ভারত থেকে ২৫টন কয়লা ৮টি বারকি নৌকা দিয়ে পাচাঁর করার সময় বিজিবি ৩টি নৌকাসহ ৫মে.টন কয়লা আটক করে। আর বাকি ২০মে.টন চোরাই কয়লা নজরুল মিয়া ও লিটন মিয়ার ডিপুসহ আরো কয়েকটি ডিপুতে নিয়ে মজুত করে। সেখান থেকে হযরত আলী ও তার সহযোগীরা কয়লা চুরি করে।

    এঘটনার প্রেক্ষিতে সোর্স হযরত আলীকে ডেকে নিয়ে রাত ৮টায় সালিশের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিজিবি নৌকাসহ কয়লা আটকের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এছাড়া ১ফুট বল্ডার ও বুতো পাথর থেকে বিজিবি ক্যাম্পের ম্যাচ খরচের জন্য ৩টাকা করে ১ট্রলি (৩০-৩৫ফুট) পাথর থেকে ১০০টাকা করে চাঁদা নিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন শতশত মে.টন বল্ডার ও বুতো পাথর পাচাঁর করা হচ্ছে। এব্যাপারে বাগলী কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী কারক সমিতির ব্যবসায়ী শাজাহান খন্দকার বলেন,এক ব্যবসায়ীর ডিপু থেকে ৯৫বস্তা কয়লা চুরি করে করেছিল হয়রত আলী ও তার লোকজন। এজন্য তাকে সালিশের মাধ্যমে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এছাড়া হযরত আলী নিজেকে সিওর সোর্স পরিচয় দিয়ে প্রায় দেড় বছর যাবত অবৈধ কাজ করছে।
    অন্যদিকে ১.০২.১৮ইং বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় বালিয়াঘাট ক্যাম্পের হাবিলদার ফখরুল,আসাদ, নায়েক সাব্বির,ওলি,শহিদ ও টেকেরঘাট ক্যাম্পের হাবিলদার সিদ্দিক,নায়েক রমজান ও টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ইমামের নির্দেশে বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী একাধিক চোরাচালান ও চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী জিয়াউর রহমান জিয়া,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী,ইদ্রিস আলী ও কালাম মিয়া ১বস্তা কয়লা থেকে বালিয়াঘাট ক্যাম্পের নামে ৫০টাকা,টেকেরঘাট ক্যাম্পের নামে ৫০টাকা,তাহিরপুর থানার নামে ৩০টাকা,ডিবি পুলিশের নামে ২০টাকা,সাংবাদিকদের নামে আব্দুর রাজ্জাক ৫০টাকা চাঁদা নিয়ে লাকমা গ্রামের চোরাচালানী কামরুল মিয়া,রতন মহলদার,মানিক মহলদার, শরিফ মিয়া,তিতু মিয়া,মোক্তার মহলদার,বাবুল মিয়া গং কে দিয়ে ভারত থেকে ১৮মে.টন (২৭০বস্তা) কয়লা পাচাঁর করে অসিউর রহমানের ডিপুতে নিয়ে মজুত করেছে বলে এলাকাবাসী জানায়। এব্যাপারে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক শহিদ বলেন,ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা পাচাঁরের জন্য আমি কাউকে নির্দেশ দেইনি,এব্যাপারে আমি কিছু জানি না।

    অপরদিকে লাউড়গড় সীমান্তের ১২০৩নং পিলার সংলগ্ন যাদকাটা নদী দিয়ে ভারত থেকে বারেকটিলা গ্রামের নিজাম মিয়া ও নজির মিয়া ১০মে.টন (১৫০বস্তা) কয়লা পাচাঁর করে প্রথমে পানিতে ডুবিয়ে লুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার কেরামতের নির্দেশে হাবিলদার হুমায়ুন ও এফএস মাহফুজ ঘটনাস্থলে গিয়ে ১বস্তা কয়লা থেকে ১০০টাকা করে চাঁদা নিয়ে সব কয়লার বস্তা পাচাঁর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবং তাদের সোর্স সুমন মিয়া ও শহিদ মিয়ার মাধ্যমে নদী দিয়ে পাচাঁরকৃত ১বারকি নৌকা পাথর থেকে ৫০০টাকা,১ট্রলি পাথর থেকে ২০০টাকা,সেইভ মেশিন থেকে ১হাজার টাকা,১নৌকা বালির জন্য ১৫০০টাকা,১টি গরুর জন্য ২হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।

    এব্যাপারে লাউড়গড় বিজিবি ক্যাম্পের এফএস মাহফুজ বলেন,ক্যাম্প কমান্ডার কেরামত স্যার বাহিরে আছেন আমি এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে পরে আপনাকে জানাব। এছাড়া বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সোর্স পরিচয়ধারী লালঘাট গ্রামের চিহ্নিত চোরাচালানী ৭টি মামলার জেলখাটা আসামী কালাম মিয়ার পাচাঁরকৃত ১বস্তা ভর্তি মদ বিজিবি আটক করলেও এখনও পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসআই ইমাম তাকে সহযোগীতা করছে বলে এলাকাবাসী জানায়।

    এব্যাপারে টেকেরঘাট পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই ইমাম বলেন,ভারত থেকে কয়লা পাচাঁরের বিষয়ে আমি জানিনা আর বিজিবি সোর্স কালামকে আমি চিনি। টেকেরঘাট বিজিবির কোম্পানীর কমান্ডার রাশেদ খান বলেন,অফিসিয়ার কাজে আমি জরুরী ভিত্তিতে সুনামগঞ্জ চলে আসার কারণে কয়লা পাচাঁর ও অন্যান্য ব্যাপারে কোন খোঁজ নিতে পারিনি,এব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
    এব্যাপারে জানতে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক নাসির উদ্দিনের সরকারী মোবাইল নাম্বারে বারবার কল করার পরও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।