সাঁতরানোর সময় সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত্যু !

    0
    278

    সাঁতরানোর সময় সেন্সর প্রযুক্তির মাধ্যমে মৃত্যু
    (Death from swimming sensor technology)

    মানুষ মাত্রই মরণশীল। পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষ ও প্রাণীকে নিয়মানুযায়ী একদিন মৃত্যু স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক, তা আমরা অনেকেই জানিনা। পানিতে সাঁতরানো অবস্থায় মৃত্যু- তা আবার ভয়ঙ্কর, সবাইকে অবাক লাগিয়ে দেয়। কারণ যিনি পুকুর, জলাশয়, নদী বা সাগরে গোসল করার সময় সাঁতার কাটেন, আবার সাঁতার না জানলেও তিনি পরিমাণ মতো পানিতে থাকেন। কিন্তু যখন ঐ ব্যক্তি হঠাৎ ডুবে যান, আর সহজে ভেসে ওঠেন না। তখই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে- তিনি তো সাঁতার জানেন অথবা অল্প পানিতে অবস্থান করেছিলেন। আবার ১২ ঘণ্টা বা ২৪ ঘণ্টা পরে লাশ হয়ে আপনাআপনি ভেসে ওঠে।

    আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর দেখি যে, পুকুর, জলাশয় বা নদীতে ডুবে মানুষ মারা গেছে অথবা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত,  টাঙ্গুয়ার হাওর বা অন্যান্য জায়গায় বেড়াতে গিয়ে মানুষ ডুবে মারা গেছে। তখন অনেকে বিভিন্ন ধরণের কুসংস্কারমূলক কথা বলে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে, যেমন-তার মৃত্যু হয়েছে খোয়াজপীরের কারণে, অথবা পানির দৈত্য তাকে খেয়ে ফেলেছে ইত্যাদি। আসলে জনসাধারণের এসব ধারণা সবই ভুল। আর ইহার জবাব মিলে আমার পিএইচডি গবেষণায় ইসনাহ পরীক্ষণের মাধ্যমে। উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে সেন্সর প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারণে।

    কিভাবে সেন্সর প্রযুক্তির অপব্যবহারে মাধ্যমে পানিতে সাঁতরানো অবস্থায় মৃত্যু?
    মনে করুন, আপনি নদীতে সাঁতার কাটার জন্য পানিতে নেমেছেন। আপনার আসে-পাশে আপনার পরিচিত বা অপরিচিত সাইবার হ্যাকার স্মার্ট মোবাইল ফোন বা সেন্সর ডিভাইস নিয়ে নৌকায় বা নদীর কিনারায় অথবা জিপিএস দূরত্বে আপনাকে দেখা যায় –এমন জায়গায় লুকিয়ে আছে। আপনার সাঁতার কাটা বা পানিতে অবস্থান নিশ্চিত করতে টেলিমেটিক্স ডিভাইস দিয়ে জিপিএস-এর সাহায্যে  আপনার অবস্থান অতিসহজেই জানা যায়। তাছাড়া, উক্ত স্থানে হাসি-কান্না, হাই-কাশি, কথা-শব্দ বলা, বায়ু নির্গত করা  বা খোলা চোখে থাকা প্রভৃতির মাধ্যমেও আপনার অবস্থান জানা যায়।

    আপনার আস-পাশ থেকে টেলিম্যাটিক্স যন্ত্রের মাধ্যমে সাইবার হ্যাকার আপনার শরীরের দুই হাত ও দুই পায়ে প্রক্রিয়াগত মোবাইল তরঙ্গমালার দিয়ে হাত-পায়ের অবস্থান নির্ণয় করে তাদের মধ্যে দূরত্ব জেনে যাবে, তারপর সিটিস্ক্যান বা এমআরআই এর মতো সফ্টওয়্যার দিয়ে ডিজিটাল স্ক্যানিং করে উক্ত ব্যক্তির হাত ও পায়ে সেন্সরিং করবে (চিত্র)।  এরপর উক্ত জায়গার কানেকটিভ টিস্যুতে রিমোট সেন্সিং এর মাধ্যমে প্রক্রিয়াগত ফ্রিকুয়েন্সির তড়িৎ চৌম্বকীয় বল প্রয়োগ করা হয় টেলিম্যাটিক্সের মাধ্যমে। হাত ও পায়ের রক্তনালীতে মোবাইল সেন্সর  হওয়ার পর সঙ্কুচিত হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় আর কানেকটিভ টিস্যুটি অকেজো হয়ে যায়, তখনই উক্ত পা ও হাত প্যারালাইস্ড হয়ে যায়। এরপর উক্ত ব্যক্তি হাত-পা নড়াচড়া করতে পারে না, ফলে সাঁতরাতে বা পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয় না, নিমেষেই ডুবে যায়।

    ফলে শরীর পানির নিচে পড়ে থাকে আর ইলেক্ট্রন তথা অক্সিজেন চলাচল বন্ধ থাকায়,তার মৃত্যু হয়। ৬ঘণ্টা থেকে ১২ঘণ্টা অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নরমাল বিএমআই বডি ভেসে ওঠে, কিন্তু মোটা বা অবিস বডি ভাসতে আরও সময় লাগে। এদিকে সাইবার হ্যাকার সরে গেছে অথবা সেও তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে মিশে গেছে। এইভাবে ২০০০ সাল থেকে সাইবার হ্যাকাররা মানুষকে মেওে ফেলছে সেন্সর মোবাইল প্রযুক্তি দিয়ে আর মিডিয়া প্রচার করছে, উক্ত ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছে। এমন ঘটনা বেশির ভাগ ঘটে বর্ষাকালে, যখন নদীতে,খালে, পুকুরে,বা জলাশয়ে পানি জমে, ঐসময়ে শিশু-পুরুষ-মহিলাসহ অনেকে এইভাবে মারা যায়।এক্ষত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

    প্রতিকূলতা
    আমাদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে যে, যখন পুকুরে বা নদীতে নামার আগেই সংশ্লিষ্ট জায়গায় অবশ্যই নেটওয়ার্ক আইসোলেটর ব্যবহার করতে হবে, ফলে উক্ত জায়গায় কোন মোবাইল সেন্সর সংযোগ থাকবে না। আর কারো ক্ষতিরও সম্ভাবনা নেই। বন্ধুদের মাঝে স্মার্ট মোবাইল ফোন থাকলে, তা বন্ধ থাকতে হবেই। এরপরও কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে খুব দ্রুত ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে হবে এবং স্থলভাগে এন তাড়াতাড়ি পানি অপসারণ করতে হবে।

    সুপারিশমালা
    সেন্সর প্রযুক্তির অপব্যবহার থেকে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সচেতনতার ক্ষেত্রে কতিপয় সুপারিশমালা, যা অনুসরণে আমরা উপকার পেতে পারি। যেমনঃ
    (১)    পানিতে নামার জায়গায় কখনও নিজের কাছে বা আসে-পাশে মোবাইল ফোন এবং সেন্সর ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না।
    (২)    পুকুর বা নদীর কিনারায় বা নৌকায়/লঞ্চ ও স্টীমারে কখনও মোবাইলফোন, ল্যাপ্টপ বা ইলেক্ট্রনিক জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। তবে নেটওয়ার্ক আইসোলেটর থাকলে খুবই ভালো।
    (৩)    পানিতে থাকা বা সাঁতরানো অবস্থায় কখনও হাঁচি, কাশি, হাই, হেচকি, শব্দ বা কথা বলা যাবে না। এসব হলে সঙ্গে সঙ্গে সরে যেতে হবে।
    (৪)    পুকুর বা নদীতে থাকা অবস্থায় শরীর থেকে দুষিত বাতাস বা ফ্লাটাস আসলে, তা নির্গত না করে  দ্রুত অন্যত্র করে সরে যেতে হবে।
    (৫)  পানিতে অবস্থানের সময় কোন কথা, গল্প বা রাগ করা যাবে না। যদি প্রয়োজন হয় তবে ইশারা-সংকেত ব্যবহার করা ভালো।
    (৬)   হঠাৎ হাত বা পা অবশ অনুভব হলে সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত উক্ত পানির জায়গা পরিবর্তন করে অন্যত্র সরে যেতে হবে।
    (৭)   পুকুর, নদী, জলাশয়ে বা সমুদ্রে গোসল না করে বা সাঁতার না কেটে স্থলভাগে গোসল করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
    (৮)   আপনার পুকুর বা নদী এলাকায় বা আসে-পাশে এন্টি-রেডিয়েশন প্রযুক্তি ব্যবহারে আপনার সঠিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বহন করে।

    সাঁতরানোর সময় প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু- খুবই দুঃখজনক। এটাই আমাদের জীবনে শিক্ষা। তাই বলে চিন্তিত হওয়া যাবে না। চলার পথে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, জীবন-মরণ হবে- এটাই স্বাভাবিক। পানিতে নামার ক্ষেত্রে বা গোসল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পুকুর, জলাশয় ও নদী প্রভৃতি এলাকায় চলাচলে বা গোসলে বা পানিতে নামার ক্ষেত্রে, নৌকা বা লঞ্চ ভ্রমণে অবশ্যই সজাগ থাকা, দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করা খুবই ভালো। এজন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ সাঁতার জানা, তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন এবং স্মার্ট মোবাইল ফোন ব্যবহারে বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্যই থাকা দরকার। আপনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন, যুগের সঙ্গে চলবেন, নেতৃত্ব দিবেন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কোন উন্নয়ন বা ক্ষতি হলে কোন কোম্পানী, নিরাপত্তাবাহিনী বা সরকার একাই দায়ী না, এক্ষেত্রে আমাদের প্রত্যেকের সচেতনতার অভাব বা বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি ছিল। তাই প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদেরকে সচেতন হয়ে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

    ড. মোঃ রহিমুল্যাহ মিঞা
    বিভাগীয় প্রধান,
    স্বাস্থ্য তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ,
    নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড,
    দক্ষিণ সুরমা, সিলেট, বাংলাদেশ।