শ্রীমঙ্গলে “আশরাফুল মাখলুকাত” ও “লাল জমিন” মঞ্চস্থ

    0
    417

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮এপ্রিল,সাজন আহমেদ রানাঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো নাট্যকার দেলোয়ার মামুনের রচনা ও নির্দেশনায় নাটক আশরাফুল মাখলুকাত,নাট্যকার মান্নান হীরার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিখ্যাত নাটক “লাল জমিন” এর ১৫০তম শো।
    শুক্রবার রাতে শ্রীমঙ্গল মহসীন অডিটরিয়ামে শ্রীমঙ্গল বিজয়ী থিয়েটারের ২০১৮- ১৯ সনের কার্যকরি কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে আয়োজিত নাট্য উৎসবে আশরাফুল মাখলুকাত নাটকটির বিষয় বস্তু ছিল মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব,আর এই নাটকের গল্পে দেখা যায় এক বখাটে নেশাগ্রস্ত গ্রামের যুবক নেশা করার টাকার জন্য তার মায়ের মাথা ফাটিয়ে টাকা নিয়ে যায়। কেরামতের চায়ের দোকানে করিম চাচা,বাউল,রবি সহ সকলের মাঝে আলাপ শুরু হয় তারা এই অন্যায়সহ মানুষের সৃষ্টি সকল অপর্কম,অমঙ্গল,অন্যায়-অত্যাচার,অবিচায়ের কথা বলে।

    কিন্তু প্রকারন্তরে সেই বখাটে যুবকের অন্যায় কর্মকান্ডগুলোই তাদের সামনে সংঘটিত হলে এক কেরামত চাচা ছাড়া কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেনি। পরবর্তীতে এই বখাটে ছেলের অপর্কম,অমঙ্গল,অন্যায় অত্যাচার,অবিচায়ের বিরুদ্ধে এক উদ্যমী তরুনের হস্তক্ষেপ সকলের চোখ খুলে দেয়। আশরাফুল মাখলুকাত অর্থাৎ, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে মানুষের অসাধ্য যে কিছুই নয় এই বিষয়টিই এই নাটকে প্রতিপাদ্য হিসেবে ফুটে ওঠেছে।
    লাল জমিন নাটকের একক অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী শ্রীমঙ্গলের বীরাঙ্গনা মনোয়ারা বেগমকে নিয়ে কেক কেটে লাল জমিন এর দেড়শত তম এ শো এর উদ্বোধন করেন। মান্নান হীরার লেখা ও সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় রচিত ১ ঘন্টা ১০ মিনিট ব্যাপ্তির এই নাটকে চৌদ্দ ছুঁই ছুঁই এক কিশোরীর জীবনযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধে ঘটে যাওয়া ভয়ানক সব ঘটনার প্রতিফলন ফুটে উঠে। মূলত কিশোরীর জমিন, নয় মাসে কিভাবে লাল জমিন হয়ে উঠে এটিই এই নাটকের প্রতিপাদ্য।

    নাটকের একটি দৃশ্য

    এই প্রদর্শনী আয়োজন প্রসঙ্গে বিজয়ী থিয়েটারের সভাপতি ও এই অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন মামুন জানান, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে উজ্জীবিত করতেই আমাদের এই আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এরকম একটি নাটকের আয়োজন করতে পেরে আমরা বিজয়ী থিয়েটার পরিবার গর্ববোধ করছি।”

    আয়োজিত অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব সাজন আহমেদ রানা জানান, “আমরা বদলে দিতে চাই এই অন্ধকার আকাশ। নতুন স্বপ্নের ঘুড়ি উড়াতে চাই আমাদের সাংস্কৃতিক চর্চায়। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, বিজয়ী থিয়েটায়ের এই আয়োজনে সাড়া দিয়েছেন শ্রীমঙ্গল তথা মৌলভীবাজার জেলাবাসী। দেশের সুস্থ্য সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশের জন্য এই ধরনের আয়োজন আরো বেশি করে হওয়া উচিত।”
    নাগরদোলা থিয়েটারের সহ-সভাপতি কবি জহিরুল মিঠু বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাই বিজয়ী থিয়েটারের কলাকুশলীদের এরকম একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করায়। এই ধরনের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক আমাদের তরুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে। আমি চাই এই ধরনের নাটক আরো বেশি বেশি ম স্থ হোক।”
    নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে লাল জমিন নাটকটির অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী জানান, “যেদিন থেকে চিন্তা করেছি লাল জমিন করবো, সেদিন থেকে আমার সমস্ত চিন্তা-চেতনা জুড়ে এই নাটকটির বিস্তৃতি। একে আমি ধারণ করি প্রতিমুহূর্তে। এটি আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। আমি ধন্যবাদ জানাই বিজয়ী থিয়েটারকে এই ধরনের একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য।”
    এ সময় বিজয়ী থিয়েটারের সদস্যবৃন্দ ছাড়াও মহসীন অডিটোরিয়ামের পুরো হলরুম কানায় কানায় পূর্ণ ছিলো সকলস্তরের সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমীদের পদচারণায়। কবি,সাহিত্যিক, ডাক্তার, নাট্যব্যক্তিত্বসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।
    নাটক শেষে বিজয়ী থিয়েটারের পক্ষ থেকে নাটকটির একশত প াশতম শো করতে পারায় এর সফল ও একক অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরীকে বিজয়ী থিয়েটারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় বিশেষ সম্মাননা।
    এর আগে একই মে শ্রীমঙ্গল বিজয়ী থিয়েটারের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় শ্রুতিময় বাশির সুর ও অভিষেক নৃত্য।