শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা’ যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’

    0
    231

    এবছরের বইমেলা উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ১৬ বার এ মেলার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেলা কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, আগামীতে আরও চারবার মেলার উদ্বোধন করে নতুন রেকর্ড স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

    জানা গেছে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এতবার (১৬ বার) কেউ বই মেলার উদ্বোধন করেননি। শুক্রবার বিকেলে সাড়ে ৪টায় অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবার নিয়ে বইমেলা ৪০ বছরে পর্দাপণ করল।

    মাসব্যাপী মেলার উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণ ও দর্শনার্থীর অসুবিধার জন্য না আসতে পারলেও মনটা বইমেলাতেই পড়ে থাকে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইমেলা কেবল বই কেনাবেচার জন্য নয়, বইমেলা বাঙালির ‘প্রাণের মেলা’। আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না, তখন এই মেলায় অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। আর এখন অনেকটা বন্দি জীবন, এখন ইচ্ছা থাকলেও আসা যায় না। আর আসলেও অন্যের অসুবিধা হয়। সত্যি কথাটা কি, মনটা পড়ে থাকে বইমেলায়।
    শেখ হাসিনা বলেন, যতই আমরা যান্ত্রিক হই না কেন, বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না। নতুন বইয়ের মলাট, বই শেলফে সাজিয়ে রাখা, বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে, আমরা সবসময় তা পেতে চাই।
    মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির আয়োজনে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৬ বারের মতো বইমেলার উদ্বোধন করে রেকর্ড গড়েন তিনি। জানা গেছে, রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এতবার (১৬ বার) কেউ বই মেলার উদ্বোধন করেননি। এবার নিয়ে বইমেলা ৪০ বছরে পর্দাপণ করল। এসময় আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
    প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছার পরই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের কাযর্ক্রম শুরু হয়। সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয়। এরপর ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
    উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন এবং তার প্রিয় কিছু বই ক্রয় করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
    প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, নতুন প্রজন্মকে দেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে হবে। কতটা ত্যাগ আর সংগ্রামের পথ পাড়ি দিলে একটি জাতি তার কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারে তা তাদের জানাতে হবে।
    তিনি বলেন, বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ আয়োজন বাঙালি জাতিসত্তা দাঁড় করাতে বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাঙালি ভাষা-সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, এ বছরই ২০১৯ সালের ১৭ই নভেম্বর একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিলাভের বিশ বছর পূর্তি হবে। ঊনসত্তরের উত্তাল গণঅভ্যুত্থান এবং বাংলার সংগ্রামী জনতার দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে অভিষিক্ত করারও ৫০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে এসব ঘটনার ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়লাভ- এসবের মাধ্যমেই বাঙালির স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা বাস্তবরূপ লাভ করেছে।
    মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারি জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় জাতি সাড়ম্বরে আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
    তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী পালনের মধ্যদিয়ে আমাদের দেশের ইতিহাসকে আমরা আরো স্বচ্ছভাবে দেশের মানুষের কাছে এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি। শুধু মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নয়, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়েও অনেকে নানা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন উল্লেখ করে জাতির পিতার কন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বই দুটিতে এসব বিভ্রান্তির অবসান হয়েছে বলে আমি মনে করি।
    তিনি বলেন, মোট ১৪টি খন্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ‘সিক্রেট ডক্যুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’। এসব দলিলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক অজানা তথ্য জানা যাবে।
    বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণার আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাওয়া চারজনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। কবিতায় কবি কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মনোরোগ চিকিৎসক মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যের জন্য গবেষক-কলামিস্ট আফসান চৌধুরী এবার এ পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে ২ লাখ টাকার চেক, ট্রফি এবং সনদপত্র বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
    অনুষ্ঠানে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অফ দা নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিসরীয় সাংবাদিক-গবেষক মুহসেন আল আরিসির লেখা ‘হাসিনা হাকাইক আসাতি’ বইটির একটি কপি এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। মুসলিম প্রধান একটি দেশে একজন নারী হয়ে নেতৃত্বে এসে শেখ হাসিনা কীভাবে মানুষের দিনবদলের রূপকার হয়ে উঠলেন, সেই বিবরণ এই বইয়ে তুলে ধরেছেন আরিসি। বইটির বাংলা তর্জমার শিরোনাম ‘শেখ হাসিনা: যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’।
    দুই মলাটের ভেতরে কাগুজে বইয়ের প্রতি ভালোবাসার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে এ বইকে ডিজিটাল দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার কথা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনলাইনে বই থাকলে তা বিশ্বের সবার কাছে দ্রুত পৌঁছে যায়। ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। দেশের স্বাধীনতা, রাষ্ট্রভাষা আর ইতিহাস নিয়ে নতুন প্রজন্মকে জানাতে আরও বেশি বই প্রকাশের আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
    অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদসবৃন্দ, সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী সহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বৃন্দ, বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্যবৃন্দ, বিদেশি কূটনিতিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

    প্রতিবছরের মতো এবারও মেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইয়ের দোকানগুলো। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।