দেশের স্বাধিনতার যুদ্ধ নিয়ে সমালোচিত জামায়াতে ইসলামী নিয়ে প্রশ্ন করায় রেগে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘বিরুপ’ আচরণের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেন ইবির ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ও দৈনিক বাংলাদেশ সময় এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সকালে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। সেখানে জামায়াত ইসলামীর বিষয়ে ড. কামালকে তার অবস্থানের বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। প্রথমে সাধারণভাবে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
পরক্ষণে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল, কিন্তু কিভাবে তারা নির্বাচন করবে এমন প্রশ্ন করা হলে রেগে যান ড. কামাল। এ সময় ‘চুপ করো, খামোশ’ বলে সাংবাদিকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তিনি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দৈনিক বাংলাদেশ সময় পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. মোস্তাফিজুর রহমান (মিঠুন মোস্তাফিজ) কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় উপস্থিত হয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর নিজ স্বাক্ষরিত অভিযোগে মিঠুন মোস্তাফিজ লেখেন- বিনীত নিবেদন এই যে, আমি নিম্নস্বাক্ষরধারী আপনার থানায় উপস্থিত হয়ে ড. কামাল হোসেন (৮১), পিতা- অজ্ঞাত, ৭ বেইলি রোড, রমনা, ঢাকা ও আহবায়ক জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা বাংলাদেশ এর বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করছি যে, অদ্য ১৪ ডিসেম্বর/২০১৮ খ্রি. সকাল অনুমান ১০ ঘটিকায় মহান বুদ্ধিজীবী দিবসে দারুস সালাম, ঢাকা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সকলের ন্যায় তিনিও শ্রদ্ধা জানাতে যান। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের জনগণ।
উক্ত স্থানে শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পন করার পরে সাংবাদিকরা ইং ১৪/১২/২০১৮ তারিখ সকাল অনুমান ১০ টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদীর সামনে আসামি ড. কামাল হোসেনকে ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক আছে কিনা? এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে এবং আগামী নির্বাচনে জামায়াতের প্রম্নে ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান জানতে চাইলে তিনি ডিজিটাল ডিভাইসে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারকারী আমার সহকর্মী সাংবাদিকদেরকে ভৎর্সনা করেন এবং অসম্মানের সাথে উল্টো জিজ্ঞাস করেন ‘কত টাকা পেয়েছে?’‘কাদের টাকায় এসব বেহুদা প্রশ্ন করছো?’‘ তোমাদের নাম কী? তেখে নেবো।’‘কোন টিভি/ পত্রিকায় কাজ কর’‘চিনে রাখব’- এই মর্মে হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। যা বাংলাদেশের কোটি কোটি দর্শক দেখেছেন এবং তার এই বক্তব্যে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের গৌরবোজ্জ্বল ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবার পাশাপাশি অবর্ণনীয় অসম্মানীত হয়েছে।
একইসাথে গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে গভীর ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের এ ধরণের হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশে সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি এবং ভয়াবহ হুমকিও বটে। যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এবং বাংলাদেশ পেনাল কোড আইনের আলোকে ফৌজদারী অপরাধ।
অতঃএব; উপরোল্লিখিত আসামীর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনের আলোকে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতঃ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে আপনার একান্ত মর্জি হয়।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: রতন শেখ জানিয়েছেন, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগটি নিয়ে একটি জিডি করে ডিএমপি অর্ন্তভুক্ত দারুস সালাম থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম তারা পরিচলনা করবেন।