সিন্ডিকেটের থাবায় নবীগঞ্জের কৃষকরা !

    0
    236

    নুরুজ্জামান ফারুকী নবীগঞ্জ থেকে: প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চল নবীগনজের অধিকাংশ লোকজনেরই জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায় বোরো ফসল। রোপা এবং বোনা আমন চাষ করলেও মূল উপার্জন হয়ে থাকে এই বোরো ফসল থেকেই।
    প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে ফসল গড়ে তুলটা কৃষকের কাছে নতুন কোনও বিষয় না। অকাল বন্যায় তলিয়ে গেলেও কৃষকরা হার মানেন না। পুনরায় ফলান সোনালী ফসল। কিন্তু এই হার যদি মানতে হয় মানবসৃষ্ট সমস্যার কাছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।
    যেমনটা ঘটে চলেছে বিগত কয়েক বছর যাবৎ। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রান্তিক কৃষকগণ। লোকসানের মুখে পড়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক কৃষক। চলতি বছর করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। এনিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
    নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেল কয়েক বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এবার বুক ভরা আশা নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন কৃষকরা। ধান কাটার শুরুতে আগাম বন্যার আশঙ্কা থাকলেও এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। দিনরাত পরিশ্রম করে গড়ে তুলা হচ্ছে সোনার ফসল। অথচ স্থানীয় কিছু মহাজনদের সিন্ডিকেটের কারণে ধানের দাম কমে গেছে।
    কৃষক মমিন ইসলাম   জানান, কনকনে শীতের মধ্যে পরিবারের সদস্য ও শ্রমিকদের নিয়ে ইরি/বোরো জমি চাষ করেছি বর্গা নিয়ে। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৭ হাজার টাকা। অন্যদিকে পরিবারের সদস্যদের শ্রমতো রয়েছেই। বিঘায় ফলন হয়েছে ২০ মন করে। বিক্রি করতে হচ্ছে মনপ্রতি ৫০০ টাকা। সবশেষে বিঘাপ্রতি পাওয়া যাচ্ছে ১০ হাজার টাকার ধান। যেটুকু লাভ হয়, সেটুকু দিয়ে দিতে হয় ধান কাটার শ্রমিক এবং আনুষাঙ্গিক খরচ বাবত। সবশেষে থাকে শুধু গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত খরটুকুই।
    উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২০ জন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা একই হিসেব দিয়েছেন। এদের অধিকাংশই নিজেদের পেশা বদল করার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।
    উপজেলার সফিক মিয়াওমদনপুর গ্রামের কৃষক খোরশেদ  মিয়া জানান, শুরু থেকেই আবহাওয়া অনকূলে থাকায় এবার ভাল ফলন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরুর পূর্বেই ঘরে উঠবে ধান। শুরুর দিকে মনটা ভাল থাকলেও বর্তমানে ধানের দাম কমে যাওয়ায় সারা বছর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কিভাবে চলবেন সেই চিন্তা করছেন তিনি। তিনি আরো জানান, শুরুর দিকে ধানের দাম ভাল থাকলেও এলাকার কিছু ব্যবসায়ী একাট্টা হয়ে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  জানান অত্র উপজেলায় আবাদি জমি ২০হাজার  হেক্টর। বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে ২০হাজার  হেক্টর জমিতে। বর্তমানে ৫২ শতাংশ জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। বর্তমান বৈরী আবহাওয়ার কারণে ৮০ শতাংশ ধান পাকার পরই কর্তনের জন্য কৃষকদের প্রতি আহব্বান জানান তিনি।