সরকারের মধ্যস্থতায় সা’দ-জোবায়ের গ্রুপের ইজতেমা শুরু

    0
    292

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে তাবলিগ জামাতের ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হয়েছে।এবারের ইজতেমা দুটি গ্রুপের বিবদমান সঙ্ঘর্শের জেরে সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তাবলীগ জামাত পন্থী ভারতের মাওলানা সা’দ ও বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের গ্রুপের ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু আজ শুক্রবার বাদ ফজর থেকে ।

    এবারের  বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান সংবাদ  মাধ্যমকে জানান, শুক্রবার বাদ ফজর উর্দুতে আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হক শূল বয়ান শুরু করেন। আর বাংলাদেশের নোয়াখলীর মাওলানা নূরুর রহমান তা বাংলায় তরজমা করেন। ইজতেমাস্থলের বয়ান মঞ্চ থেকে মূল বয়ান উর্দুতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে ২৪টি ভাষায় তা তরজমা হচ্ছে।

    আগামী কাল শনিবার মাওলানা জোবায়ের পন্থীদের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মোনাজাত শেষে জোবায়ের পন্থীরা ময়দান ছেড়ে চলে গেলে রবিবার থেকে মাওলানা সা’দ পন্থীদের পরিচালনায় ইজতেমা ফের শুরু হবে। সোমবার মাওলানা সাদ পন্থীদের আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের চার দিনের বিশ্ব ইজতেমা।

    আজ শুক্রবার দুপুর দেড়টার দিকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে বৃহত্তর জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ইমামতি করবেন কাকলাইলের মাওলানা জোবায়ের। এবারে ৬৪ জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ৫০টি খিত্তায় (ভাগে) ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তায় নির্দিষ্ট জেলার মুসল্লির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

    শুক্রবার পবিত্র জুম্মার নামাজে লাখ লাখ তাবলীগি মুসল্লি এক সঙ্গে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় গাজীপুরসহ আশপাশের অঞ্চল  থেকে বিপুল সংখ্যক  তাবলীগি অনুসরণ কারী মুসুল্লিরা জুম্মার নামাজ আদায় করতে ইজতেমা ময়দানে আসবেন।

    শুক্রবার বাদ ফজর থেকে তাবলীগ পন্থী মুসল্লিদের জিকির আছকার ইবাদত বন্দেগীতে টঙ্গী এখন এক জন সমুদ্রে পরিণত হয়েছে।

    জেলাওয়ারী ৫০ খিত্তা: এবারের বিশ্ব ইজতেমায় রাজধানী ঢাকাসহ ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানকে জেলাওয়ারী ৫০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। মুসল্লিরা খিত্তাওয়ারী যেভাবে অবস্থান নেবেন: ১ নং খিত্তায় গাজীপুর, ২-৪ নং খিত্তায় টঙ্গী, ৫ ও ৬ নং খিত্তায় ঢাকার মিরপুর, ৭ ও ৮ নং খিত্তায় সাভার, ৯ নং খিত্তায় ঢাকার মোহাম্মদপুর, ১০ নং খিত্তায় ঢাকার ডেমরা, ১১ ও ১২ কেরানীগঞ্জ, ১৩-১৯ ঢাকার কাকরাইল, ২০ নাটোর ও নওগাঁ, ২১ ও ২২ রাজবাড়ি, ২৩ সিরাজগঞ্জ, ২৪ দোহার-নবাবগঞ্জ, ২৫ মানিকগঞ্জ, ২৩৬ টাঙ্গাইল, ২৭ রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট, ২৮ বগুড়া ও জয়পুরহাট, ২৯ মুন্সিগঞ্জ, ৩০ মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল, ৩১ যশোর, ৩২ নারায়ণগঞ্জ, ৩৩ বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি, ৩৪ ভোলা, ৩৫ নরসিংদী, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট, ৩৬ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ ময়মনসিংহ, ৩৮ শেরপুর ও জামালপুর, ৩৯ নেত্রকোনা, ৪০ কিশোরগঞ্জ, ৪১ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি, ৪২ মাদারিপুর, ৪৩ সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, ৪৪ কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, ৪৫ ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর, ৪৬ কুমিল্লা ও চাঁদপুর, ৪৭ পটুয়াখালী, ৪৮ বরগুনা, ৪৯ পাবনা এবং ৫০ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়।

    ১৩৮ বিশেষ ট্রেন, ৪০০ বাস : ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ১৩৮টি বিশেষ ট্রেন, ৪০০টি বিআরটিসি বাস ও পর্যাপ্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৯ হাজার পুলিশ, দুই শতাধিক র্যাব, ৩ শতাধিক আনসার, ২৮০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ইজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পুরো ইজতেমা মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ১৭টি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। রয়েছে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য তুরাগে ৭টি ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তুরাগে নৌ-টহল ছাড়াও ডুবুরীদল মোতায়েন রয়েছে।

    গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান সংবাদিকদের জানান, ইজতেমাতে যে কোনো ধরনের নাশকতা, নৈরাজ্য রোধে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

    উল্লেখ্য,  বাংলাদেশে ১৯৪৬ সালে ঢাকার রমনা পার্কসংলগ্ন কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে তৎকালীন হাজি ক্যাম্পে ইজতেমা হয়, ১৯৫৮ সালে বর্তমান নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। তখন এটা কেবল ইজতেমা হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রতিবছর ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আশাতীতভাবে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে ইজতেমা টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে আয়োজন করা হয়। ওই বছর স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লোকজন অংশ নেওয়ায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৬৭ সাল থেকে বর্তমান অবধি (২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে) ‘বিশ্ব ইজতেমা’ টঙ্গীর কহর দরিয়াখ্যাত তুরাগ নদের উত্তর-পূর্ব তীরসংলগ্ন ডোবা-নালা, উঁচু-নিচু মিলিয়ে রাজউকের হুকুমদখলকৃত ১৬০ একর জায়গার বিশাল খোলা মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

    প্রসঙ্গত,তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইলিয়াস মেওয়াটি কান্ধলভি (রহঃ) ছিলেন ভারতের নাগরিক, ১৮৮৫ সালে ব্রিটিশ ভারতের যুক্তপ্রদেশের এক শহরে তার জন্ম।তার মালফুজাত নামক একটি বইয়ের তথ্য থেকে জানা যায় তাবলীগের এই তরিকা তিনি স্বপ্নে প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাদের দাবী ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামক সংস্কারবাদি আন্দোলনের সূচনা করে মুসলিমদের নামাজ, রোজাসহ অন্যান্য ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দেয়ার কাজ করে আসছেন।তবে মুসলিমদের অন্যান্য ওলামা বৃন্দ প্রচলিত ছয় উসুলের ধারক এই স্বপ্নে প্রাপ্ত জামাতের বিরোধিতা করে আসছেন।