ঢাকা, ২৭ এপ্রিল: সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজার ধ্বংস্ত্মূপের নিচ থেকে দুর্ঘঘটনার ৭০ ঘন্টার পর জীবিতদের উদ্ধার করা হচ্ছে। শনিবার সকালেও ১৫ জীবিতকে উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকাল ০৮টা পর্যস্ত্ম ৩৩২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১৫টি লাশ স্বজনের কাছে হস্ত্মাস্ত্মর করা হয়েছে। অন্য লাশগুলো হস্ত্মাস্ত্মরের অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া প্রায় ২হাজার ৫শ’ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। হস্ত্মাস্ত্মরের অপেক্ষায় থাকা লাশগুলো সাভার অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার ৩য় দিন শুক্রবার ২০জনের লাশ ও ৭২জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে আইএসপিআরের পরিচালক শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এর আগে লাশ হস্ত্মাস্ত্মর গণনার কাজে নিয়োজিত সাভার থানার সিনিয়র এএসপি মো. মশিউল্লাহ রেজা বলেন, উদ্ধারকৃত লাশ থেকে বেশি দুর্গন্ধ বের হচ্ছে, সে রকম ২৬টি লাশ আঞ্জুমান মুফিদুলে পাঠানো হয়েছে। তবে অপেক্ষমান স্বজনের চেয়ে লাশের সংখ্যা অপ্রতুল।
তিনি জানান, অনেক স্বজন তাদের হারানো স্বজন ফিরে পেতে স্বপ্রণোদিতভাবে অধর চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় ও এনাম মেডিকেল কলেজের দেওয়ালে নাম-ঠিকানা লিখে টানিয়ে রেখেছেন। স্বজনের আহাজারিতে শোকাহত সবাই। অনেক স্বজন স্বজনের সন্ধান না পেয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।
এদিকে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী জানান, শুক্রবার পর্যস্ত্ম জীবতদের উদ্ধারে অভিযান চলবে। তার পর জীবিত আর কারো আটকে থাকার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই শুক্রবারের পর থেকে কেবল লাশ উদ্ধার অভিযান চলবে।
এ পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, আপনজনের মরদেহ নিতে অপেক্ষায় আছেন উৎকণ্ঠিত স্বজনরা। পরিচয় শনাক্ত করার পর স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্ত্মাস্ত্মর করা হচ্ছে।
এখনও ধসে যাওয়া ভবনের নিচে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়ে আছেন। তাদের উদ্ধারে তৎপর রয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার,র্ যাব, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।
এর আগে দুর্ঘটনার দ্বিতীয় দিন সকাল ১০টার দিকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীপ্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। ঘটনাস্থলে আসেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, স্থানীয় সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদ।
বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও সাভারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। শুক্রবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল পৌনে ৯টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা পস্নাজা নামে বহুতল ভবনটি ধসে পড়ে।
আহতদের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ আশপাশের অন্য হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতাল, সিএমএইচ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সোহেল রানার মালিকানার এই ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ইলেকট্রনিঙ্, কম্পিউটার, প্রসাধন সামগ্রী ও পোশাকের দোকান ছিল। ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে ওপর পর্যস্ত্ম কয়েকটি গার্মেন্ট কারখানা ছিল। এগুলো হলো-নিউ ওয়েভ বটমস লিমিটেড, নিউ ওয়েভ স্টাইল, নিউ ওয়েভ অ্যাপারেলস, ফ্যান্টম অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যান্টম ট্যাক লিমিটেড ও ইথার টেঙ্টাইল লিমিটেড।
ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমতি নিয়ে নয় তলা ভবন তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।দুর্ঘটনার পর হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান সাভারে। সাভারে ঢাকা-আরিচা মহ্াসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে সাভারের আশুলিয়ায় তাজরিন ফ্যাশন্সে অগ্নিকা-ে শতাধিক পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানি হয়।