সারাদেশে সাংগঠনিক রেড এ্যালার্ট ঘোষণা খালেদার

    0
    232

    আমারসিলেট24ডটকম,০২মেঃ গুম-খুনও অপহরণের বিরুদ্ধে সারাদেশে সাংগঠনিক রেড এ্যালার্ট জারি করেছেন বিএনপিরচেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। গতকাল বিলাশ শ্রমিক সমাবেশে তিনি বলেন, গুম-খুন বা অপহরণ করতে যারাই আসুক তাদের ঘেরাও করবেন। নিরীহদের ছিনিয়েআনবেন দোষীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করবেন। সতর্ক এবং আন্দোলনেরপ্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সময়মত ডাকবো। আমি নিজেই রাস্তায়নামবো। গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলতে হবে। অবৈধ, খুনি, কৃতদাস সরকারকে বিদায় করেআমরাও দিবস পালন করবো। সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি আবারো বললেন, বিন্দুমাত্রদেশপ্রেম থাকলে নির্বাচন দিয়ে দেশটাকে বাঁচান। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দিউদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল এ সমাবেশের আয়োজন করে।বেলা ১১টা থেকেইঢাকাসহ আশপাশের জেলার নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে আসতে থাকে। বেলাবাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে লোকসমাগমও বাড়ে। বেলা ২টা ৫৪ মিনিটে পবিত্র কোরআনতেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাবেশ শুরু হয়।

    এর আগে জাসাসের শিল্পীরাজাতীয়, দলীয় ও গণসংগীত পরিবেশন করেন। দীর্ঘ ৪৮ মিনিটের বক্তব্যে খুন-গুম, অপহরণ, সন্ত্রাস, দখলবাজী, দ্রব্যমূল্য, শেয়ারবাজার, শ্রমিক-সাংবাদিকহত্যা, বিনিয়োগ, মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেইনঅবকমা-, সাংগঠনিক প্রস্তুতিসহ আগামীর আন্দোল কর্মসূচি নিয়ে বক্তব্য রাখেনবেগম খালেদা জিয়া। ঐতিহাসিক এই উদ্যানের লাখো শ্রমিক-জনতার সম-গম ঘটে।বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে মঞ্চে আসেন খালেদা জিয়া। উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে হাতনেড়ে মে দিবসের শুভেচ্ছা জানায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, পুলিশ-র‌্যাবদিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না। আওয়ামী লীগ হলো খুনি সরকার, রক্তপিপাসুসরকার। এদের হাতে কেউ নিরাপদ নয়। হিন্দু সম্প্রদায় আওয়ামী লীগের হাতেনির্যাতিত হয়েছে। যাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়, গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, তারাযতদিন ক্ষমতায় থাকবে দেশের ক্ষতি হতে থাকবে।খালেদা জিয়া বলেন, পশ্চিমারাবলেছে রক্তে রঞ্জিত পোশাক তারা কিনবে না। আওয়ামী লীগ থাকলে পোশাক রক্তেরঞ্জিত হবে। এরা থাকলে এটা প্রতিরোধ হবে না। শ্রমিকদের স্বার্থে ও পোশাকেরস্বার্থে এদের বিদায় করতে হবে।

    নেত্রী বলেন, দাঁড়ি টুপি আর নামাজপড়লে তাদের জঙ্গি বলা হচ্ছে। দাড়ি রাখলে টুপি পড়লে আর নামাজ পড়লে জঙ্গি হয়না এটা আমাদের ধর্মীয় নির্দেশ ও অধিকার। জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গ টেনে সমবেতদেরউদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আব্দুর রহমান কার দুলাভাই? হাত নেড়ে জনতাউত্তর দেয় মির্জা আযমের। ফের প্রশ্ন করে খালেদা জিয়া মির্জা আযম কি বিএনপিকরে? সমস্বরে উত্তর আসে ‘না’দেখা গেলো আওয়ামী যুবলীগই জঙ্গিদের সাথেসম্পৃক্ততা আছে। আওয়ামী লীগ, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ ও খুনি। বিএনপিচেয়ারপার্সন বলেন, আওয়ামী লীগের এমপিরা কোটিপতি হচ্ছে আর শ্রমিকরা না খেয়েজীবন কাটাচ্ছে। অনেক এমপিরা ঠিকমত ট্যাক্স দেয় না।নারায়ণগঞ্জের অপহরণেরসমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই, চৌধুরী আলম কোথায়, ইলিয়াস আলীকোথায়। ইলিয়াস আলীকে ফেরত চাই। খালেদা জিয়া বলেন, এখন দেশের নদীতে লাশ, বনে-জঙ্গলে লাশ। কেবল লাশ আর লাশ। এ সরকার ড্রাকুলার মতো রক্তপিপাসু।মানুষের রক্ত নিয়ে তারা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করছে।তিনি বলেন, প্রশাসন দলীয়করণকরা হচ্ছে। তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে না। আইনশৃঙ্খলার চেইন অবকমান্ড ভেঙে পড়েছে। তাদের সাথে আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনীও যোগ দিয়েছে।এরা লুটপাট, খুন, গুম দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এদের হাতে  দেশ মুক্তকরতে হবে।তিনি বলেন, বাংলাদেশ মোটেও স্বাধীন নয়। দেশ পরাধীনতার শৃঙ্খলেআবদ্ধ। আওয়ামী লীগ ক্রীতদাস মন্তব্য করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আপনারাঅন্যায় বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। এর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্রীতদাস কারণ সীমান্তে যখন ফেলানীর লাশ পড়ে, বাংলাদেশি ধরেনিয়ে যায় তখন এরা কোনো প্রতিবাদ করতে পারে না। অথচ আমাদের কোনো সভা-সমাবেশকরতে গেলে নানা শর্ত দেয়া হয়।

     তিনি আরও বলেন, দেশের স্বার্থে প্রয়োজন এদেরক্ষমতা থেকে সরানো। না হলে বিদেশিরা এদের জন্য বিনিয়োগ করবে না। দেশেরমানুষও বিনিয়োগ করে না। সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়াগুম ও খুনের প্রতি ইঙ্গিত করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা কিশুধু মায়ের চোখের পানি দেখবেন, নাকি প্রতিবাদ করবেন। আপনাদের গর্জে উঠতেহবে। দুদকের সমালোচনা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনশ জনের মধ্যে২২৬ এমপি কোটিপতি হয়েছেন। ৪২জন ট্যাক্স দেয়না । দুদক এদের দেখে না তারাঅন্ধ।বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আজকেগণতন্ত্র নিরাপদ নয়, মানবতা, মানুষের জীবনের নিরাপত্তাসহ সব আজ বিপন্ন। এঅবস্থা   থেকে পরিত্রাণ পেতে এ সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য দরকার। এরমাধ্যমে অতি দ্রুত একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন দিতে সরকারকেবাধ্য করতে হবে। তিনি বলেন, মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইট ওয়াচ বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্রসফায়ারে পড়েছে। আজকে শুধু মানুষ নয়, বাংলাদেশরগণতন্ত্রকে ক্রসফায়ারে ফেলেছে। এর দায় বর্তমান ‘অবৈধ’ সরকারকেই নিতেহবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আইনশৃঙ্খলাপরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকারের আশীর্বাদ পুষ্টরাই হত্যা, গুমেরমতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা জবাবদিহিতা নেই। এঅবস্থা থেকে উত্তরণে দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনেরউদ্যোগ নিতে হবে।

    নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটেরমাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করতে হবে।জিয়াউর রহমানকে দেশে শ্রেষ্ঠশ্রমিক দাবি করে দলের স্থায়ী সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে যারা ক্ষমতাকেকুক্ষিগত করতে চায় তারাই হত্যা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছিলো। বেগম খালেদাজিয়ার নেতৃত্ব ছাড়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে না। এজন্য নেতাকর্মীদেরনতুন করে সুসংগঠিত হওয়া দরকার।’দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানবলেন, গণতন্ত্র ছাড়া শ্রমিক আন্দোলন কখনো সফল হয়নি। তাই একটি গণতান্ত্রিকসরকার ব্যবস্থা কায়েম এখন সময়ের দাবি। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহআল নোমান বলেন, ‘বর্তমানে এখন সবজায়গায়ই চরম আতঙ্ক। ঘর থেকে বাইরে বের হতেপারে না। রাতে ঘরে থাকাও নিরাপদ মনে করছে না দেশের মানুষ।ভাইস চেয়ারম্যানসাদেক হোসেন খোকা বলেন, হত্যা, গুম এই সরকারের ম্যানিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। একরপর এক হত্যা, গুম চলছে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গালে হাত দিয়ে বসে আছে, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চুপ করে থাকে । কার কাছে আহাজারি করব। আমাদেরপ্রস্তুতি নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে পাড়ায় মহল্লায় সংগঠন গড়ে তুলে সাধারণমানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। লড়াইয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায়করতে হবে।

    বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান বলেন, ক্ষমতাসীনরা দেশকেতাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। হাসিনা গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। তার হাতরক্তে রঞ্জিত হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত হাতে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।অতীতের যা হওয়ার হয়েছে, এবার নতুন করে আন্দোলনে নামতে হবে।সমাবেশে আরোবক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মিজানুররহমান মিনু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, য্বুব বিষয়ক সম্পাদকমোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, শ্রমিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফরুল হাসান প্রমুখ।সুত্রঃইনকিলাব