সাংসদ ইনুর প্রতিউত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বললেন

    0
    256

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাউল গানের কোনো দোষ নাই। কিন্তু বাউল গানে যারা গান করে বা ব্যক্তিবিশেষ যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে, আইন তার ব্যবস্থা নেবে। বাউল গান গাচ্ছেন বলেই তারা একেবারে সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে; আর কোনো অপরাধই তারা করেন না বা করেননি, এটি তো ঠিক না।’ বিশ্বজুড়ে বাউল গানকে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি এর সুনাম যেন নষ্ট না হয়।
    বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার দলীয় জোটের শরিক সদস্য হাসানুল হক ইনুর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদকে এ সব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
    সম্পূরক প্রশ্নকর্তা ইনু বলেন, সম্প্রতি শরিয়ত বাউলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে আইসিটি আইনে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা সাম্প্রতিককালে দেখছি; বাউলদের চুল কেটে দেওয়া হচ্ছে, গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, ৭৫’এ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকরা এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যে বাংলাদেশে জবর-দখলের রাজনীতি করেছিল তারা এ দেশের বাউল-যাত্রাগান, পালা গান, এবং গান বাজনার সংস্কৃতি চর্চার ওপরে একটা আক্রমণ পরিচালনা করেছিল। তার রেশ এখনো চলছে। এ ব্যাপারে বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জন্যে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
    প্রধানমন্ত্রী উত্তরে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি উনি (ইনু) কী বলতে চাচ্ছেন। এখানে একটি কথা বলি আমি। আমরা বাউল গানকে বিশ্ব ঐহিহ্য করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং অর্জন করেছি। ‘মাননীয় স্পিকার, আপনার মাধ্যমে আমি সংসদ সদস্যের কাছে জানতে চাই যে, বাউল গানের তো কোনো দোষ নাই। কিন্তু বাউল গানে যারা গান করে বা ব্যক্তিবিশেষ সে যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হয় তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে, আইন ব্যবস্থা নেবে।’
    ‘এটির সঙ্গে তো গানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর মাননীয় সংসদ সদস্য কী এ গ্যারান্টি দিতে পারবেন, যারা বাউল গাচ্ছেন, আর বাউল গান গাচ্ছেন বলেই তারা একেবারে সবাই অপরাধের ঊর্ধ্বে; আর কোনো অপরাধই তারা করেন না বা করেননি! এটি তো ঠিক না।’
    ‘….যেহেতু তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত বা অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই আমি বলব, এরা এমন কোনো কাজ যেন না করে। আজকে যে বাউল গান বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছ সেটি যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার এবং তাদেরকেও সচেতন করা দরকার।’
    ১৯৭৫’র জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে। একের পর ক্যু হয়েছে। মিলিটারি ডিটেকটররা যখনই ক্ষমতায় আসে, প্রথমেই ক্ষমতায় এসেই তারা ঘোষণা দেয় রেডিও বা টেলিভিশনে আজকে থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম। হলাম বলেই তাদের কাজ হচ্ছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, সুইপারের কাজটাই তারা আগে শুরু করে।
    ‘এটি আমরা সবসময় দেখেছি। আমার জীবদ্দশায় আমি আইয়ুব খানের আমল দেখেছি, ইয়াহিয়ার আমল, জিয়াউর রহমানের আমল বা জেনারেল এরশাদের আমল; চার চারটা মিলিটারি ডিটেকটর। তারা রাস্তার পাশে কচুটুচু যা থাকে, কেটেকুটে সাফ করে দেয়ালগুলি মুছে সব পরিষ্কার করা, আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে সাশ্রয় করছি, পরে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে দামি গাড়ি নিয়ে চলে আসছে। কেউ বলছেন, কৃচ্ছুটিসাধন করছি। এরপর টি-শার্ট পড়ে নেমে গেল। তারপর দেখা গেল প্যারিসের থেকে স্যুট আসে, ফ্রেঞ্চ শিফন শাড়ি আসে। তখনকার যুগের সব থেকে দামি এবং সময়োপযোগী ব্র্যান্ড সানগ্লাস ( রেবন্ড) পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এরকম বহু নাটক মিলিটারি ডিটেকটররা করে থাকে।’
    কাজেই এ চুলকাটা শুধু না, চুলকাটা ছাড়াও তারা আরও অনেক কাজ-ই করেছে। কাজেই এরকম বহু কিছু তো আমাদের জীবদ্দশায় আমরা দেখেছি। কাজেই এটি যখনই যারা এইভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসবে, ক্ষমতায় এসে মনে করেন যে, এগুলো করে বোধ হয় ক্ষমতার ভিতটা একটু পোক্ত করা যেতে পারে বা নিজেদেরকে মানুষের কাছে একটু গ্রহণযোগ্য করা যেতে পারে। তবে তাদের এই উদ্যোগ বেশিদিন ঠিকে না, মাছ ছয়েক থাকে। তারপরেই তাদের চেহারা পাল্টে যায়।
    এখনও যদি কেউ কিছু করে থাকে, এই ধরনের অপরাধ যদি কেউ করে। আমরা সেটা দেখব, কারা করছে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কারণ অহেতুক কারও চুল কাটা বা গানে প্রতিবন্ধকতা করা এটি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন,
    কুষ্টিয়ায় বাউল সম্প্রদায়ের থাকার জায়গায়টাকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই উন্নত করা হয়েছে জানিয়ে সংসদ নেতা আরও বলেন, “এটি কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারেই করেছে। সেখানে বাধা পেয়েছি আমরা। প্রথমবার যখন আমরা করতে গেলাম, তখন অনেকেই বাধা দিল। ওই ঝুঁপড়ি-টুপড়ি করে, কাঁদা-মাটি ওভাবেই থাকবে। তখন আমাদের মন্ত্রী ছিলেন ওবায়দুল কাদের। সংস্কৃতি বিষয়টা তার হাতেই ছিল। এদেরকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তারপরে তাদেরকে খুব সুন্দরভাবে একটা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। বাউল গানের এই ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য। যে কারণে সেই উদ্যোগের ফলেই তো আজকে আমরা এ ঐতিহ্য পেয়েছি।”