সংরক্ষিত আসনে সায়রা মহসিনের ও মনোনয়ন সম্ভাবনা

    0
    346

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নিয়েছেন বৃহস্পতিবার।আগামী সোমবার যাত্রা শুরু করবে নতুন সরকার। এর মধ্যেই সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যদের যোগদান নিশ্চিত করতে চায় দলের নিয়ন্ত্রণ কারীরা।বিভিন্ন সুত্রের ভিত্তিতে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সাবেক সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এমপির সহধর্মিনি সায়রা মহসিনের মনোনয়নের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

    সূত্রমতে, ৭ জানুয়ারি (সোমবার) মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথের ১৫ দিন পর অর্থাৎ ২২ জানুয়ারী নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে পারে। সে হিসেবে সব প্রস্তুতি নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ এপ্রিল। ২০ মার্চ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সংরক্ষিত আসনের এমপিদের গেজেট প্রকাশ করা হয়। ২৩ মার্চ সকালে শপথ নিয়ে বিকালে তারা যোগ দেন অধিবেশনে।

    আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, দশম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক ছাত্রনেত্রী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, অভিনেত্রী, শিল্পী, ব্যবসায়ী, দলের জন্য নিবেদিত অন্যান্য কর্মী বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ নেত্রীদের মধ্য থেকে নাম সংগ্রহ করছে আওয়ামী লীগ।

    তারা বলেন, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে বেশ কিছু নাম তার খসড়া তালিকায় টুকে রেখেছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তফসিল ঘোষণার পরপরই পূর্ণ তালিকা ঘোষণা করবে আওয়ামী লীগ।

    আ’লীগের নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা যায়, দশম সংসদে সংরক্ষিত আসনে থাকা ৪২ এমপির অধিকাংশই এবার বাদ পড়ছেন। জেলা কোটা সমন্বয় করতে গিয়ে তারা বাদ পড়বেন। এ কারণে বিগত ৫ বছরে দক্ষতা দেখালেও থাকতে পারছেন না অনেকে।

    তবে সংসদকে মাতিয়ে রাখতে পারেন, বক্তৃতায় পটু, টক-শোতে জোরালো অবস্থান রয়েছে- এমন কয়েকজন বর্তমান নারী এমপি পুনরায় থাকতে পারে। এদের মধ্যে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, মাহজাবিন খালেদ, সাবিনা আক্তার তুহিন, সানজিদা খানম, নিলুফার জাফর উল্লাহ, অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার, অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, নূর জাহান বেগম মুক্তার সম্ভাবনা রয়েছে।

    নতুনদের মধ্যে যারা এগিয়ে আছেন তারা হলেন- আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, স্বাস্থ্য উপকমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনি, মৌলভীবাজারের সায়রা মহসিন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা ক্রিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিরীন রোসানা, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার। বরিশালের জেবুন্নেছা আফরোজ, ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, গোপালগঞ্জের আরিফা রহমান রুমা ও শেখ মিলি, নীলফামারীর অ্যাডভোকেট তুরিন আফরোজ, কুষ্টিয়ার সুলতানা তরুণ, চট্টগ্রামের চেমন আরা তৈয়ব অন্যতম এবং ঢাকার আসমা জেরিন ঝুমু।

    এছাড়া বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী শমী কায়সার, জ্যোতিকা জ্যোতি, রোকেয়া প্রাচী, চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী ও অরুণা বিশ্বাসও রয়েছেন আলোচনায়। এর বাইরে আরও ২৫ জেলায় স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নারীনেত্রীর নাম সন্ধান করছে ক্ষমতাসীন দলটি।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মোট আসন পেয়েছে ২৫৭টি। প্রতি ৬ আসনে একজন করে সংরক্ষিত মহিলা এমপি নির্বাচিত করার বিধান আছে। সে হিসেবে আওয়ামী লীগ পায় ৪৩টি আসন। জাতীয় পার্টি ২২ এমপির বিপরীতে আসন পায় ৪টি। মহাজোটের অন্যান্য দলের ৬টি বা তার বেশি আসন না পাওয়ায় এককভাবে কেউ সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপির মনোনয়ন দিতে পারবেন না।

    তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটগতভাবে হিসাব করলে জোটটির মোট আসন ২৮৮টি। সে হিসেবে তাদের সংরক্ষিত মহিলা আসন দাঁড়ায় ৪৮টি। তখন জাতীয় পার্টিকে চারটি দিয়ে একটি আসন শরিকদের দিতে পারবে ক্ষমতাসীনরা।

    দশম জাতীয় সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত আসনের ৪২টিই আওয়ামী লীগের। এর বাইরে জাতীয় পার্টির ৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টির একটি করে সংরক্ষিত আসনের এমপি রয়েছে।

    সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন নিয়ে সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে নির্বাচন কমিশন সংসদের কোনো সাধারণ নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের তারিখ হইতে পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের (৩) দফার অধীন সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন সম্পন্ন করিবে এবং এ লক্ষ্যে সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের তারিখ এবং ভোট গ্রহণের স্থান ও তারিখ নির্ধারণপূর্বক নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করিবে।

    নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা যায়, সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ করবে না তারা। দ্রুতই তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের শপথের পর সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

    একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২ নারী ভোটে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৯ জনই ক্ষমতাসীন দলটির। জাতীয় পার্টি থেকে দুজন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে একজন নির্বাচিত হয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদে সরাসরি নারী এমপি ছিলেন ২৩ জন।