সউদী আরবে ১০টি ক্যাটাগরিতে লোক যাবে

    1
    260
    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০ফেব্রুয়ারী জনশক্তি রফতানির বৃহৎ বাজার সউদী আরব গৃহস্থালির (হাউজ হোল্ড ওয়ার্কার) কাজে প্রতি মাসে  ১০ হাজার কর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সউদী নিয়োগকর্তারাই বাংলাদেশি কর্মীদের বিমান ভাড়া, ল্যাভির টাকাসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন করবে। শূন্য অভিবাসন ব্যয়েই বাংলাদেশি কর্মীরা সউদী আরব যাওয়ার সুযোগ পাবে। তবে পাসপোর্টসহ স্থানীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে একজন কর্মী সউদীতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। এসব কর্মী সউদী আরবে প্রতি মাসে ১২শ’ থেকে ১৫শ’ সউদী রিয়াল বেতন পাবে। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসী কল্যাণ ভবনে ঢাকায় সফররত সউদী আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-মন্ত্রী আহমেদ আল-ফাহাইদের নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা বলেন।
    প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৮ সালের পর সউদী আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ ছিল। এর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও বাজার গুটিয়ে নিয়েছিল। সউদী আরব মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর লিডিংয়ে আছে। সউদী আরবের শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশগুলোও তাদের বাজার উন্মুক্ত করবে বলে প্রবাসীমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর বন্ধ থাকার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে সউদী সরকার। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে সউদী সরকারের সঙ্গে আমরা লংটার্ম কাজ করতে চাই। আমরা চাই না কোনো কারণে হঠাৎ দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাক। যে সব কর্মী যাবে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, প্রয়োজনে তারাও দেবে।’ ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ বলেন, সফররত সউদী উপ-মন্ত্রী প্রতিমাসে বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার গৃহকর্মী (পুরুষ ও নারী) নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এসব কর্মীর মধ্যে নারী কর্মী, ড্রাইভার, ম্যানেজারসহ ১০টি ক্যাটাগরিতে লোক যাবে। এ ছাড়া সউদী আরবে ৬টি মেগাসিটি হচ্ছে, সেখানেও লোক নেবে তারা। তাদের বেতন হবে মিনিমাম ১২শ’ থেকে ১৫শ’ সউদী রিয়াল। এর নিচে লোক পাঠাব না- এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
    প্রবাসীমন্ত্রী বলেন, সউদীতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ভিসা ট্রেডিংয়ের সুযোগ থাকবে না। যদি কেউ সউদীতে ভিসা ট্রেডিং করে সউদী আইনানুযায়ী তার সর্বোচ্চ ১৫ বছর জেল হবে। তিনি বলেন, সউদীতে সব লোকই বেসরকারিভাবে যাবে। তবে সউদীতে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি শক্তহাতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সউদীর নিয়োগকারী রিক্রুটিং এজেন্সি সরাসরি অ্যাম্বাসির মাধ্যমে আমাদের কাছে ডিমান্ড লেটার পাঠাবে। ডিমান্ড অনুযায়ী আমরা ক্লিয়ারেন্স দিলে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সি লোক পাঠাবে।
    সউদীতে যেতে কর্মীদের কত টাকা খরচ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, ‘আমারা কর্মীদের কাছ থেকে এক টাকাও নিতে দেব না। সউদী আরবে কর্মী যেতে কোনো টাকা পয়সা লাগবে না। শুধুমাত্র পাসপোর্টসহ অভ্যন্তরীণ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা লাগতে পারে। তিনি বলেন, সউদীতে যদি জিরো কস্টে লোক পাঠানো যায় তাহলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যাবে। সউদী সরকারও মনে করে বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং হিসেবে থাকবে এবং তারা ভাল কাজ করতে পারে। রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভিস চার্জ নির্ধারিত থাকবে না বলে প্রবাসীমন্ত্রী উল্লেখ করেন। মন্ত্রী বলেন, সউদী আরব আমাদের বড় শ্রমবাজার। বিগত ৪-দলীয় সরকারের সময়ে ৯৭টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হতো। বর্তমান সরকারের আমলে ১৬০টি দেশে কর্মী প্রেরণ করা হচ্ছে। গত বছরও সোয়া ৪ লাখ কর্মী বিদেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।
    এ সময় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সচিব পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে সউদী আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-মন্ত্রী আহমেদ আল-ফাহাইদ সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশী কর্মীরা খুবই ভালো। সউদী সরকারও বাংলাদেশ থেকে কনস্ট্রাকশনসহ সকল খাতে লোক নিতে আগ্রহী। সউদীতে কর্মীর যাওয়ার খরচ নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান বহন করবে। কী পরিমাণ লোক নেয়া হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে সউদী উপ-মন্ত্রী বলেন, গত বছর সারাবিশ্ব থেকে ১.৩ মিলিয়ন লোক সউদী সরকার নিয়েছে। এ বছরও আমাদের এ পরিমাণ লোকের চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়া হবে। সফররত উপ-মন্ত্রী বলেন, সউদীতে বিদেশি কর্মীদের কাজের পরিবেশ এবং অর্থনীতিতেও সউদীর  ভালো অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন, সউদী মালিক পক্ষ সঠিকভাবে বেতন পরিশোধ করছে কিনা তা’ যথাযথ মনিটর করা হবে। তিনি বলেন, কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কারিগরি কমিটির সাথে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সাথেও বৈঠক হবে। সউদী আরবের পক্ষে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপ-মন্ত্রী আহমেদ আল-ফাহাইদ ছাড়াও দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিলাটেরাল রিলেশন্সের ডিজি মোহাম্মদ আল শারেখ, ইমপ্লয়ী সুপারভিশনের ডিজি আব্দুল আজিজ আল হার্বস দেশটির সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
    ঘণ্টাব্যাপী দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান  মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার ইফতেখার হায়দার, জনশক্তি রফতানি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার, সউদী আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. নুরুল ইসলামসহ প্রবাসী কল্যাণ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ইনকিলাব।