শ্রীমঙ্গলে ৩ ইউনিয়নে আড়াই বছর ধরে রাস্তার বেহাল দশা

0
578
শ্রীমঙ্গলে ৩ ইউনিয়নে আড়াই বছর ধরে রাস্তার বেহাল দশা


দেখার যেন কেহ নেই, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ রেখে পালিয়েছে !


জহিরুল ইসলাম,নিজস্ব প্রতিবেদক: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৩ টি ইউনিয়নের সংযোগ রাস্তার সংস্কারের কাজ শুরু করেই ঠিকাদার প্রতিষ্টান পালিয়েছে।এখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। শ্রীমঙ্গল থেকে ভূনবীর ইউনিয়নের সাঁতগাও-সিদুরখান ও আশিদ্রোন ইউনিয়নের সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার আড়াই বছরেও রাস্তার কাজের অগ্রগতি হয়নি ১০ভাগ।
উল্টো রাস্তার পিস তুলে ফেলায় রাস্তায় কংক্রিট ভোগান্তি হচ্ছে চরম পর্যায়ে। পুরো রাস্তা জুড়ে ছড়ানো ছিঠানো অবস্থাতে রয়েছে কংক্রিট (ইটের টুকরা),রাস্তার এখানে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় গর্ত, জমে থাকে বৃষ্টির পানিও।পুরো রাস্তাই এখন খানাখন্দে ভরা। দূর্ঘটনার ঝুঁকি, যানবাহনের ক্ষতি, সময় নষ্টসহ নানাবিধ যাতনা সহ্য করে বাধ্য হয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন হাজারও সাধারণ মানুষ।
ভোজপুরের রাস্তাটির নাম শোনলে লোকজন আৎকে উঠে, এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি,বাইক,সিএনজি নিয়ে যেতে ভয় পান অনেকে। বিশেষ করে রোগী বহন করা খুবই কঠিন। এতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ৩ ইউনিয়নের আশপাশের লোকজন।বৃষ্টি হলেই গর্ত গুলোতে পানি জমে ক্রমান্তয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।এই গর্ত গুলোর কারনেই অনেক সময় দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। শ্রীমঙ্গল উপজলা প্রকৌশলী কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২ জুন রাস্তাটির কাজ শুরু হয়।ঢাকার ডলি কনট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রাস্তার কাজটি পায়।তাদের সাথে চুক্তি ছিল ২০২০ অক্টোবর মাসের মধ্য তারা কাজ সমাপ্ত করবে। এর মধ্য তারা হঠাৎ করেই কাজ রেখে চলে যায়। এর পর থেকে রাস্তাটি বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। এ যেন দেখার কেহ নেই।
সরজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আছিদ উল্ল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের চৌমুহনা থেকে সিন্ধুর খান অভিমূখ প্রায় ৬.৭৯ কিলোমিটার রাস্তাটি পূর্ন নির্মাণের জন্য বিভিন্ন জায়গা খুড়ে রাখা হয়েছে। রাস্তাটি কিছু জায়গায় গর্ত হয়ে পানি জমে আছে।কিছু জায়গায় কংক্রিট (ইট) বিছানো।চারিদিকে কংক্রিট রয়েছে ছড়িয়ে ছিঠিয়ে। এসব কংক্রিট এখন রাস্তার সুবিধার বদলে অসুবিধা করছে বেশী।
অন্য দিকে এই রাস্তার অপর অংশ আছিদ উল্লা উচ্চ বিদ্যালয় চৌমুহনা থেকে সাতগাঁও বাজারে যাওয়ার মাঝামাঝি স্থানে একটি ব্রিজ ভেঙ্গে পড়েছে যার কারনে ভূনবীর ইউনিয়নের সাতগাঁও এলাকা থেকে আসিদ্রোন ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কোথাও রাস্তা ভেঙ্গে পাশের নিচু জমির সাথে মিশ আছে।যানবাহন চলাচলে একটু ভুল হলেই বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এব্যাপারে প্রকৌশলী মনিরুল বলেন, “রাস্তা মেরামতে দেরি করার কারণে ডলি কন্সট্রাকশনের টেন্ডার বাতিল করা হয়েছে। দ্রুত এ রাস্তার জন্য নতুন টেন্ডার দেওয়া হবে।“ সাতগাঁও-সিন্দুরখান সড়কটির ৬০ ভাগ অংশ আশিদ্রোন ইউনিয়নে, ২৫ ভাগ সিন্দুরখানে ও ১৫ ভাগ ভূনবীর ইউনিয়নে বলে জানান তিনি।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের কাজির গাও এলাকার জুয়েল আহমদ জানান, এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন মটর সাইকেল নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হয়। সাইকেলের চাকা প্রায়ই পাঙচার হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আমি এই দুই বছরে তিন/চার বার সাইকেলের চাকা নতুন লাগিয়েছি।
জামসী গ্রামের মুক্তার মিয়া বলেন,এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।মটর সাইকেল এখন বাইসাইকেলের মতো করে চালিয়ে নিয়ে যেতে হয়। পুরো রাস্তাই এমন যার কারনে সময় লাগে দ্বিগুন। তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চান। আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বেলাল আহমেদ বলেন, এই রাস্তাটি অনেক বছর ধরেই খারাপ ছিলা। মাঝখানে দুই বছর আগে দেখলাম রাস্তাটির সব পিস তুলে নতুন করে কংক্রিট ফেলা হচ্ছে। কংক্রিট ফেলার পর সেটা সমান করার আগেই দেখলাম আর কেউ এখানে কাজ করতে আসে না। আমি এখন আর এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি না এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করলে মনে হয় কখন জানি দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যাই। আমি প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার ঘুরে শ্রীমঙ্গলে যাতায়াত করি। পূর্ব জামসী গ্রামের মাওলানা শাহীন মিয়া জানান, রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার দুই বছর পূর্ব থেকেই রাস্তা খারাপ ছিলো ভালোর জন্য কাজ শুরু হয় এখন আরো খারাপ অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তাটি। এই কংক্রিটের উপর দিয়ে ধীরে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়।
বিশেষ করে কোন রোগী নিয়ে গেলে রোগীর অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই সময় ছোট যানগুলা এখানের গর্তে আটকা পড়ে যায়।

আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জানান,”ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরুতেই নিন্মমানের মালামাল ব্যবহার করে এবং কাজের গতি ছিল অতি ধীর গতিতে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরে অভিযাগ করেন।তারা তখন তদন্ত করে কাজ বন্ধ রাখেন এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করেন।এর পর নতুন টেন্ডারের জন্য একাধিকবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে যোগাযাগ করেন।এই রাস্তার জন্য ইউনিয়নের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।সর্বশেষ গত সপ্তাহে ও তিনি উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে এনিয়ে বৈঠক করেন বলে জানিয়েছেন।

মোঃ মোস্তাকিম মিয়া জানান,”এই রাস্তা দিয়ে আমরা বাইসাইকেল নিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। আর কোন টমটম,সিএনজি অথবা অন্য গাড়ি যোগে যেতে খুবই কষ্ট সাধ্য।এলাকারবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল রাস্তাটি সংস্কার করে চলাচলে উপযোগী করে তোলা কিন্ত অত্যান্ত দু:খের সহিত বলতে হচ্ছে যে রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল তাও ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে পালিয়ে গেছে। লস করেছে এলাকাবাসীর ও সরকারের।”