সুনামগঞ্জের হাওর পাড়ে নেই ঈদের আনন্দ,শুধুই বেঁচে থাকা

    0
    278

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৫জুন,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের হাওরা লে এবার নেই ঈদের উৎসাহ-উদ্দিপনা। ভরা বর্ষার মাঝেও হাওরে মানুষের দিন কাটছে দুঃখ আর দূর্দশার মধ্য দিয়ে। আসছে ইদুল ফিতরে নিজে ও সন্তানদের নতুন কাপড় কিনে দিতে না পারায় হতাশাল ভুগছে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগন। বর্ষার সময় হাওরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষ গুলো অসহায় হাওরে নেই মাছ,নেই অন্য কোন বিকল্প কাজ ব্যবস্থা,সবাই বেকার সময় পার করছে।

    জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকার দীপ সাদৃশ্য গ্রামে কাজের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষার এই ৬মাস বেকার থাকে হাওরবাসী। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সরকারের সু-নজর না থাকায় এই মানব সম্পদ এখন সমাজের ভোজা হচ্ছে দিন দিন। যার জন্যে এই অনুন্নত অবহেলিত হাওরবাসীর কণ্ঠে কেবলেই শুধু বাচাঁর আকুতি।

    এবার জেলার দিরাই,শাল্লা,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,জামালগঞ্জ,দোয়ারা বাজার,বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলার হাওর গুলোতে স্বরনকালের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষক পরিবার গুলো। এদিকে সরকারী ফেয়ার প্রাইজ,টিসিবির পন্য বন্ধ,ভিজিএফ কার্ডে অনিয়ম ও ওএমএস চাল সঠিক ভাবে পায় নি হাওরবাসী। এ অবস্থায় নিজের ও পরিবারের জন্য দু-মুটো খাবার জোগার করা দায় হয়ে পরেছে। বেশির ভাগ হাওরবাসী অর্ধহারে,অনাহারে,অভাব-অনটন কে সঙ্গী করে খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে জীবন পার করছে।

    জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখাযায়-অকালে এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ের যাওয়ায় জেলা ও উপজেলার বাজার সহ প্রতিটি বাজারেই চালের দোকান গুলোতে চাল নেই। অনেকেই কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বেশি নিয়ে বিক্রি করছে দোকানীরা। হাওর ডুবে যাওয়ার পর থেকে সরকারী সহযোগীতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সাদৃশ্য গ্রাম গুলোতে টাকার অভাবে অনেকেই বাজার-সদাই করতেও পারছে না। ফসলহারা মানুষ গুলোর এখন দিন কাটতে ভিজিএফ কার্ড ও খোলা বাজারে কম মূলে চালের আশায়। দূর-দূরান্ত থেকে চাল নিতে আসা মানুষজন সকাল থেকে সারাদিন লাইনে দাড়িয়ে ডিলারদের কাছ থেকে পাচ্ছে না।

    আরো জানাযায়,রমজান মাসে সেহেরী ও ইফতারীতে পানি ভাত আর রুটি,শাক পাতা আর যা পাচ্ছে তা দিয়ে কোন রখমে রোজা রাখছে। জীবন বাচাঁর একমাত্র হাতিয়ার জেলার ৯০শতাংশ বোরো ধান পানিতে তুলয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ কৃষক পরিবার গুলোর মাঝে এখনও বুকভরা দ্বীর্ঘশ্বাস,আতর্œনাধ আর আহাজারির রেশ কাটেনি। বোরো ধানের উপর নির্ভরশীল কৃষক পরিবার গুলোর চাষাবাদের গরু আর গোলা (ধান রাখার পাত্র) এখন শূন্য। এখন নেই ঘরে নগদ টাকা ও খাবার চাল। হাওর পাড়ে বসবাসকারী জনসাধরন বেশির ভাগেই হাওরের পানি ব্যবহার করছে। ফলে নানান পানি বাহিত রোগে আক্রন্ত হচ্ছে।

    সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,শফিুকুল ইসলাম,জমির উদ্দিন,সাজন মিয়া, করিম সহ জেলার বিভিন্ন হাওরপাড়ের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন জানান,কি কইমু ভাই এবার বোরো ধান হারিয়ে এক বারেই নিঃশ্ব হয়ে গেছি। এই বার পানি ভাত,শাক-পাতা রুটি যা জোগাড় করতা পারি তাই খাইয়া রোজা রাখছি। অন্য বছর টাকা ছিল রমাজান মাসে বাজার থেইকা ভালা জিনিস আনতাম পরিবার তৈয়ার কইরা দিত খাইতাম এইবার ত জান যায় ভাল খাইমু কই থ্যাইকা। হাতে টাকা নাই পোলা মাইয়ারে কি ভাবে নতুন কাপড় কিনা দিমু আর জীবন চালাইমু বুজতা পারতাছিনা। শুনি সরকার নাকি হাওর উন্নয়নের লাগি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা,মিল-কলখারকানা,বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করে।

    সুনামগঞ্জের হাওরা লের ব্যাপারে উদাসীন কেরে। আমরার অভাব অনটন লাইগাই আছে বোরো ধান চাষ ছাড়া অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা না থাকায়। আমরা হাওরপাড়ের মানুষগুলোর ৬মাস হাওরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করি কিন্তু হাওরে এখন মাছ নাই। সরকারী ভাবে মাছের পোনা হাওরে ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়া হয়েছে দায়সারা ভাবে। কিন্তু সরকার এই বিষয়ে কোন প্রদক্ষেপ নিতাছে না। পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক পিযুস পুরকাস্থ টিটু সহ জেলার সচেতন মহল মনে করেন-হাওর বেকার জনগোষ্টীকে সম্পদে পরিনত করার জন্য বোরো ধান চাষাবাদের পরির্বতিতে বিকল্প কাজের জন্য মিল-কলখারকানা স্থাপন,কুটির শিল্পের সাথে হাওরে বিশাল নারী গোষ্টীকে হস্ত শিল্পে পারদর্শী এবং আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষনের মাধ্যমে হাসঁ ও মুরগি লালন-পালনের সঙ্গে যুক্ত করা হলে ওই বেকার নারী সমাজ স্বাবলম্বী হওয়ার পাশা পাশি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে এবং বেকার থাকবে না অভাব থাকবে না।

    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল জানান-শিক্ষা,স্বাস্থ্য,যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনী ও যুগপযুগী পদক্ষেপের মাধ্যমে অবহেলিত সুনামগঞ্জ জেলার হাওরবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে হাওরবাসীরা তাদের জীবন মানের উন্নয়ন গঠাতে সক্ষম হবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বর্পূন ভূমিকা রাখবে। না হলে এই অসহায় হাওরবাসীর দুঃখের শেষ থাকবে না। গুরুত্ব সহকারে হাওরবাসীর দিকে সু-দৃষ্টি দিয়ে প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রদক্ষেপ নেবার দাবী জানাই।