সুনামগঞ্জে পানি বৃদ্ধি,আবারও বন্যা

    0
    219
    নিজস্ব প্রতিবেদক,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের সন্নিকটে অবস্থিত ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে রবিবার থেকে তৃতীয় দফায় সুনামগঞ্জের সুরমা,যাদুকাটা,চলতি নদীসহ সীমান্ত এলাকার সবকটি নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সুনামগঞ্জে আবারো সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।  শহরের ঘোলঘর পয়েন্ট দিয়ে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর দুই তীর উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। বন্যায় হাওরাঞ্চলের মানুষ এখন শঙ্কায়।
    সোমবার সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সুরমার পানি বিপৎসীমার ৭দশমিক ৮০ অতিক্রম করে বিপৎসীমার ৮দশমিক ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তা ছাড়া গড় ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৯০মিলিমিটার বৃষ্টিপাতও হয়েছে। এতেও আরো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
    এ কারনে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর,জামালগঞ্জ,বিশ্বম্ভরপুর,দিরাই,শাল্লা,ছাতক,জগন্নাথপুর,দোয়ারা বাজারসহ ১১টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে।
    জানা যায়,গত ১৫ জুন প্রথম দফা বন্য এবং গত ১০ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দেয়।সুনামগঞ্জ সদর,তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর,দক্ষিণ সুনামগঞ্জ,দিরাই,শাল্লা,ছাতক, ধর্মপাশা ও জামালগঞ্জের বেশিরভাগ ইউনিয়নের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
    ওই দুই দফা বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি জেলাবাসী। অনেক এলাকায় বন্যার পানি এখনো রয়েছে। তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
    গত দু’দফার বন্যায় এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথের (সওজ) প্রায় ৬০০ কিলোমিটার রাস্তাঘাট ভেঙে জেলার সাথে ১১টি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। প্রায় তিন হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
    আরও জানা যায়,তৃতীয় দফার আবারও বন্যায় হলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এক লাখ ৬৯ হাজার পরিবারকে এক কেজি করে চাল বিতরণ করেছে। দুর্গত এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাওয়ার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে শুকনো খাবার,গো-খাদ্যসহ শিশুদের জন্যও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে।
    পরিবেশবিদ ও সচেতন মহল বলছেন,ভারতের মেঘালয়,চেরাপুঞ্জি এলাকায় পাহাড়ি বন,গাছ নির্বিচারে ধংস করা হচ্ছে,তৈরী করা হচ্ছে সড়ক ও উন্নয়ন কাজ। ফলে সেখানে বৃষ্টি হলেই বাংলাদেশের ভাটির জনপদ সুনামগঞ্জে পাহাড়ী ঢল বিনাবাধায় সরাসরি চলে আসে। সেই সাথে প্রতি বছরের বন্যায় পলি জমে কমছে হাওরের নাব্যতা। উজানের পাহাড়ি বন বাঁচাতে না পারলে আগামীতে এই জেলার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তাই পাহাড়ী ঢলে থেকে বাচঁতে ও পরিবেশ রক্ষায় দু দেশে এখননি প্রয়োনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সবাই।
    সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান বলেন,আমাদের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছিল ২০ জুলাইয়ের পর ৩-৪ দিন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আবারো বন্যা হতে পারে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ও সুনামগঞ্জের ভারি বর্ষণে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো কয়েকদিন পানি বাড়বে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আবার বন্য দেখা দিতে পারে।
    সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন,তৃতীয় দফার বন্যার জন্যও প্রস্তুতি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র গুলো প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। আর প্রথম থেকেই আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে বন্যায় দুর্গত মানুষের পাশে আমিসহ আমাদের প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাগন সকাল থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের খোঁজ খবর নিয়ে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ নির্ধারণ করে সহায়তা করছেন।