সিরিজের ২য় ওয়ানডেতে ৩৪ রানের দাপুটে জয় টাইগারদের

    0
    352

    আমার সিলেট টোয়েন্টি ফোর ডটকম,ক্রীড়া প্রতিবেদক,০৯ অক্টোবর:মিরপুরে যখন স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে পা রেখেছিলেন মাসরাফিরা,গ্যালারী ভরা দর্শকদের উচ্ছাসিত মন বারবারই অভিনন্দন জানাচ্ছিল টাইগারদের।সবার আশা ছিল একটি জয় অর্থাৎ সিরিজ বাঁচানো।তাইতো শেরে বাংলার দর্শকদের হাতে দেখা যায় নানান রকমের ফেস্টুনস ও ব্যানার।কোনটাতে লিখা ছিল”win or loss we are still with you Bangladesh “।কোনটাতে লিখা ছিল “I love you Bangladesh “।আবার কোনটাতে লিখা ছিল “দৌড়া বাঘ আইলে”।আশাবাদী দর্শকদের উচ্ছাসিত মনের আকাংক্ষা,জেতা ম্যাচ হারার গ্লানি সত্যিই মুছে দিল বাংলার দামাল ছেলেরা।
    মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডকে ৩৪ রানে দাপটের সাথে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনল বাংলার বাঘেরা।সেই সাথে বাঁচিয়ে রাখল দেশের মাটিতে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের রেকর্ডের আশা।আজও বাংলাদেশ দলপতির ভাগ্য সহায়ক হয়নি মিরপুরের টস।টসে হেরে ব্যাটিং এ নামে স্বাগতিকরা।শুরু থেকেই আক্রমনাত্নক বোলিং করতে থাকে ইংলিশ বোলাররা।ইংল্যান্ড বোলিং লাইন আপের সামনে প্রায় অসহায়ই ছিল টাইগার দুই ওপেনার।মাত্র ২৬ রানে পাওয়ারপ্লে স্পেলে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ।আগের দিনের সেঞ্চুরি পাওয়া ইমরুল কায়েছ আজ সাজঘরে ফিরেন ১৮ বলে ১১ রান করে।আর ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল আজও অনুজ্জ্বল ভাবেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।ছুঁতে পারেননি ২০ কোঠা।৩১ বলে ১৪ রান করে এই ড্যাশিং ওপেনার।

    আজও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি সাব্বির রহমান।২১ বলে ব্যক্তিগত মাত্র ৩ রান করে আউট হলে ৩৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা।দলের এই বিপর্যয়ে হাল ধরেন বাংলাদেশের মিডল অর্ডারের ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।তাকে সঙ্গ দেন মুশফিকুর রহিম।দুজন মিলে কিছুটা বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেন।কিন্তু বাজে ফর্মে থাকা মুশফিকুর ২১ রান করে বলের বলে মঈন আলীর হাতে তালুবন্ধী হন।বাংলাদেশের স্কোর তখন ৮৯ রান।আগের দিনের দুর্দান্ত ঝড়ো ইনিংস খেলুড়ে সাকিব আজ ৩ রান করে স্টোকস এর বলে উইকেট রক্ষক বার্টলারকে ক্যাচ দেন।১১৩ রানে সাকিবের আউটে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিক বাংলাদেশ।এসময় মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক দলের বিপর্যয় অনেকটাই কাটিয়ে উঠেন।বেশ দেখে শুনেই খেলে যাচ্ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।দলীয় ১৬১ রানে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৬ষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।৮৮ বলে ৭৫ রান করে  রাশিদের বলে এলবিডব্লিউর ফাদে পড়েন রিয়াদ।মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর ১৬৯ রানে মোসাদ্দেক এর উইকেট হারিয়ে আবারও বিপর্যয়ে পড়ে স্বাগতিকরা।২৯ রান করে রাশিদের বলে মঈন আলীকে ক্যাচ দেন তরুণ মোসাদ্দেক।ব্যাটিং এ তখন দীর্ঘদিন পর ম্যাচে সুযোগ পাওয়া নাসির হোসেন ও অধিনায়ক মাসরাফি মরতুজা।আজ ব্যাটিং এ দারুণ হিংস্র ভাবে দেখা যায় বাংলাদেশ দলপতি মাসরাফিকে।নিজের অসাধারণ ঝড়ো ব্যাটিং দাপটে দলকে প্রায় পুরোটাই বিপদমুক্ত করেন মাসরাফি।ব্যাটিং এ নামার পর থেকেই ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের একের পর এক বাউন্ডারি,ওভার বাউন্ডারি মেরে শাসন করতে থাকেন মাসরাফি।বাংলাদেশের পুরো ইনিংসের ৩ টি ছক্কাই আসে মাসরাফির ব্যাট থেকে।মাত্র ২৯ বলে ৪৪ রান করে ইনিংস শেষ হবার ১ বল আগে বার্টলারের হাতে রান আউট হন মাসরাফি।তার ৪৪ রানের ঝড়ো ইনিংসটি সাজানো ছিল ৩ টি ছয় ও ২ টি চার দিয়ে।এদিকে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন নাসির হোসেন।নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে ২৩৮ রানের পুঁজি করে বাংলাদেশ।ইংল্যান্ডের পক্ষে ওকস,বল ও রাশিদ দেন দুইটি করে উইকেট এবং ১ টি উইকেট নেন স্টোকস।

    জবাবে ২৩৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীদের ইনিংস।শুরু থেকেই ইংলিশদের চেয়ে দ্বিগুন আক্রমনাত্নক ভাবে বোলিং শুরু করে টাইগার বোলাররা।স্বাগতিকদের প্রথম উইকেট এনে দেন অধিনায়ক মাসরাফি মরতুজা।মাত্র ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংলিশরা।মাসরাফির বলে সৈকত এর ক্যাচে ব্যক্তিগত ৫ রান করে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার জেমস ভিনস।তারপরের ওভারেই বেন ডাকেটকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফিরান সাকিব অাল হাসান।তারপর আবারও সফরকারীদের মুঠি চেপে ধরেন বাংলাদেশ দলপতি ম্যাশ।দলীয় ২৪ রানে মাসরাফির এলবিডব্লিউর শিকার হন জেসন রয়।২১ বলে মাত্র ১৩ রান করে ইংল্যান্ডের এই ড্যাশিং ওপেনার।এক ওভার ব্যাবধানে আবারো আলো ছড়ান বাংলাদেশ অধিনায়ক।শুণ্য রানে বেন স্টোকস কে বোল্ড করে নিজের তৃতীয় উইকেট পান মাসরাফি।২৬ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড ৪ উইকেটে ৩১ রান নিয়ে ম্যান্ডাটরি পাওয়ারপ্লে স্পেল শেষ করে।ব্যাটিং এ তখন ব্রেইসটো ও অধিনায়ক জস বার্টলার।৩১ রানে ৪ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডে অনেকটাই বিপদমুক্ত করেন এই দুই ইংলিশ ব্যাটসম্যান। দুজনে মিলে ৭৯ রানের পার্টনারশিপ করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যান বার্টলার-ব্রেইসটো জুটি।ইনিংসের ২৪ তম ওভারে তাসকিন আহমেদ ইংলিশ এই জুটি ভেঙে ফেলেন।১০৫ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।ব্যক্তিগত ৩৫ রান করে তাসকিনের বলে উইকেট কিপার মুশফিকের ক্যাচে মাঠ ছাড়েন ব্রেইসটো।১২০ রানে আবারও উইকেট হারায় অতিথিরা।৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে বিশাল ব্যাটিং বিপর্যয় পড়ে ইংল্যান্ড।অতিথিদের সংগ্রহের পথে এবার বাধা দেন নাসির হোসেন।ব্যক্তিগত মাত্র ৪ রানে সাকিব আল হাসানের অসাধারণ এক ক্যাচে মঈন আলীকে বিদায় করেন নাসির।পরের ওভারেই ইংল্যান্ড দলপতি জস বার্টলারকে সাজঘরে ফিরান তাসকিন আহমেদ।অতিথিরা ১২০ রানে হারায় তাদের সপ্তম উইকেট।তাসকিন আহমেদের বলে ৫৭ রান করে এলবিডব্লিউর শিকার হন বার্টলার।প্রথমে আম্পায়ার নট আউট দিলে তার বিরুদ্ধে রিভিউ করে উইকেট পায় বাংলাদেশ।এরপর ক্রিস ওকস এর উইকেটও তুলে নিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট পান তাসকিন আহমেদ।ক্রিস ওকস ৭ রান করে মুশফিকুর রহিমের হাতে তালুবন্ধী হন।১২৩ রানে নিজেদের অষ্টম উইকেট হারায় ইংলিশরা।এরপর উইলি ও রাশিদ মিলে পুরো ওভার খেলে আসার চেষ্টা করেন।এই জুটি কিছুটা বিরক্তিকর ছিল টাইগারদের জন্য।উইলিকে এলবিডব্লিউ করে আউট করেন তরুণ অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক নৈকত।৩১ বলে মাত্র ৯ রান করে আউট হন উইলি।ইংল্যান্ড ১৫৯ রানে তাদের নবম উইকেট হারায়।অতিথিদের শেষ উইকেটটিও তুলে নেন বাংলাদেশ দলপতি মাসরাফি মরতুজা।২০৪ রানে থামে অতিথিদের ইনিংস।৩৪ রানের দাপুটে জয় পায় বাংলাদেশ।স্বাগতিকদের পক্ষে মাসরাফি পান ৪ টি উইকেট,তাসকিন নেন ৩ টি।সাকিব,নাসির এবং মোসাদ্দেক নেন ১ টি করে উইকেট।আগামি ১২ অক্টেবর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজ নির্ধরনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।
    সংক্ষিপ্ত স্কোর:
    বাংলাদেশ:
    সর্বমোট:২৩৮-৮উইকেট।(মাহমুদউল্লাহ ৭৫,মাসরাফি ৪৪,মোসাদ্দেক ২৯)।
    ওকস:৪০-২ উইকেট,বল:৪৪-২ উইকেট,রাশিদ:৫৩-২ উইকেট।
    ইংল্যান্ড:
    সর্বমোট:২০৪-১০ উইকেট।(বার্টলার ৫৭,ব্রেইসটো ৩৫,রাশিদ৩৩*)।
    মাসরাফি :২৯-৪ উইকেট,তাসকিন:৪৭-৩ উইকেট।
    ম্যচ সেরা:মাসরাফি মরতুজা।