শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবিতে ছাত্রসেনার স্মারকলিপি

    0
    251

    “জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে ২৫ শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৬জুনঃ আসন্ন ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখা আজ সকালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন এর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর সভাপতি ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ছাত্রনেতা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ ছাত্রনেতা গোলাম মোস্তাফা, অর্থ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মুহাম্মদ কাউছার খাঁনসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

    স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, বাজেট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারা বছর আমাদের জাতীয় জীবনের আয়-ব্যয় কেমন হবে তার প্রতিফলন হয় বাজেটে। আমাদের দেশের নাগরিকরা আগের চেয়ে অনেকবেশি সচেতন তাই রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতির বিষয় গুলো নিয়েও তাদের আগ্রহ বাড়ছে। বাজেট বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও প্রচুর। বাজেট উপস্থাপনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বিট্রিশ শাসনের শুরুর দিকে এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বাজেট উপস্থাপনার সূচনা করেছিলেন জেমস উইলসন। দেশ ভাগ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে বাজেট উপস্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মালিক মুহাম্মদ। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে সংসদে সর্ব প্রথম বাজেট পেশ করেন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত (১৯৭২-২০১৭) সর্বমোট ৪৬ বার বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার এবং শেষেরটি প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার। তবে প্রতিবছরই মানুষের দৃষ্টি থাকে শিক্ষাখাতে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর। কারণ এর ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে আগামীতে দেশের শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন-অনুন্নয়নের রূপরেখা।

    আমাদের পাশেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো গত ২/৩ দশকে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে আমূল পরিবর্তন, যা পরবর্তীতে তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দের অনুপাতে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দের আনুপাতিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আফ্রিকার অনগ্রসর অধিকাংশ দেশ যেমন- কেনিয়া, তানজানিয়া শিক্ষাখাতে বরাদ্দদেয় জাতীয় বাজটের ২০ ভাগের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান তাদের কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক বরাদ্দসহ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয় ২০ ভাগেরও বেশি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয় জাতীয় বাজেটের মাত্র ১৪ ভাগ।

    বর্তমান সরকার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৪ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যয়খাত হলো শিক্ষাখাত। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণে দেখা যায় এবারে শিক্ষা খাতের চেয়ে সরকার জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ খাতকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। গতবারও বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই খাতই ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। এদেশের সচেতন ছাত্রজনতার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে ইসলামী ছাত্রসেনা শুধুমাত্র শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছে। পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যৌক্তিক দাবি পেশ করছে।

    জনস্বার্থে নিম্নে স্মারকলিপির হুবহু তুলে ধরা হলঃ

    বরাবর,
    মাননীয় অর্থমন্ত্রী
    বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা।

    মাধ্যমঃ মাননীয় জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম জেলা।

    বিষয়: ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবিতে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার বাজেট প্রস্তাবনা।

    বাজেট আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সারা বছর আমাদের জাতীয় জীবনের আয়-ব্যয় কেমন হবে তার প্রতিফলন হয় বাজেটে। আমাদের দেশের নাগরিকরা আগের চেয়ে অনেকবেশি সচেতন তাই রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতির বিষয় গুলো নিয়েও তাদের আগ্রহ বাড়ছে। বাজেট বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও প্রচুর। বাজেট উপস্থাপনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- বিট্রিশ শাসনের শুরুর দিকে এই উপমহাদেশে সর্বপ্রথম বাজেট উপস্থাপনার সূচনা করেছিলেন জেমস উইলসন। দেশ ভাগ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে বাজেট উপস্থাপন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী মালিক মুহাম্মদ। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে সংসদে সর্ব প্রথম বাজেট পেশ করেন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত (১৯৭২-২০১৭) সর্বমোট ৪৬ বার বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার এবং শেষেরটি প্রায় ৪ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকার। তবে প্রতিবছরই মানুষের দৃষ্টি থাকে শিক্ষা খাতে প্রস্তাবিত বাজেটের উপর। কারণ এর উপরই অনেকাংশে নির্ভর করে আগামীতে দেশের শিক্ষা খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন-অনুন্নয়নের রূপরেখা।

    বর্তমান সরকার ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৪লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকার দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই বাজেটের সবচেয়ে গুস্তত্বপূর্ণ ব্যয়খাত হলো শিক্ষাখাত। কিন্তু পত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণে দেখা যায় এবারে শিক্ষা খাতের চেয়ে সরকার জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ খাতকে বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। গতবারও বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুস্তত্বপূর্ণ এই খাতই ছিল সবচেয়ে অবহেলিত।অথচ শিক্ষা হলো রাষ্ট্রের সকল আর্থ-সামাজিক উন্নতির চাবিকাঠি। সেজন্য শিক্ষা হলো রাষ্ট্রের সর্বোত্তম বিনিয়োগ। শিক্ষা কেন রাষ্ট্রের জন্য সর্বোত্তম বিনিয়োগ সেটা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরপরই ১৯৯৯ সালের ২ জানুয়ারি দিল্লিতে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে অম্যর্ত্য সেন বলেছিলেন: “ঊষবসবহঃধৎু ঊফঁপধঃরড়হ রং ধ পবহঃৎধষ পড়সঢ়ড়হবহঃ ড়ভ ধহু শরহফ ড়ভ বপড়হড়সরপ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ ……… ঊপড়হড়সরপ ঢ়ড়বিৎং, ংঁপয ধং ঔধঢ়ধহ যধফ যরময ষবাবষং ড়ভ বফঁপধঃরড়হ নবভড়ৎব ঃযবু ধফাধহপবফ ঃড়ধিৎফং রহফঁংঃৎরধষ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ.” (রয়টার, ২ জানুয়ারি ৯৯)
    রবীন্দ্রনাথ প্রায় শত বছর আগে আরো একধাপ এগিয়ে বলেছিলেন “আমাদের সকল সমস্যার সবচেয়ে বড় রাস্তা হচ্ছে শিক্ষা।” (রাশিয়ার চিঠি, পৃঃ ৫৫৫, দশমখন্ড)। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব কাগজে-কলমে হাজারকাব্য করে বলা হলেও শিক্ষা ব্যবস্থায় পশ্চাৎপদ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখনো অন্যতম। অথচ আমাদের পাশেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো গত ২/৩দশকে তাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এনেছে আমূল পরিবর্তন যা পরবর্তীতে তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। বিগত অর্থ বছরগুলোর বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-
    ২০০৯-১০ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ ছিল ১৪.১৮ শতাংশ। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ১১.২৯ শতাংশে। ২০০৯-১০
    অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে ১০১.৩১ শতাংশ কিন্তু ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে শিক্ষা বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ৬০.২১ শতাংশ। এই অসম প্রবৃদ্ধির ফলে বাজেটে শিক্ষার আপেক্ষিক গুস্তত্ব ১৪.১৮ শতাংশ থেকে ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে ২০১৩-১৪ সালে তা ১১.২৯ শতাংশে পরিণত হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল আনুপাতিক হারে অনেক কম। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ১৩.১ শতাংশ এবং ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১.৬ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪.৭ শতাংশ। পৃথিবীর অন্যকোন রাষ্ট্রে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ নিয়ে এত বেশী অবহেলা-উপেক্ষা চোখে পড়ে না। এ এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দের অনুপাতে বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের বরাদ্দের আনুপাতিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আফ্রিকার অনগ্রসর অধিকাংশ দেশ যেমন- কেনিয়া, তানজানিয়া শিক্ষাখাতে বরাদ্দদেয় জাতীয় বাজটের ২০ ভাগের বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দেশ যেমন- ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান তাদের কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক বরাদ্দসহ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয় ২০ ভাগেরও বেশি। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয় জাতীয় বাজেটের মাত্র ১৪ ভাগ।

    শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের দাবি বিবেচনায় রাখে। এখানে লক্ষ করা যায়, শিক্ষা বাজেটের সাথে প্রযুক্তি,খেলাধুলা,স্বা¯হ্য,ধর্ম সহ নানা বিষয় জুড়ে দেওয়া হয়। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন বাজেটে সামরিক বাহিনী পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের বারদ্দও ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ২০১১-১৩ অর্থবছরে শিক্ষার সাথে প্রযুক্তি এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তির সাথে স্বাস্থখাতকেও জুড়ে দেয়া হয়েছিল। ফলে বরাদ্দকৃত স্বল্প অর্থ টুকু ভাগাভাগি হয়ে যায় অন্যান্য খাতের সাথে।

    তাই এদেশের সচেতন ছাত্রজনতার প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা শুধুমাত্র শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবী জানানোর পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে নিন্মোক্ত প্রস্তাবনা ও কিছু যৌক্তক দাবী পেশ করছে।

    প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা :
    ১. বর্তমানে দেশে এক লক্ষ তেত্রিশ হাজার নয় শত একটি সরকারী, রেজিঃ সরকারী ও নন রেজিঃ প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলে ছাত্র শিক্ষক অনুপাত ৪৩ঃ১। তা অর্ধেকে নিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন অনেক সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ। তাই এই সংকট নিরসনে শিক্ষক চাহিদা বাড়াতে হবে।
    ২. দেশের প্রায় ৩ লক্ষ মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনগনকে আধুনিক পদ্ধতির সমন্বয়ে দ্বীনি তালিম দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তাদের মাধ্যমে ‘মসজিদ ভিত্তিক’ প্রাথমিক বিদ্যালয় বা মক্তব পরিচালনা করা যায়। এই ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ইমাম মুয়াজ্জিনরা অবসরপ্রাপ্ত হলে তাদেরকে ‘ইমাম মুয়াজ্জিন ট্রাষ্ট’ থেকে আর্থিক সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
    ৩. পথশিশু, সুবিধা বি ত দুর্গম এলাকার পাহাড়ী অধিবাসীদের শিক্ষিত করে তুলতে বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে।
    ৪. প্রত্যেক থানায় আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।
    ৫. পাঠ্য পুস্তক হতে ইসলাম বিরোধী সব গল্প-প্রবন্ধ-উপন্যাস অপসারণ করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ক্ষেত্রে ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার প্রতি জোর তাগিদ দিতে হবে।
    ৬. প্রতিটি উপজেলায় ন্যূনতম একটি মাধ্যমিক স্কুলকে সরকারিকরণ করতে হবে।
    ৭. সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আই সি টি নির্ভর ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করতে হবে।

    মাদ্ররাসা পর্যায়ে আমাদের প্রস্তাবনা :
    ১. প্রত্যেক মাদ্রাসায় কম্পিউটার বরাদ্দ সহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে।
    ২. বিভাগ ভিত্তিক মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
    ৩. মাদ্রাসা গুলোতে সহকারী শিক্ষক ও সহকারী মাওলানা পদে বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে।

    বিজ্ঞান -প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষা :
    ১. কারিগরি শিক্ষা লাভকারী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য বিশেষয়িত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
    ২. ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী ধারীদেরকে চাকরিক্ষেত্রে প্রাপ্য সম্মানের ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৩. প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তে কারিগরি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘কো-অপারেটিভ এন্ড প্রোডাক্টিভ এডুকেশন সিষ্টেম’ চালু করতে হবে। যাতে করে এক সাথে শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকার অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্ভিতা অর্জন করতে পারে।
    ৪. মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। তা ছাড়া দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কারিগরি বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো সহ এর অবকাঠামোগত উন্নতি সাধনে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে পর্যাপ্ত বাজেট থাকতে হবে।
    ৫. প্রতিটি উপজেলায় একটি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় গ্লার্লস টেকনিক্যাল স্কুল, নতুন প াশটি উপজেলায় পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট, সববিভাগীয় শহরে মহিলা পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটসহ সববিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন করতে হবে।

    বিশ্ববিদ্যালয় :
    ১. শিক্ষকতা পেশাকে ব্যবসায়ীকরণের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ থাকতে হবে।
    ২. রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
    ৩. বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে যথার্থ গবেষণা কর্ম সম্পাদন করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের জন্য গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। এজন্য চাই প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ।
    ৪. নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, যুগোপযুগি বিভাগ সৃষ্টি ও আসনসংখ্যা বাড়াতে হবে।
    ৫. তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
    ৬. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা বিভাগ যুক্ত করা সহ ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার উপর পাঠদান বাধ্যতামূলক করতে হবে।

    সামগ্রিক প্রস্তাবনা
    বাজেট হচ্ছে একটি সরকারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার মৌলিক রূপরেখা এবং একটি প্রজ্ঞাবান সরকার বাজেট প্রণয়নের সময় সমাজের নানা চ্যুতি- বিচ্যুতি, অতীত ও বর্তমানের কার্যকারণ এবং ভবিষ্যতের জন্য সংশোধনমূলক বাস্তবসম্মত একটি কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে, যার প্রতিচ্ছবি বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়। শিক্ষাখাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ দেখে মনে হচ্ছে, তারা সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাখাতে যে নৈরাশ্যজনক পরিস্থিতি বিরাজমান সে সম্পর্কে সম্যক অবগত নন অথবা তারা এ পরিস্থিতিকেই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছেন, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষাখাতে তুলনামূলকভাবে বাজেট না বাড়ানো, শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে গড়িমসি করা, সারা দেশে প্রশ্ন ফাঁস, কৃত্রিম মেধাবী তৈরির কর্মযজ্ঞ এবং সর্বোপরি সুশীল সমাজের প্রস্তাবনা অগ্রাহ্য করে একে শিক্ষাখাতে অগ্রগতির চিহ্ন হিসেবে দাবি করা সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেই দেখা হবে। কার কাছে কতটুকু চাইতে হবে তা নির্ধারণ করতে পারাটা জীবনের একটি বড় শিক্ষা। গত বছরের অভিজ্ঞতায় তাই সরকার ও অর্থমন্ত্রীর কাছে আগ্রাসী শিক্ষা-বাজেট আমরা আর আশা করছি না। কিন্তু সরকার, অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে এ বছরের বাজেট ও আগামী দিনের কথা মাথায় রেখে আমরা চারটি অনুরোধ করতে চাই।

    এক. এ বাজেটে যতটুকু বরাদ্দ করা হয়েছে, সেখানে অপচয় যথাসম্ভব কমিয়ে পুরো অর্থ যেন যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই কর্মকৌশল ঠিক করে সে অনুযায়ী বাজেট বাস্তবায়ন করা হোক।
    দুই. প্রতিবছর অন্তত ০.৫ শতাংশ হারে শিক্ষাখাতে জিডিপির বরাদ্দ বাড়ানো হোক।
    তিন. শিক্ষাখাতের বাজেটের সঙ্গে অন্য কোনো খাত যুক্ত না করা হোক এবং শিক্ষাখাতের মধ্যে গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হোক।
    চার. শিক্ষাখাতে দুর্নীতি কমিয়ে বাজেটকে অর্থবহভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

    এছাড়াও কিছু যৌক্তিক দাবী পেশ করছি –
    ১. শিক্ষার প্রত্যেক স্তর ও ক্ষেত্রে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
    ২. মোবাইল ব্যবহারে সরকারি নীতিমালার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আই সি টি আইন ও শাস্তির বিধান সম্পর্কিত সচেতনতা মূলক ক্যাম্পেইনের ব্যবস্থা করতে হবে।
    ৩. যে সব বেসরকারি শিক্ষক অবসরে গেছেন তারা এখনো অবসর ভাতা পাননি। তাদেরকে অবিলম্বে অবসর ভাতা প্রদান করে অনিশ্চিয়তা থেকে মুক্তি দিতে হবে।
    ৪. নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও ভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে।
    ৭. শুধুমাত্র শিক্ষাখাতে ২৫% এবং জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

    টেকসই উন্নতি করতে হলে শিক্ষা- বাজেট বাড়ানোর বিকল্প নেই। এটি আমাদের কথা নয়, অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের কথা। সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উন্নতির জন্য অনেক কথা বলেন, আমরা প্রতিবছর সেগুলো বিশ্বাস করি। কিন্তু শিক্ষা-বাজেটে সরকারের এসব কথার প্রতিফলন না থাকায় বিশ্বাসগুলো প্রায়ই ঠুনকো হয়ে যেতে থাকে।

    বিগত ২০১৭-২০১৮ সালে বাজেটে শিক্ষা নিয়ে তেমন কোন নতুন ঘোষণা না থাকায় দেশের সাধারণ জনগণ হতাশ হয়েছিল। অথচ উন্নত ও উন্নয়শীল সবদেশেই বর্তমানে শিক্ষা খাতকে অগ্রধিকার দিয়ে আসছে। এমনকি অফ্রিকার কঙ্গো ও উগান্ডার মতো দরিদ্র দেশগুলোও শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয় তাদের মোট বাজেটের ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি (শিক্ষা বুলেটিন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়)। কিন্তু স্বাধীনতার পর এ যাবৎ ৪৬ বার বাজেট ঘোষণা করা হলেও আমরা শিক্ষা খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ২০ শতাংশ পর্যন্ত ও নিয়ে যেতে পারিনি।

    তাই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি এবং বিশ্বমানের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী, শিক্ষা ক্ষেত্রে জাতীয় ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরের বাজেটে শুধু শিক্ষা খাতে ২৫% বরাদ্দ সহ শিক্ষা খাত নিয়ে কিছু যৌক্তিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে। আমরা আশা করি যদি প্রস্তাবিত সুপারিশমালা গুলো বিবেচনা করা হয় তাহলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধিত হবে।

    অচিরেই বিশ্ব দরবারে আমরা একটি শিক্ষিত ও উন্নত জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাব বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আশা করি সরকার আগামী বাজেটে এই সুপারিশগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে এবং বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।