সাংবাদিকদের বেকার থাকতে হবে নাঃখালেদা জিয়া

    0
    223

    আমারসিলেট24ডটকম,২৯মার্চঃ বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “কোটি টাকা দিয়ে লোক এনে জাতীয় সংগীত গাইলে হবে না, জনগণের গণঅভুত্থানের মাধ্যমে আপনাদের বিদায় হবে এবং তা গিনেজ বুকে উঠবে।”

    ‘সময়-কাল নির্ধারণ করে আন্দোলন হবে না’ এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “উপজেলা নির্বাচন শেষ হলে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা আন্দোলনে আছি, আন্দোলন চলবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই গণবিরোধী ও গণধিকৃত সরকারের পতন হবে।”

    আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

    অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে’র সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ।

    খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার অন্যায়ভাবে জোর করে ক্ষমতায় আছে। এরা অবৈধ। আর সে কারণেই তাদের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ববোধ নেই। তাই এই সরকারকে যত দ্রুত বিদায় করা যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

    সম্মান ও চামড়া বাঁচাতে রওশনকে পদত্যাগের আহ্বান

    গত ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনে সরকার ক্ষমতায় এসেছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, “বিএনপি ব্যর্থ হয়নি। আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষ নির্বাচনে ভোট দিতে যায়নি। আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে পরাজিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও তা প্রমাণ হয়েছে।”

    ‘চাপে পড়ে নির্বাচনে গিয়েছি’ বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে খালেদা বলেন, “চাপ তো আমাদের ওপরও ছিল। কিন্তু আমরা জনগণের কথা চিন্তা করেছি। তার মানে আপনারা এমন কোনো অপকর্ম করেছেন, যে কারণে চাপ উপেক্ষা করা আপনাদের কাছে সম্ভব ছিল না।”

    রওশন এরশাদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “ভবিষ্যতেও এ ধরনের চাপের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং সম্মান ও চামড়া বাঁচাতে চাইলে অবিলম্বে সংসদ থেকে পদত্যাগ করুন।”

    আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নয় দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, “মুখে মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধ করেনি। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর আওয়ামী লীগ শরনার্থী বা সীমান্তপাড়ি দেয়া। এটাই হলো পার্থক্য।

    ‘আওয়ামী লীগ শুধু রাজাকার দেখে’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা বলেন, “নিজের দলে যারা রাজাকার আছে তাদের দেখেন। আগে যাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (মখা আলমগীর) করেছিলেন তার তো সেখানে থাকার কথা ছিল না। সে তো রাজাকার ছিল। এখন যাকে উপদেষ্টা বানিয়েছেন সেও তো যুদ্ধের সময় পাকিস্তান থেকে ছুটি নিয়ে বাংলাদেশে এসে পরে আবার পাকিস্তান ফিরে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার কি ভুমিকা ছিল।”

    গলার জোর বেশি দিন থাকবে না- এমন মন্তব্য করে তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, “খুন, গুম ও জোর-জবরদস্তি বন্ধ করুন। অন্যথায় জনগণ একদিন স্তব্ধ করে দেবে। আল্লাহও এটা পছন্দ করেন না।”

    “সরকার দেশে উন্নয়ন হয়েছে দাবি করলেও মূলত আওয়ামী লীগের লোকজনের উন্নতি হয়েছে। তারা পদ্মা সেতু, হলমার্ক ও বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি লুটপাট করে নিজেদের পকেটে ভরেছে।” বলেন খালেদা।

    দেশে যতবার গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে তা আওয়ামী লীগ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এরশাদ, মঈন-ফখরুদ্দিন এরআগে মোশতাক এসে গণতন্ত্র হত্যা করেছে তাও আওয়ামী লীগের কারণে। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির নির্বাচন তাদের ষড়যন্ত্রের কারণে হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ জানে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তাদের ভরাডুবি হবে।”

    খালেদা সরকারের উদ্দেশে বলেন, “দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আলোচনার মাধ্যমে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আমরাও বলছি বিদেশীরা এ কথা বলছে। কারণ দেরি হলে বেশি ক্ষতি হবে। অযথা টাকা খরচ করে অবৈধ সংসদ চালানোরও দরকার নাই।”

    সড়কে টোল আদায়ে সরকারের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিদ্যুৎ, গ্যাসের পর এবার সড়কে টোল আদায়ের চিন্তা করছেন। এসব বন্ধ করুন। নইলে জনগণ রাস্তায় নেমে আসবে। যেসব উপদেষ্টা এসব পরামর্শ দিচ্ছে তা নেয়া বন্ধ করুন। আর পাশের দেশকে দেয়া ট্রানজিটেদের মাধ্যমে কত টাকা আদায় হচ্ছে তা প্রকাশ করুন। জনগণ জানতে চায়।”

    ‘অন্যায়ভাবে চার্জ গঠন মানি না’

    নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠনকে অন্যায় আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “তিন ঘণ্টা আদালতে বসে থাকলাম অথচ আমার কাছে কিছু জিজ্ঞাসা না করে চার্জ দেয়া হলো। সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এটা আমরা মানি না। আমরা সুবিচার চাই, বেশি কিছু চাই না।”

    বিচারক এজলাস থেকে উঠে ফোনে কথা বলে রায় দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

    দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি দলের ‘গুন্ডারা’ অস্ত্রাগারে পরিণত করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

    ‘সাংবাদিকদের বেকার থাকতে হবে না’

    দেশে কোনো পেশার মানুষ নিরাপদ নয়-এমন দাবি করে খালেদা বলেন, “কোনো পেশার মানুষ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরে ২৩ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। বহু সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। অনেক গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।”

    সাংবাদিকদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তখন আর আপনাদের বেকার থাকতে হবে না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে না। আগে আমরা না করলেও এখন শিখেছি তাই নতুন নতুন পত্রিকা হবে।”

    সরকারের রাগব-বোয়ালরা ধরা পড়বে এই কারণে সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন খালেদা।

    তিনি সরকারের কাছে বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেয়া, সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

    সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএফইউজের মহাসচিব শওকত মাহমুদ, ডিইউজে’র সভাপতি আবদুল হাই শিকদার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজে’র সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিআরইউ’র সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, চট্টগ্রামের শামসুল হক হায়দারী, শাহ নওয়াজ, খুলনার আনিসুজ্জামান, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সরদার আব্দুর রহমান, বগুড়ার ফজলে রাব্বী ডলার, কুষ্টিয়ার নজরুল ইসলাম মুকুল, যশোরের মহিদুল ইসলাম মন্টু, দিনাজপুরের জি এম হিরু, কুমিল্লার শাহ  আলম শফি, বগুড়ার ফজলে রাব্বী ডলার প্রমুখ।

    অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ঢাবির সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, ড. সদরুল আমীন, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।