সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা

    0
    220

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রবিবার সকাল ১০টায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।বিশ্ব জুড়ে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব থেকে উত্তরণের পরিকল্পনা ও বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করলেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সকাল ১০টায় প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। তবে এই সময় করোনার কারণে স্বাস্থ্য বিধি রক্ষার্থে কোন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

    করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোট পাঁচটি প্যাকেজের আওতায় এই প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।

    রোববার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

    সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

    উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশবাসীকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেন তিনি।

    প্রধানমন্ত্রীর এই প্রণোদনা সংবাদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতার ওই ব্রিফিং সরাসরি সম্প্রচার করে।

    সংবাদ ব্রিফিংয়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সার্বিক পরিস্থিতি এবং তা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সময়মত ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আল্লাহর রহমতে এখনো আমাদের এখানে ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

    করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী- এ তিন পর্যায়ে চারটি কার্যক্রম নিয়ে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    কর্মপরিকল্পনা গুলো হচ্ছে:

    ক. সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি অর্থাৎ ইনক্রিজ পাবলিক এক্সপেন্ডিচার। অর্থাৎ জনগণ যেন আর্থিক কষ্টে না পড়ে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কর্ম সৃজনকে মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হবে।।

    খ. আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ প্রণয়ন। ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য।

    মানুষ যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়ে এবং যারা ব্যবসা করছেন সেটা ক্ষুদ্রই হোক, মাঝারি বা বৃহৎ হোক; তারা যেন ব্যবসাটা চালিয়ে রাখতে পারেন। সেদিকে লক্ষে রেখেই  এই সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন করা হয়েছে।

    গ. সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হবে।

    এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সমূহগুলো হলো-

    • ১. বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ
    • ২. ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়
    • ৩. লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ
    • ৪. বয়স্ক ভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা। সর্বাধিক দারিদ্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা।
    • ৫. গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না।

    ঘ. মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা বা ইনক্রিজ মানি সাপ্লাই। অর্থনীতির বিরুপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর অর্থাৎ রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে। এবং বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে।

    এ  আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী  দেশবাসীকে শবে বরাতে ঘরে থেকে এবাদত করা এবং  ঘরে বসেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলা নববর্ষ উদযাপন করার পরামর্শ দেন ।

    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত ৭০ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের বয়স ৭০ এর বেশি। আগে থেকেই তারা নানা রোগে ভুগছিলেন। তারপরও একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য নয়।’

    প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আর্থিক প্যাকেজ, বাড়তি মুদ্রা সরবরাহ,  মুদ্রাস্ফিতি,  ব্যাংকের তারল্য, রপ্তানী আয়  ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

    এ সময় আর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‌ ‘প্রধানমন্ত্রী যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তার সুবিধা সব শ্রেণি-পেশার মানুষ পাবে। কৃষক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতীসহ সব পেশার মানুষকে এর আওতায় আনা হবে।

    অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারিতে সারা বিশ্ব আজ আক্রান্ত। এটি কতো দিন থাকে আমরা জানি না। শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব রয়েছে। তাছাড়া এখন বিশ্বের এক প্রান্তে কিছু ঘটলে তা অপর প্রান্তের মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপরও এটি প্রভাব ফেলবে। তবে এই পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেক মানুষের পাশে আছি।