সাংবাদিক বাউল আল-হেলালের গানে মুগ্ধ প্রধান তথ্য কমিশনার

0
192

আমার সিলেট ডেস্কঃ বাউল শিল্পী ও বাউল গানের প্রশংসা করলেন সুনামগঞ্জের কৃতি সন্তান ও প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ। যিনি ইতিপূর্বে সচিবসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে অধিষ্ঠিত রয়েছেন তথ্য কমিশন বাংলাশে এর প্রধান তথ্য কমিশনার পদে। তথ্য অধিকার আইনের বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন সারা দেশ। বলেছেন,অন্ন বস্ত্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসাসহ সকল মৌলিক অধিকার আদায়ের প্রধান ও পূর্ব শর্তই হচ্ছে তথ্য অধিকার আইন। এ আইনের অবাধ প্রবাহের ফলে প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা,জবাবদিহীতা,গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মজবুত ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত হবে।
রোববার (১৩ নভেম্বর ২০২২ইং) দুপুরে সুনামগঞ্জের শহীদ আবুল হোসেন মিলনায়তনে তথ্য কমিশন বাংলাদেশ ও জেলা প্রশাসন সুনামগঞ্জ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বিষয়ক জন অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা দেন তিনি। সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শেখ মহি উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোঃ আবু সাইদ, কমিশনের সহকারী প্রোগ্রামার মো.সালাহ উদ্দিন,টিআইবির সভাপতি নুরুর রব চৌধুরী,সরকারী কলেজের অধ্যাপক জমশেদ আলী,সুনামগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি আল-হেলাল, শিক্ষক মোঃ আব্দুছ সাত্তার ও শিক্ষিকা নাসরিন আক্তার খানমসহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আইসিটি শাখার সহকারী কমিশনার আর্নিকা আক্তারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম,জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল,তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মো: আব্দুস ছাত্তার, জেলা শিক্ষা অফিসার মো.জাহাঙ্গীর আলম,জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র বর্মন ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এস.এম আব্দুর রহমানসহ বিভিন্ন দাপ্তরিক কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় প্রত্যেক অংশগ্রহনকারীদের হাতে তথ্য কমিশন বাংলাদেশ প্রণীত তথ্য অধিকার আইনের আওতায় আবেদনকারীগনের জন্য ৩২ পৃষ্ঠার নির্দেশিকা প্রদান করা হয়। সভাপতির বক্তৃতায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শেখ মহি উদ্দিন বলেন,তথ্য অধিকার আইনে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এ পর্যন্ত ৮২৩টি আবেদন পেয়েছে। এর মধ্যে ৮২১টি আবেদন জেলা প্রশাসন তথ্য প্রদানসহ নিস্পত্তি করেছে।
কোন প্রকার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ ছাড়াই জেলা তথ্য অফিসারের তাৎক্ষনিক মোবাইল ফোনে সভাস্থলে উপস্থিত হন আল-হেলাল। বসার আসন বলতে সামনে যা ছিল সবগুলো চেয়ার পরিপূর্ণ হওয়ায় একেবারেই পেছনের সারিতে একটি চেয়ারে বসেন। নির্ধারিত আলোচকরা সভায় বক্তৃতা দিচ্ছেন।
অন্যদিকে আল-হেলাল একদিকে বক্তৃতা নোট করছেন অন্যদিকে লিখে যাচ্ছেন গান। কিন্তু কোন সুরে গানটি লিখবেন তিনি। হঠাৎ তার মাথায় আসে নতুন কোন সুর ছাড়াই বাউল কামাল পাশার বিখ্যাত গানের একটি সুর। যে সুরের কোন বিকল্প নেই। সুনামগঞ্জের বাউল শিল্পী মরহুম বাউল কামাল পাশা রচিত“কাঙ্কের কলসী জলে গেলরে ভাসি/মাঝিরে তোর নৌকার ঢেউ লাগিয়া” ঐ গানটির সুরেই তথ্য অধিকার আইন নিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে লিখে ফেললেন ৪ অন্তরার পুরো গানটি। নোট করার জন্য হাতে বাড়তি কোন কাগজ তার কাছে না থাকলেও তথ্য কমিশন প্রদত্ত ছোট নির্দেশিকা বইটির ৩৩ নং সাদা পৃষ্ঠায় লিখে নিলেন গানটি। কিন্তু গানটি যে তিনি নিজে গাইবেন তা কল্পনাও করেননি। হঠাৎ সভামঞ্চ থেকে ঘোষণা আসলো প্রধান তথ্য কমিশনারের বক্তব্যের আগে কারো কোন প্রশ্ন থাকলে তা উপস্থাপনের জন্য। এর মধ্যে দুএকজন প্রশ্ন করলেন। পীন পতন নীরবতার এক পর্যায়ে দাড়িয়ে আল-হেলাল বললেন,আমি প্রশ্ন করবো একটি তাও ছোট্ট। কিন্তু আমার কিছু অবজারভেশন আছে তা প্রধান তথ্য কমিশনার মহোদয়কে না বললেই নয়। আর তা হচ্ছে তথ্য যে পাওয়া যাচ্ছেনা তা ঠিক নহে। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। কিন্তু কয়েকটি সরকারী দপ্তরের বড় কর্তারা আছেন যারা তথ্য দিতে গড়িমশি করেন এবং আইনের ফাকফোকরে তথ্য প্রদানের বিষয়টি এড়িয়ে চলেন ও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন বিষয়টি। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তথ্য কর্মশালার আয়োজন করার উপর গুরুত্বারোপ করেন আল-হেলাল। এমনকি নিয়ম মোতাবেক আবেদন করে প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করেছেন মর্মেও তিনি অবগত করেন। তিনি প্রধান তথ্য কমিশনারের সততা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে স্বগর্বে স্বমহিমায় পরিবেশন করেন তার রচিত গানটি। সাংবাদিক বাউল শিল্পী আল-হেলালের রচিত গানটি হচ্ছে মাত্র ১৮টি বাক্যের।

“তথ্য অধিকার,দাবী সকল জনতার
সুশাসন আসিবে বাংলাদেশে রে।।

স্বচ্ছতা জবাবদিহীতায় অংশগ্রহন
নিশ্চিত করবে গনতন্ত্র আরো উন্নয়ন।
ধন্য শেখ হাসিনা,আমরা তোমায় ভূলবোনা
সুনীতি চাই দলমত নির্বিশেষেরে।।

স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর শোসনমুক্ত দেশ
এখনও দুর্নীতি চলছে,সুদ ঘুষে বেশ।
হঠাও বৈষম্য,জাতির একান্ত কাম্য
সমান সুযোগ চাই সবে মিলেমিশেরে।।

তথ্য চাই দিতে হবে,এক দফা দাবী
নইলে আপীল,আর অভিযোগ বল কোথায় যাবি
শেষে কঠিন শাস্তি,মন তুই পাবিরে পাবি
বাঁচবেনা তুই,থাকলেও চরন পাশেরে।।

দেশজুড়ে করছেন প্রচার,মরতুজা আহমদ স্যার
তথ্য অফিস করছে মাইকিং জানায় বারেবার।
এই আইনের সুফল,বাড়বে সবার মনোবল
আল-হেলালের এই নিবেদন সবার কাছেরে।।

৪টি অন্তরায় গানটি লিখলেও তিনি পুরো গানটি গাইতে পারেননি। কারন অনুষ্ঠানের অতিথি ও অংশগ্রহনকারীরা দুপুরের লাঞ্চের সময় কতটুকু ধৈর্য্যধারন করবেন এই উপলব্ধি থেকে তিনি তার বক্তব্য ও পরিবেশিত গানটি সংক্ষিপ্ত করেন। কিন্তু গানটির একটি অন্তরা শুনেই মুগ্ধ হয়ে যান প্রধান তথ্য কমিশনারসহ মঞ্চের বক্তা ও সমবেত সুধীমন্ডলী। প্রধান তথ্য কমিশনার তার মূল্যবান বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে এসে আবেগাপ্লুত হয়েই ধন্যবাদ দেন আল-হেলালকে একেবারে নাম ধরে। সবাই আনন্দিত ও মুগ্ধ হন তাতে। সভা শেষে কেউ বলেন দেখছি আপনি যখন গানটি লিখেন,কেউ বলেন খুব ভালো গাইছেন। কেউবা বলেন গানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুনকীর্তনসহ সবকিছুই নিয়ে এসেছেন। শেষে জেলা তথ্য অফিসার পুরো গানটি শুনেন। জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছেও প্রশংসিত হয় গানের লিরিক। এখানেই শেষ নয় পুরো গানটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু,দুর্নীতির পরিবর্তে সুনীতি ও সুশাসনসহ সকল হক কথাই তিনি তুলে ধরেছেন তার গানে।