শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক ও পর্যটকদের সংঘর্ষ,রিসোর্টে ভাংচুর

0
611
শ্রীমঙ্গলে চা শ্রমিক ও পর্যটকদের সংঘর্ষ,রিসোর্টে ভাংচুর

নূর মোহাম্মদ সাগর শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ শ্রীমঙ্গলে চা বাগান নারী শ্রমিকদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা থেকে আসা পর্যটকদের সাথে চা শ্রমিকদের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। এ সময় একটি রিসোর্টে ভাংচুর করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর ২০২১) সকাল ১১ ঘটিকায় শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের রাধানগরে জেরিন টি গার্ডেনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এসময় ঘুরতে আসা পর্যটকদের ছবি তুলতে প্রথমে নিষেধ করে চা বাগানের মহিলা শ্রমিকরা পরে ইস্পাহানি মালিকানা জেরিন চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ আলী নিষেধ করেন। পর্যটকদের কর্তৃক চা শ্রমিক ও ডেপুটি ম্যানেজারকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। পরে চা বাগানের শ্রমিকরা পর্যটকদের উপর হামলা করে এবং একটি রিসোর্টে ভাংচুর চালায়।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রাধানগর এলাকার গ্র‍্যান্ড মুবিন রিসোর্টে এই ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় হামলায় দুই পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

আহতরা হলেন,জেরিন চা বাগানের শ্রমিক মামুন মিয়া (২৪), অঞ্জলী ব্যক্তি (২৫), ছন্দা সবর (৩৫), বিশ্বমনী রিকিয়াশন(২৬), পারুল বেগম(৩০), ভারতী সাওতাল (৪০), অনিতা গোয়ালা (৪০), আলো মনি বাড়ই (২৫) সৃতি সাংমা (৪০), মুসলিম মিয়া (২০) উত্তম গড়াই (২৫), আব্দুল কাদির (২৬), ইন্দ্রজিত দাস (২৫) ও ঢাকা থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতা মো. রাফি ঢাকা(২৯), মো রাসেল মিয়া (২৭)।

গ্র‍্যান্ড মুবিন রিসোর্ট কর্মকর্তা, স্টাফ ও স্থানীয় চা শ্রমিকদের সাথে কথা বললে জানা যায়।ঢাকা মহানগর (উত্তর) ছাত্রলীগ ও ঢাকার উত্তর ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের ১৮ নেতাকর্মী বুধবার ১ সেপ্টেম্বর রিসোর্টে উঠেছিলেন তারা সারারত গান বাজান উচ্চস্বরে যার কারণে বাগানের শ্রমিকরা ঘুমাতে অনেক সমস্যা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ২ সেপ্টেম্বর সাড়ে ১১টার দিকে তারা রির্সোটের পার্শ্বে জেরিন চা বাগানের ৯ নং সেকশসের কালাবন এলাকার ছবি তুলছিলেন। এ সময় ওই এলাকায় কর্মরত নারী চা শ্রমিকরা তাদের ছবি তুলতে নিষেধ করলে শ্রমিকদের সাথে নেতাকর্মীদের কথাকাটাকাটি হয়। পরে হামলার ঘটনাটি ঘটে।

রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, রিসোর্টের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ঘরের ভিতর রান্না করা খাবার পড়ে রয়েছে।
রিসোর্টের মালিক আব্দুল মুবিন বলেন, ঝামেলা যা হওয়ার হয়েছে। কিন্তু এভাবে আমার রিসোর্টে হামলা চালানো উচিত হয় নি। রিসোর্টের অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। আমার এই ক্ষতি কিভাবে পুরণ হবে ?

ইস্পাহানি মালিকানা জেরিন চা বাগান এর ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ আলী বলেন, ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলে যে ‘এটি সরকারি জায়গা, আমরা ছবি তুললে আপনাদের কি ? ডেপুটি ম্যানেজার বার বার তাদের নিষেধ করলে তারা উত্তেজিতভাবে কথা বলতে থাকে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে তারা ডেপুটি ম্যানেজারের গায়ে হাত তুলে। তাকে টেনে রিসোর্টে নিয়ে যেতে চাইলে চা বাগানের শ্রমিকরা বাধা দেয়। পর্যটকরা নারী শ্রমিক ও ম্যানেজার এর উপর হামলা করলে, শ্রমিকরা চা বাগানের পাগলা ঘন্টা বাজায়। এসময় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে রিসোর্টে যায়। পরে আমরা গিয়ে শ্রমিকদেরকে শান্ত করে বাগানে কাজে ফিরিয়ে এনেছি।
জানা গেছে আগন্তক পর্যটকরা ঢাকা উত্তর এলাকার ছাত্রলীগের নেতা কর্মী।
শ্রীমঙ্গল পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হুমায়ুন কবীর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন “খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানার পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা যে রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন সেটি একটু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ এ ব্যাপারে বাগান কর্তৃপক্ষ বা ছাত্রলীগ নেতারা কোন পক্ষই থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি।“
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক টুরিস্ট গাইড বলেন, “বাহিরের লোকেরা এখানে আসার পর ছবি তোলার জন্য পাগল হয়ে যায়, আগন্তকদের কাছে সব গুলো এলাকা নতুন নতুন বলে মনে হয়,তারা শুধু ছবি তুলতে মরিয়া অপর দিকে কিছু চা কর্মকর্তা বা শ্রমিকরা বাঁধা দিয়ে থাকে কখনো কখনো পর্যটকরা আমাদের কাছে অভিযোগ করে কিন্তু আমাদেরও কিছু করার নেই।বাগান কর্তৃপক্ষ কখনো কখনো অযথাই পর্যটকদের বাঁধা দিয়ে থাকে।তবে পর্যটকদের ও পরিবেশ পরিস্থিতি খেয়াল রাখা উচিৎ কেননা অনেক সময় শ্রমিক মায়েরা কাজ করার সময়ে কাপর চোপর ঠিক রাখতে পারে না তাই তাদের অনুমতি ছাড়া ছবি উঠানো উচিত নয়।“