সন্দীপে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত

    0
    222
    সন্দীপে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত
    সন্দীপে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত

    চট্টগ্রাম, ১৬ মে : পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার পর এবার চট্টগ্রামের সন্দীপে আঘাত হানছে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন। মহাসেনের প্রভাবে ওই উপজেলার উড়িরচর আজিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত ও গাছ-পালা উপড়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার ১০টার দিকে এ ঝড় শুরু হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেখানে ধমকা হাওয়া ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। সন্দীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই-খাজা আজম বলেন, ঘূর্ণিঝড় মহাসনের প্রভাবে সন্দ্বীপে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বর্তমানে সাগর উত্তাল রয়েছে, জলোচ্ছাসে পানি দ্রুত বাড়ছে। তিনি জানান, দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে ১৫ টি ইউনিয়নে প্রায় ৩ লাখ লোক বাস করেন। সেখানে ১০৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র থাকলেও উড়ির চরে পর্যাপ্ত নেই। উড়িরচরে ২০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র দুটি সাইক্লোন সেন্টার আছে। তবে বেশিরভাগ মানুষই আত্মীয়-স্বজন ও অন্য জায়গায় নিরাপদে চলে গেছে। ওই সব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের জন্য শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান। উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম জানান, তার এলাকায় মহিলা ও শিশু এবং বৃদ্ধদের স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে পুরুষরা বাড়িতে অবস্থান করছেন।
    ব্যবসায়ী জাহিদ বলেন, প্রচন্ড বাতাস ও এর সঙ্গে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছেনা। সমুদ্রের পানি বেঁড়িবাধ ডিঙ্গিয়ে জন বসতিতে চলে আসছে। মনে হচ্ছে সমুদ্র ফুলে উঠছে। এদিকে স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন মূল্যবান সম্পদ ও প্রিয় গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। অনেকেই আগে আশ্রয় কেন্দ্রে না যাওয়ায় আবার বাড়ি ঘরে আটকা পড়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন,সবাইকে সাইক্লোন সেন্টারে নেয়া হয়েছে। তবে অনেকেই যেতে চায় না। তাদেরকেও সেখানে নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
    এদিকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়া উপকূলে আঘাত হানার পরই এর গতি বৃদ্ধি পায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ বুলেটিনে বলা হয়, বেলা ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মহাসেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিম, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিম, মংলা থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা সহকারী আবহাওয়াবিদ বিজয় দে জানান, পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার পর এর গতি বেড়ে গেছে। এটি এখন ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দিকে ধেয়ে আসছে। দুপুর ১২টার দিকে এটি ওই দুুই জেলার উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
    ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুব উত্তাল রয়েছে।
    চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৭ নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল জেলা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৭ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৫ নম্বর সতর্কসংকেতের আওতায় থাকবে।
    ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
    ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অতিক্রম করার সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোয় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।