শ্রীমঙ্গলে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ ও ফ্রান্স বিরোধী মানববন্ধন

    0
    325

    নূর মোহাম্মদ সাগর, বিশেষ প্রতিনিধি: ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈ’দে মিলাদুন্নবী ﷺ । এ উপলক্ষে নানা আয়োজন করেছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে। প্রতি বছরের মতো এবারও শ্রীমঙ্গল সিরাজনগর দরবার শরীফ ও আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের উদ্যোগে জশনে জুলুস (আনন্দ মিছিল) অনুষ্ঠিত হয়।

    রবিবার (২৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শ্রীমঙ্গল শহরে উপস্থিত জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামের সন্নিকটে পৌরসভার সম্মুখে ফ্রান্সে নবী করিম (দ:)এর প্রতি ব্যঙ্গচিত্র করে অবমাননার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে জশনে জুলুস (আনন্দ মিছিল) শুরু হয়। শ্রীমঙ্গল শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এসে শেষ হয়।

    এ সময় সর্বস্তরের মুসলমান জনতা জশনে জুলুসে অংশ নেন। বিগত বছরগুলোতে এ সংগঠন গুলোর যৌথ উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল এলাকায় জশনে জলুসের আয়োজন করা হয়।প্রত্যেক বছরের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট,যুবসেনা, ছাত্রসেনা সম্মিলিতভাবে অংশগ্রহণ করেন ।
    মোঃ মামুনুর রশীদ ও আশরাফুল খান রুবেল এর যৌথ সঞ্চলনালায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যক্ষ মােল্লা শহিদ আহমদ নাঈমী ,প্রেসিডিয়াম সদস্য, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ । প্রধান অতিথি পীরে তরিকত, আল্লামা ছাহেব কিবলা সিরাজনগরী (মা.জি.আ.) চেয়ারম্যান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ।প্রধান আলােচক বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব মুফতি শেখ শিব্বির আহমদ,সভাপতি:আঞ্জুমানে ছালেকীন বাংলাদেশ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত বাংলাদেশ।বিশেষ অতিথি

    আল্লামা সিরাজুল ইসলাম আলকাদেরী খলিফা, সিরাজনগর দরবার শরীফ, শ্রীমঙ্গল। আল্লামা শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী মহাসচিব, আঞ্জুমানে ছালেকীন বাংলাদেশ, আল্লামা আলী মােহাম্মদ চৌধুরী প্রেসিডিয়াম সদস্য, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশ।

    জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বক্তাগণ বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম বিশ্বের ঈমানি প্রেরনার জয় ধ্বনী নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে আসে রবিউল আওয়াল মাসে। পবিত্র ঈ’দে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম উৎসব। যুগে যুগে বাতিলদের শনাক্ত করার কিছু নিদর্শন ছিল। তেমনিভাবে তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সমাজে ও বাতিলদের চিনার নিদর্শন হল পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরোধিতা করা। বাতিলদের বেড়াজাল থেকে মুসলিম মিল্লাতকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
    প্রসঙ্গত,পবিত্র “ঈ’দে মিলাদুন্নবী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি?
    ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উৎযাপন করা ইত্যাদি। আর মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে আমরা নবীজীর শুভাগমনকে বুঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবীজীর আগমনে খুশী উৎযাপন করাকে বুঝায়। সুতরাং অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আধারের বুক চিড়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শান্তির বার্তা নিয়ে এসে বিশ্বের জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলেন। নবীজীর পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সার্থকতা।

    কুরআনুল কারীমের দৃষ্টিতে পবিত্র ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন- অর্থাৎ- আল্লাহ বলেন, হে প্রিয় রাসূল! আপনি স্মরণ করুন ঐ দিনের ঘটনা”- (রোজে আজলের সময়ের) যখন আমি (আল্লাহ) আম্বিয়ায়ে কেরামগণের নিকট থেকে এইভাবে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন ‘আমি তোমাদেরকে কিতাব এবং হিকমত’ অর্থাৎ নবুয়ত দান করবো, অতঃপর তোমাদের কাছে এক মহান রাসূলের শুভাগমন হবে- যিনি তোমাদের প্রত্যেকের নবুয়তের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা সকলে অবশ্যই তাঁর উপর ঈমান আনযন করবে এবং সর্বোত্তমভাবে তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। তোমরা কি এ কথার অঙ্গীকার করছো এবং অঙ্গীকারে কি অটল থাকবে? সমস্ত নবীগণ বললেন- হাঁ, আমরা অঙ্গীকার করলাম। আল্লাহ তায়ালা বললেন- তোমরা পরস্পর স্বাক্ষী থেকো এবং আমি ও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম। এর পরেও যে কেউ পিছপা হয়ে যাবে- তারা হবে ফাসেক।
    সূত্রঃ তৃতীয় পারা, সূরা আল-ইমরান ৮১-৮২ নং আয়াত।

    এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো (১) আয়াতের ইবারাতুন নস-এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, অন্যান্য নবীগণ থেকে আল্লাহ তায়ালা অঙ্গীকার আদায় করেছিলেন। (২) দালালাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সমস্ত নবীগণ সেদিন মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। (৩) ইশারাতুন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মূলত ঐ মাহফিলটি নবীজীর আগমনী বা মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর মাহফিল ছিল। (৪) ইক্বতেজাউন নস- এর দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ঐ সময় সমস্ত নবীগণ কি্বয়াম অবস্থায় ছিলেন। কারণ ঐ দরবারে বসার কোন অবকাশ নেই এবং পরিবেশটিও ছিল আদবের।

    আরো লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে- এই আয়াতে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন ‘মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থাৎ নবীজীর আগমন সম্পর্কে রোজ আজলের মধ্যে সমস্ত নবীগণকে উপস্থিত রেখে আলোচনা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন প্রিয় আল্লাহর রাসূল, তাঁর সাথে মানুষের তুলনা হবেতো দূরের কথা, অন্য কোনো নবীর ও তুলনা হয়না। এজন্যই আল্লাহ তায়ালা সমস্ত নবীদের নিকট দুটি হুশিয়ারী বাণী প্রদান করেছেন। যথা- (১) আমার বন্ধুর উপর ঈমান আনতে হবে। (২) আমার বন্ধুকে সর্বোত্তমভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে হবে।
    মানুষ যখন কোনো নেয়ামত ও রহমত প্রাপ্ত হয় তখন তার জন্য আনন্দ উৎসব করা তার স্বভাবগত কাজ, আর আল্লাহর নির্দেশও তাই। যেমন- পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-
    অর্থাৎ- হে মানবকুল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং অন্তর সমূহের বিশুদ্ধতা, হেদায়াত এবং রহমত ঈমানদারদের জন্য। হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি বলুন! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ প্রকাশ করে। এটা তাদের সমস্তধন দৌলত সঞ্চয় করা অপেক্ষা শ্রেয়। (সূরা ইউনুছ, আয়াত নং- ৫৭-৫৮)আপডেট