শেখ হাসিনাকে “পরম সৌভাগ্যবান” বললেন খালেদা জিয়া

    0
    268

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৭অক্টোবর,ডেস্ক নিউজঃ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ‘পরম সৌভাগ্যবান’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারমন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে দেয়া বক্তব্যের সময় তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সময়ে মামলা হয়েছে। কিন্তু, তিনি পরম সৌভাগ্যবান। তাকে আমার মতো কখনও এমন করে আদালতে হাজিরা দিতে হয়নি।’

    দুপুরে রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ-৫ আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দ্বিতীয় দিনের বক্তব্য তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

    খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি আইন-আদালত ও বিচার বিভাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই এই বয়সে নানা সমস্যার মধ্যেও যতদূর সম্ভব সশরীরে আদালতে হাজির থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার আইনজীবীরা আইনানুগভাবে মামলা মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। কিন্তু, অনিবার্য কারণে আদালতে উপস্থিত হতে না পারলেই আমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হচ্ছে। আমার পরিচয় দেশবাসী জানেন। আদালতেরও নিশ্চয় অজানা নয়।’

    আদালতকে তিনি বলেন, ‘আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের অন্যতম সফল অধিনায়ক। তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বাংলাদেশের প্রাক্তণ সেনাপ্রধান। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তক এবং জননির্বাচিত ও নন্দিত সফল রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাভাষী সৈনিকদের প্রতিরোধ যুদ্ধে উদ্ধুদ্ধ করার সুযোগ আমাকে ইতিহাস দিয়েছে এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি সে কর্তব্য পালন করেছি।’

    সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দুটি শিশু সন্তানসহ গ্রেপ্তার হয়ে এই রাজধানীতে আরও অনেকের সঙ্গে চরম অনিশ্চিত ও দুঃসহ বন্দিজীবন আমাকে কাটাতে হয়েছে। আমাদের বন্দি শিবিরের ওপর বোমা বর্ষণের সময়ে আল্লাহর অসীম রহমতে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছি। কেবল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে নয়, এরপর আরও অনেকবারই চরম বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও আল্লাহ আমাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

    তিনি বলেন, ‘প্রায় পৌনে নয় বছর স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাজপথে জনগণের কাতারে থেকে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে আপসহীন ভূমিকা রেখেছি। আমি এজন্য মানুষের অপরিসীম সমর্থন ও দোয়া পেয়েছি। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আসনে জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনে আমি তিন-তিনবার তাদের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি।’

    খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি জনগণের সেবা করার চেষ্টা করেছি, তাদের অর্পিত দায়িত্ব সাধ্য, সামর্থ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী পালন করে । দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার এবং মানুষকে দুর্দশামুক্ত করে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করেছি। উন্নয়নে, উৎপাদনে, শিক্ষায়, নারীশিক্ষায়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং সন্ত্রাস মুক্তির অভিযানে অবদান রেখে মানুষের জন্য স্বস্তি ও সম্ভাবনার পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করেছি।’

    তিনি আরও বলেন, ‘দেশ জাতি যখন সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে, অধিকার হারিয়েছে, বিপন্ন হয়েছে তখন আমিও নানাভাবে আক্রান্ত হয়েছি। আমার পরিবারও পড়েছে নানামুখী সংকটে। একইভাবে দেশ জাতি যখন বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে, জনগণ যখন বিজয়ী হয়েছে, তাদের হারানো অধিকার ফিরে পেয়েছে, তখন আমার নাগরিক অধিকারগুলোও সমুন্নত থেকেছে। জাতীয় স্বার্থ ও মর্যাদা যখন সমুন্নত হয়েছে, আইনের শাসন, সুবিচার, গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তখন ব্যক্তিগতভাবে আমিও সংকট, বিপদ, আক্রমণ, নির্যাতন ও বিপর্যয় থেকে মুক্ত হতে পেরেছি। বারবারই প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের ভাগ্যের সঙ্গে আমার নিজের ও পরিবারের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা হয়ে গেছে।’

    বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান।

    এদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সাক্ষীর জেরা ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার যুক্তিতর্ক এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার দিন ধার্য ছিল।
    খালেদা জিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে আদালতে তার বক্তব্য দেন। এরপর আদালত আগামী ২ নভেম্বর তাকে অসমাপ্ত বক্তব্য শেষ করার জন্য দিন ধার্য করেন।

    জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।

    ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

    এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল (ইকোনো কামাল), ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।