শ্রীমঙ্গলে র্যাবের অভিযানে সরকারি চাউল চুরির খনির সন্ধান!

    0
    884

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ শ্রীমঙ্গলের ৫ নং কালাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ভৈরবগঞ্জ বাজার এলাকায় শ্রীমঙ্গল র‍্যাব -৯ এর কমান্ডার এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীমের নেতৃত্বে র‍্যাবের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আকস্মিক অভিযানে একজনকে আটক করে অভিনব কায়দায় আলামত নষ্ট করে সরকারি চাল চুরির খনির সন্ধান পান এবং এর বিস্তারিত তথ্যের খোঁজে নেমে পরে।এতে প্রায় সাড়ে তিনশত কেজি চাউল উদ্ধার হলেও বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গরিব অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রদেয় “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ,ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” প্রধানমন্ত্রীর এই শ্লোগান লিখিত শতাধিক বস্তার নিয়মিত জ্বালানো ছাই এর সন্ধান পাওয়া গেছে।

    সরেজমিনে দেখা যায়, অভিযানের প্রথমে  ভৈরবগঞ্জ বাজার থেকে নূপুর কান্তি রায় নামে এক ব্যবসায়িকে আটক করার পর তার স্বীকারোক্তিতে তার গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে তিনশত কেজি সরকারী চাউল বিভিন্ন ভাবে রাখা স্থান থেকে উদ্ধার করে র‍্যাব।এ সময় চাউল লুকাতে গিয়ে বাথরুমের ট্যাংকিতে ঢেলে দেওয়ারও চিত্র দেখা যায়।কি পরিমাণ চাউল ট্যাংকিতে ঢেলে দেওয়া হয় তা অনুমান করা সম্ভব নয়।র‍্যাবের কাছে আটককৃত নূপুর রায়ের দেওয়া তথ্যে কিছু চাউল উদ্ধার হলেও চাউলের খালি বস্তার কোন সন্ধান দেয়নি নূপুর।পরে র‍্যাব অফিসার শামিম ও তার টিমের একটি অংশ তাকে (নূপুর) নিয়ে তার সত্ত্বাধিকারী “মেসার্স নিউ মা ভেরাইটিজ ষ্টোর”, শাহজালাল মার্কেট, ভৈরবগঞ্জ বাজারে আসার পর সেখানেও চাউলের বস্তার কোন সন্ধান মিলেনি।

    এ সময় চৌকস অফিসার আনোয়ার হোসেন শামিম বস্তা খোঁজার কাজে চারিদিকে তল্লাশি করতে থাকে। সন্দেহ মূলক বাজার সংলগ্ন পশ্চিমে আবর্জনা স্তূপে গিয়ে দেখেন বস্তা জ্বালিয়ে দেওয়ার ছাই’য়ের স্তূপ দেখা যায়। বিভিন্ন সময়ে বস্তা পুড়িয়ে ফেলার এই ছাইয়ের স্তূপ দেখা যায়। পুড়িয়ে ফেলা বস্তার আংশিকসহ জঙ্গলের গাছড়ার নিচ থেকে ১০/১৫ টি খালি বস্তা ও ছাইয়ের সন্ধান পান র‍্যাব সদস্যরা।র‍্যাব অফিসার বলেন,বস্তা ও চাউল উদ্ধারের পর অভিযুক্ত আটক নূপুর রায়  “মেসার্স লিপি এন্টারপ্রাইজ” শাহজালাল মার্কেট, ভৈরবগঞ্জ বাজারের সত্ত্বাধিকারী সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থি বর্তমান সরকারী চাউলের ডিলার আনোয়ার হোসেন ( আনারউদ্দিন) থেকে ক্রয় করতেন বলে জানান। চাউলের ডিলার আনোয়ার হোসেন ( আনারউদ্দিন) এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আসছেন বলে পালিয়ে যান।

    আটক নুপুর কান্তি রায়ের সত্বাধীকারী মেসার্স নিউ মা ভেরাইটিজ ষ্টোর” নামে শাহজালাল মার্কেট ভৈরবগঞ্জ বাজারে একটি দোকান কৌটা রয়েছে। তাহার গ্রামের বাড়ী মৌলভীজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের রাঙ্গুনিয়া (লাইংলা) গ্রামে।

    এদিকে ভৈরবগঞ্জ বাজারের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,কিছু ইউপি সদস্য রয়েছে যারা ডিলারের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন সময় এই রকম চাউল বিক্রি হয়। কোন কোন ইউপি সদস্য এই চাউল বিক্রির সাথে জড়িত নাম জানাতে অনীহা জানান।

    উল্লেখ্য, ডিলার মোঃ আনোয়ার হোসেন ৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি। তিনি “মেসার্স লিপি এন্টারপ্রাইজ” নামে শাহজালাল মার্কেট, ভৈরবগঞ্জ বাজারের একই মার্কেটে ডিলার দোকানদার , তিনি শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর ইউনিয়নের হাজীপুর গ্রামের বাসিন্দা।

    জানা  রাখা উচিত, “শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ” গরীব দুঃখী ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য সরকারের বরাদ্বকৃত দশ টাকা মুল্যের চাুউল ( ওএমএস) বিক্রি হচ্ছে হাট বাজারের বিভিন্ন দোকানে । খাদ্য বান্ধব র্কমসুচীর আওতায় সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ১০৪০ টাকা মুল্যে ধান কিনে সেই ধান বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দরিদ্র জনগনের খাদ্য নিশ্চিতের জন্য ১০ টাকা মুল্যে চাউল সরবরাহ করে থকে স্থানীয় ডিলরদের মাধ্যমে। এই ডিলাররা সরকারের কাছ থেকে এনে গরীবদের কাছে না পৌছিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় দোকানদারদের মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন বছরের পর বছর। এতে গরীব অসহায়দের জন্য সরকারে  র্ভুতুকী বাবত প্রায় প্রতি মন ধানে ৮৫০ টাকা বঞ্চিত হচ্ছেন গরীবরা।

    সরকারী চাউল আত্মসাতের ব্যাপারে ৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি  ইরফান আহমদ টুকুর সাথে আমার সিলেটের কথা হলে তিনি বলেন, “কোন অপরাধীর দ্বায় আওয়ামীলীগ নিবেনা। যে কেহ অপরাধ করে তার বিচার হওয়া উচিত।আমি আমার নেতৃবৃন্দের কাছে এই চরিত্রের কাউকে দলে না রাখার জন্য অনুরোধ করবো।”

    অপর দিকে ৫ নং কালাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মুজুল আমার সিলেটকে বলেন,”আমি এই দুর্নীতির বিচার চাই, অচিরেই এলাকা বাসিকে নিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ করবো। আমার এলাকায় গরিবের চাউল নিয়ে এই সমস্ত অন্যায় করতে দিব না।তিনি আরও বলেন আমার কাছে এর কোন অভিযোগ আগে আসেনি।”

    শ্রীমঙ্গল র‍্যাব -৯ এর কমান্ডার  এএসপি আনোয়ার হোসেন শামীম আমার সিলেটকে জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া গরিবের উপহার এই ভাবে অসৎ ডিলার ও সিন্ডিকেট আত্মসাৎ করছে,যারা এই আত্মসাতের সাথে জড়িত আমরা তাদের খুঁজে বেড় করে শাস্তির ব্যবস্থা করবো।”

    প্রসঙ্গত কয়দিন পুর্বে ও পুলিশের হাতে একই অভিযোগে আব্দুল হক ডিলার জড়িত দুইজনকে চাউলসহ আটক করা হয় এবং তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।আপডেট নিউজ। পূর্বের সংবাদের লিঙ্ক দেখুন।

    শ্রীমঙ্গলে সরকারী চাউল পাচারের অভিযোগে মামলা,আটক-২