শ্রীমঙ্গলে বস্তাবন্দী অজ্ঞাত লাশ সনাক্ত,খুনি স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ

0
1592

একটি বস্তার সূত্র ধরেই খুনি স্বামীর সন্ধান পেলো শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একটি দল”

নূর মোহাম্মদ সাগর, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গতকাল ১৮ মে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টায় উদ্ধারকৃত চাঞ্চল্যকর হত্যা কান্ডের বস্তাবন্দি অজ্ঞাত নারীর লাশ সনাক্ত ও এর একমাত্র খুনি স্বামীকে আটক করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ।
নিহত ভিকটিমের নাম ডলি আক্তার (২৮) পিতা মৃত ফেলু মন্ডল গ্রাম বধনপুর, থানা ও জেলা ঝিনাইদহ। শ্রীমঙ্গলে তার স্বামীর বাড়ি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে উক্ত লাশের পরিচয় সনাক্ত করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে আশরাফুজ্জামান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপারে পদোন্নতি প্রাপ্ত) শ্রীমঙ্গল সার্কেলসহ শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি মসুদ মিয়া (৬২),পিতা-মৃত একলাছ মিয়া রামনগর (জোড়া পুল) শ্রীমঙ্গলকে আটক করতে সমর্থ হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, স্থানীয় সংবাদ এর ভিত্তিতে এস আই আসাদুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম মঙ্গলবার সকালে শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৪ নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম বেলতলী ওদনা ছড়া ব্রিজের নিচে বস্তাবন্দি অবস্থায় এক অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করেন।

একসময় সাদা রঙ্গের প্লাস্টিক জাতীয় বস্তার ভিতরে পা বাঁধা অবস্থায় মৃতদেহটি পাওয়া যায়। যে বস্তায় লাশটি রাখা ছিল এর গায়ে মো: অনিক মিয়া শ্রীমঙ্গল লেখা থাকায় পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হলে এর তদন্তভার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মোঃ হুমায়ুন কবির তদন্তভার গ্রহণ করে এবং পরিচয় শনাক্তের আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। বস্তার গায়ে অনিক শ্রীমঙ্গল লেখা থাকাই এ ব্যাপারে খোঁজ করতে গিয়ে সাইফুর রহমান মার্কেটের পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী অনিক এবং তার ভাই জুয়েল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বস্তাটি তাদের দোকানের বলে স্বীকার করেন এবং গ্রেফতারকৃত আসামি মসুদ মিয়া তাদের কাছ থেকে চাপাতা রাখার জন্য বস্তাটি নিয়ে যায় বলে জানান।
পরে পুলিশ মাসুদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি একজন সুদী কারবারি। তার চার-পাঁচটি স্ত্রী রয়েছে তার চারিত্রিক অবস্থা খারাপ থাকায় কোন স্ত্রীর সাথে তার বনিবনা নেই।
জিজ্ঞাসাবাদে এক পর্যায়ে পুলিশের কাছে ভিকটিম ডলি বেগমকে হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন ।
এ ব্যাপারে পুলিশ বলেন,আম কিনতে গিয়ে পরিচয়,পরে ভালো লাগা তার পর প্রেম একসময় বিয়ে, আট মাসের দাম্পত্য জীবন চলে সিন্দুরখান রোডস্থ একটি বসত ঘরে। ডলি আক্তার ও তার স্বামী মসুদ ঘর সংসার করে আসছিল মহা সুখে।
রোববার (১৭ মে) দিবাগত রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয় । ওইদিন রাতেই প্রায় সাড়ে তিনটায় মসুদ মিয়াু তার স্ত্রী ডলি আক্তারকে কাপড়-রশি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। পরবর্তীতে কাপড় ব্যবসায়ী অনিক মিয়ার থেকে প্লাস্টিক জাতীয় বস্তা এনে তার স্ত্রী ডলি আক্তারের মৃতদেহকে বস্তাবন্দি করে আটটার দিকে সিন্দুরখান রোড এর সিএনজি স্ট্যান্ড ম্যানেজার মনফর মিয়াকে ফোন করে একটি সিএনজি তার বাড়িতে পাঠাবার কথা বললে মনফর সিএনজি চালক বেলাল মিয়াকে মসুদ মিয়ার বাড়িতে পাঠালে লাশ ভর্তি বস্তাটি গাড়িতে উঠিয়ে হুগলিয়া বাজারের (সিন্দুখান) দিকে যেতে থাকে। হুগলিয়া বাজারে যাওয়ার সময় লাশ ভর্তি বস্তাটি ওদনা ছড়া ব্রিজের নিচে ফেলে দেয়। এ সময়ে সিএনজি চালক বস্তার ভিতর কি রয়েছে জিজ্ঞাসা করলে মসুদ জানান “এটি একটি মরা গরুর বাচ্চা।”

প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া সুমন, হাসান মোহাম্মদ রিকাবদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, (অপরাধ), এবিএম মুজাহিদুল ইসলাম পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর মৌলভীবাজার, ওসি আব্দুছ ছালিক দুলাল,শ্রীমঙ্গল থানা, মৌলভীবাজার।

পুলিশের সূত্রে আরো জানা যায়, এই অভিযানে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) আশরাফুজ্জামান আশিক’র নেতৃত্বে ওসি আবদুছ ছালিক, পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত হুমায়ুন কবির, এস আই আসাদুর রহমান, এসআই আলমগীর,এস আই আলামিন,পুলিশ সদস্য মোশাররফ হোসেন রেজাউল করিম শওকত আলী ও নারী পুলিশ সদস্য আসিফা খাতুন অংশগ্রহণ করেন।

পূর্বের সংবাদের লিংক দেখুন-

http://www.amarsylhet24.com/%e0%a6%b6%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%80%e0%a6%ae%e0%a6%99%e0%a7%8d%e0%a6%97%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%ac%e0%a6%b8%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a6%e0%a6%bf-%e0%a6%85%e0%a6%9c/