“মাছ ধরতে আসা মানুষের একটাই দাবী হাওরের অবৈধ দখল বন্ধ করে নদী বিল খলন করা”
আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৩জানুয়ারী,জহিরুল ইসলামঃ আকাশ সংস্কৃতির দাপটে আজকাল হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলা চিরায়িত বিভিন্ন গ্রামীণ সংস্কৃতি। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ও কেউ কেউ বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের আয়োজনে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী পলো বাওয়া উৎসব।
হাইল হাওরের পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং হাওরের নদী ও বিল খনন এবং দখল মুক্ত রাখতে আয়োজন করা হয়।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রীমঙ্গল কাকিয়াবাজার সংলগ্ন রাজাপুরের পেছেনে হাইল হাওরে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত পলো দিয়ে মাছধরা উৎসবে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় তিন শতাধিক সৌখিন মানুষ অংশ নেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেলে ৪ টা পর্যন্ত হাইল হাওরের সরকারী খাস জলাভূমি হিংরাইল গাঙ-এ এ মাছ ধরা কর্মসূচী চলে। পরে বিকেল সাড়ে ৪ টায় যারা সবচেয়ে বেশি ও বড় মাছ ধরনে তাদেরকে উপজেলা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে হাওর পাড়েই পুরস্কার দেয়া হয়।
সিরাজনগর এলাকার মোতালেব মিয়া প্রায় সাড়ে ৩ কেজি ওজনের একটি কার্পো মাছ ধরে প্রথম পুরস্কার একটি মোবাইল সেট জিতেনেন। দুইটি বোয়াল মাছসহ আরও কয়েকটি মাছ ধরে ২য় হন কালাপুর এলাকার ছমির বক্স এবং বড় বোয়াল মাছ ধরে ৩য় হন রাজাপুর এলাকার জাহাঙ্গীর মিয়া, ৪র্থ হন দুবাই প্রবাসী মো: সুফি মিয়া ও ৫ম হন সিরাজ নগর এলাকার আন্দুল মজিদ, ৬ষ্ট হন মো: ফারুখ মিয়া। এ ছাড়াও আছকর মিয়া, আব্দাল মিয়াসহ আরও ১৫ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়।
এই অনুষ্ঠানে পুরস্কারসহ বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করেন কাতার প্রবাসী সুব্রত চক্রবর্তী, ডা: বিনেন্দু ভৌমিক, কাতার প্রবাসী সাইদ আলী, ডা: লোকমান, মো: আছকির মিয়া প্রমূখ।
অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন প্রবাসী মো: আশরাফ উদ্দিন। আয়োজক কমিটির আহব্বায়ক সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মৌলভীবাজার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা: বিনেন্দু ভৌমিক, আমেরিকা প্রসাবী সাংবাদিক মুজিবুর রহমান রেনু, ডা: লোকমান, সাংস্কৃতিককর্মী এস কে দাশ সুমন, দেলোয়ার হোসেন মামুন, সাংবাদিক সালেহ্ এলাহী কুটি, সাংবাদিক আব্দুর রব, প্রাণ এর ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান, মাওলানা এম এ রহিম নোমানী ও অধ্যাপক রজত শুভ্র চক্রবর্তী।
মাছ ধরতে এসে দুবাই প্রবাসী সুফি মিয়া বলেন, বহু বছর পর তিনি পলো দিয়ে মাছ ধরার একটি সুযোগ পেলেন। আর একটি বোয়াল মাছও তিনি ধরেছেন যা তাকে এনে দিয়েছে বাড়তি আনন্দ। এ সময় তিনি বলেন, বহি বিশ্বে মানুষ প্রাকৃতিক অ লকে রক্ষার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করে। আর আমাদের দেশে প্রকৃতি ধ্বংস করে তা দখল হয়। তা সত্যি দু:খজনক।
এ ব্যাপারে এ উৎসবের আয়োজক সাংবাদিক বিকুল চক্রবর্তী বলেন, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের মাছের একটি অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত ছিলো এই হাইল হাওর। বর্তমানে হাইল হাওরের বুকে শোভিত হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। প্রায় সব গুলো নদীই দখল ও ভরাট হয়ে গেছে। বিল গুলোও প্রায় ভরাটের পথে। এই হাওরকে হাওরের পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়ার দাবীতে তারা এই পলো দিয়ে মাছ ধরা উৎসবের আয়োজন করেন। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মের অনেকেই পলো কি জিনিশ জানেন না। পলো দিয়ে কিভাবে মাছ ধরতে হয় তাও জানেন না। নতুন প্রজন্মের মধ্যে বাঙ্গালীর এ ঐতিহ্যবাহী মাছ শিকারের সামগ্রী ও কৌশল সম্পের্কে জানান দেয়া এবং গ্রামের মানুষকে বিনোদন দেয়াও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই তারা দুই দিন আগে থেকে বিভিন্ন গ্রামের বাজারে প্রাচীন নিয়মে ঢোল পিটিয়ে (ঢোলে বারি দিয়ে ) এ পলো উৎসবের জানান দেন। যা এ প্রজন্মের মানুষের কাছে বেশ কৌতুহল ও ভিন্ন আনন্দের মাত্রা এনে দেয়।
এদিকে এ পলো উৎসবে মাছ ধরা ছাড়াও শত শত মানুষ হাওরে ভিড় করেন তা উপভোগ করতে। এ ব্যাপারে শহরের বাসিন্দা এস কে দাশ সুমন জানান, জীবনে প্রথম কাছ থেকে বহু লোক এক সাথে পলো দিয়ে মাছ ধরা দেখেছেন। একই কথা জানান ফার্মাসিষ্ট মো: জামাল ও সাংবাদিক ইমন দেব চৌধুরী।
তবে মাছ ধরতে আসা মানুষের একটাই দাবী এই হাওরের অবৈধ দখল বন্ধকরা এবং নদী বিল খলন করা।