শ্রীমঙ্গল আ’লীগে সভাপতি সম্পাদক পদে প্রার্থী যারা

    0
    514
    সাদিক আহমেদ, স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘ ১৪ বছর পর আগামীকাল রাত পোহালেই ১৩ অক্টোবর রোজ রোববার বহুল প্রত্যাশীত মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।এতে তৃণমূল নেতৃত্বের আকাংখা পূরণ হবে এমন আশা করছেন রাজনৈতিক সচেতন মহল।
    শ্রীমঙ্গলে সর্বশেষ ২০০৫ সালে অনুমোদিত উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়।তারপর থেকে দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশী সময় ধরে সম্মেলন হয়নি এই কমিটির।বহু আগেই মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় এই কমিটির।তবে নানান জটিলতা ও অন্যান্য কারণে দীর্ঘ ১৪ বছর ভারপ্রাপ্তদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছিলো উপজেলা আওয়ামীলীগের এই কমিটি।
    তবে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হচ্ছে দীর্ঘ ১ যুগ পর আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই সম্মেলন।ইতোমধ্যে সম্মেলনকে সফল করার জন্য সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ।সম্মেলনকে কেন্দ্র করে এই প্রস্তুতি পরিষদের ৪ টি উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে।
    সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে উৎসবের রব।পুরো শ্রীমঙ্গল জুড়ে ছেয়ে গেছে ব্যানার ফেস্টুনে।নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী পদ পাবার আশায় দৌড়ঝাঁপের শেষ পর্যায়ে প্রার্থীরা।রাজনীতির তৃণমূলের মাঠ থেকে শুরু করে দলীয় বড় নেতাকর্মীদের সংস্পর্শে এসে নিজের অবস্থান শক্ত করতে শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থীরা।
    এদিকে দীর্ঘ ১৪ বছর সম্মেলন না হওয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছিল উপজেলা আওয়ামীলীগের এই কমিটিটি।অভিভাবকহীন এই কমিটির অবশেষে স্বপ্নের সেই সম্মেলন বাস্তবে রূপ নেয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যও বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।সম্মেলনের মাধ্যমে প্রাণ ফিরে পাবে নৌকার ঘাটি বলে পরিচিত শ্রীমঙ্গল উপজেলা।
    দলীয় সুত্রে জানা যায়,সম্মেলনে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ১ টি পৌরসভা ও ৯ টি ইউনিয়নের ৩১ জন করে মোট ৩১০ জন ভোটার রয়েছে।এছাড়া উপজেলা কমিটি ছিলো ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট।বিগত ১৪ বছরে ১৯ জনের প্রবাসে চলে যাওয়া এবং মৃত্যু হওয়ায় এই কমিটির বর্তমান ৪৮ জন ভোটার রয়েছেন।এছাড়া বিগত নির্বাচনগুলোতে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করেছেন এমন ১৫ জন কাউন্সিলরও ভোট দিতে পারবেন।
    দলীয় সুত্রে আরো জানা যায়,কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের পছন্দ ও নির্বাচিত প্রার্থীদের যদি সকল পদ প্রত্যাশীরা ও তৃণমূল সমঝোতার মাধ্যমে মেনে নেয় তবে ভোটাভুটি হবে না।আর যদি সমঝোতা না হয় তবেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবেন।
    এদিকে আসন্ন সম্মেলনে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ৬ জন করে মোট ১২ জন লড়বেন।
    সভাপতি পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ:
    মো: আছকির মিয়া, এম এ মান্নান, রণধীর কুমার দেব, শমসের খাঁন, অর্ধেন্দু কুমার দেব বেভুল, আবু শহিদ মো:আব্দুল্লাহ।
    সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ:
    মো: ইউসুফ আলী, শহীদ হোসেন ইকবাল, আকরাম খাঁন, শেখ মো: উপরু মিয়া, ছালিক আহমদ, তোফাজ্জল হোসেন ফয়েজ।
    সভাপতি পদ প্রার্থীঃ 
     
    ১) আলহাজ্জ মো: আছকির মিয়া: বীর মুক্তিযোদ্ধা আছকির মিয়া আওয়ামীলীগের একজন নিবেদিত প্রাণ।আওয়ামীলীগের একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে তার তুলনা কেবল তিনি নিজেই।আওয়ামীলীগে সুসময়ে যেমন দলের সাথে আছেন ঠিক তেমনি দুঃসময়েও দলের পাশেই থেকেছেন ছায়ার মতো।জনতা পার্টির রাজনীতি দিয়ে শুরু করা আছকির মিয়া হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাজনীতিতে একসময় বিশ্বাসী ছিলেন।জাতীয় পার্টি থেকে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলার চেয়ারম্যান হোন।পরে একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং বর্তমানে আওয়ামীলীগের অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী নেতা হিসেবে সমাদৃত তিনি।
    ২) এম এ মান্নান: পদ প্রত্যাশীদের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে আছেন বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান। তিনিও আওয়ামীলীগের অন্যতম একজন নেতা।এম এ মান্নান শ্রীমঙ্গল মুক্তিযোদ্ধা  সংসদের সাবেক কমান্ডার ছিলেন।তিনি ৩নং শ্রীমংগল ইউনিয়ন পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।এছাড়া বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।প্রবীণ ও আওয়ামী পরিবারের একজন বিশ্বস্থ নেতা হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে এম এ মান্নানের।পুরো শ্রীমঙ্গল জুড়েই বেশ সুপরিচিত তিনি তৃণমূলের কাছে।

    ৩) অর্ধেন্দু কুমার বেভুল: সাবেক ছাত্র নেতা,বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক  অর্ধেন্দু কুমার বেভুল আওয়ামীলীগের অন্যতম আরেকজন নিবেদিত প্রাণ। সদালাপী এই নেতা প্রচার বিমুখ হলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রবীণ নেতাদের মধ্যে তিনি একজন।

    ৪) শমসের খান:আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রবীণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম শমসের খান।বলা হয়ে থাকে শমসের খান নেতা হওয়া স্বত্বেও খুবই প্রচার বিমুখ।আওয়ামী পরিবারের রাজনীতিবিদ হিসেবে অত্যন্ত ক্লীন ইমেজের এই নেতা।সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা বর্তমান উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি পদে দায়িত্বে আছেন।আওয়ামী রাজনীতির প্রতি বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে বেশ কদর রয়েছে তার।
    ৫)আলহাজ্ব আবু সহিদ আব্দুল্লাহ: তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা,সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা,শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবং  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তি আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতৃবৃন্দের একজন।
    ৬) রনধীর কুমার দেব:আওয়ামী রাজনীতিতে রণধীর কুমার দেব নামটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম।রাজনীতি জীবনের শুরু থেকেই অদ্যবদী তিনি আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।রণধীর কুমার দেব ৯ নং সাতগাঁও ইউনিয়ন পরিষদেরর সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।তিনি বর্তমান শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।তিনিই একমাত্র চেয়ারম্যান যিনি টানা তৃতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক।
    সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী:
    ১) মো: ইউসুফ আলী: তিনি আওয়ামীলীগ শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।অত্যন্ত ন্যায় নিষ্ঠাবান ও বিচারিক হিসেবে মো: ইউসুফ আলী শ্রীমঙ্গলে সুপরিচিত।৭৫ পরবর্তী দলের ত্যাগী এই নেতা।
    ২) শহীদ হোসেন ইকবাল: তিনি শ্রীমঙ্গলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি,উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
    ৩) শেখ মো: উপরু মিয়া: ৫ নং কালপুর ইউপি আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মো: উপরু মিয়া,বর্তমান কালাপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনি ও একজন আওয়ামী পরিবারের নিবেদিত প্রাণ।
    ৪) তোফাজ্জল হোসেন ফয়েজ: সাবেক এই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বর্তমান মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি।
    ৫) আকরাম খাঁন: সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আকরাম খাঁন বর্তমানে ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদে আছেন।
    ৬) ছালিক আহমদ: তিনি বর্তমান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। যুবকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এই যুব নেতা।
     
    শ্রীমঙ্গল উপজেলা আ’লীগের নেতৃত্বে ১৫বছর পর প্রাণচাঞ্চল্য তবে শেষ মুহুর্তে কারা আসছে এবারের উপজেলা কমিটিতে,কারা দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গ বন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে তা আগামীকালই নির্ধারণ হবে যা এখন শুধু কিছুটা সময়ের ব্যাপার।
    উল্লেখ্য তৃণমূল আওয়ামীলীগের অনেকেই আমার সিলেটের প্রতিবেদকের মাধ্যমে মরহুম সাবেক সভাপতি এম এ মনিরসহ যারা এখন আর বেঁচে নেই অথচ জীবনের মল্যবান সময় পার্টির কাজে ব্যায় করেছে তাদেরকে যেন যথাযত মুল্যায়ন করেন দলের নতুন নেতৃত্বে যারা আসবেন তাদের প্রতি এই দাবী অনেকের।
    এ ছাড়া কমিটিতে কারা আসছে, আসতে পারে বা আশা প্রয়োজন তা নিয়ে নানা আলোচনা পর্যালোচনায় সরব হয়ে উঠেছে নেতা কর্মিরা। তৃন মুলের সাধারন কর্মিরা মনে করেন গনতান্ত্রিক ভাবে ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন হলে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে।