সিলেটে পুলিশি হেফাজতে রায়হানের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত সময়ের দাবি

    0
    404

    সিলেট নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. আবদুল গফ্ফারের চেম্বারে সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন। সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। এক শিশু সন্তানের পিতা রায়হান। এক দেড় বছরের মধ্যে আমেরিকায় স্থায়ীভাবে চলে যাবার কথা ছিলো তার। রায়হানের আমেরিকা প্রবাসী বোন আবেদন করেছিলেন তার পক্ষে। রায়হানের সকল স্বপ্ন চোরাবালিতে মিলিয়ে গেল। তার মৃত্যুর রহস্য বের করা পুলিশের অবশ্য কর্তব্য। দেশবাসী জানতে চাই এর মূল কারণ।
    রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরের কোন এক সময়ে রায়হান পৃথিবীর মায়া ছিন্ন করে চলে গেছেন পরপারে। পরিবারের অভিযোগ ছিনতাইকারী বানিয়ে রায়হানকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে।

    অন্যদিকে রায়হানের মৃত্যুর পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ভিন্ন কথা। তারা বলেছে- ছিনতাইকালে নগরীর কাস্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। কোনটি সত্য এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ তোলার পর তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

    নগরীর ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও রায়হানের প্রতিবেশি মখলিছুর রহমান কামরান দৈনিক সিলেট পত্রিকার প্রতিবেদককে জানান, রায়হান তার এলাকার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। সে নিজেও অত্যন্ত ভদ্র স্বভাবের ছেলে। তিনি পুলিশের দাবীকে অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। পুলিশ বলছে সকাল ৭ টায় সে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে অথচ রায়হান বন্দবাজার পুলিশ ফাঁড়ি হতে পুলিশের নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছে ভোর ৪টার সময়।

    এসময় টাকা নিয়ে এসে তাকে বাঁচাবার জন্য তার পরিবারকে আবেদন জানায়। তিনি বলেন গণপিটুনীতে কেউ মারা গেলে তার শরীর, হাত এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন থাকে। রায়হানের সে রকম কোন চিহ্ন নেই। রায়হানের আঙ্গুলের নখ উঠানো এবং হাটুর নিচে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তিনি বলেন পুলিশ নিরপরাধ এই যুবককে হত্যা করে নাটক সাজিয়েছে।

    রায়হানের মা সালমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, কর্মস্থল চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফিরতে দেরি দেখে শনিবার রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও স্ত্রী। কিন্তু ফোন বন্ধ পান। ভোর ৪টার দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল দিয়ে রায়হান জানায় পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। এখন তার কাছে ৪ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিবে।

    এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ রোববার ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান।

    এসময় সাদা পোষাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। ৪ হাজার টাকা কেন নিয়ে এসেছেন। আপনি চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করবো না। ’

    এ কথা শুনার পর রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান এবং পরে সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে আবারও বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান।

    এসময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়না তদন্তের পর বিকেল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে।

    রায়হানের বাবা নেই এক ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে রায়হান সবার বড়। রায়হান ছিলেন বিবাহিত এবং এক শিশু সস্তানের জনক।