শহীদ ’সিরাজ লেক’কে ’নীলাদ্রী’ ডিসি পার্ক নামকরণে ক্ষোভ

    0
    294

    “সিরাজ লেক”টি কখনো বাংলার কাশ্মীর,কখনো নিলাদ্রী,কখনো সীমান্ত লেক,কখনো পরিতাক্ত চুনাপাথর কোয়ারী হিসেবে সমাদৃত!

    আমারসিলেটটুয়েন্টিফোরডটকম,২৪জুলাই,তাহিরপুর(সুনামগঞ্জ)সংবাদদাতা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা সীমান্তে শহীদ “সিরাজ লেক” কে ’নীলাদ্রী’ ডিসি পার্ক নামকরনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় জনসাধারন ও মুক্তিযোদ্ধাগন।

    ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মেঘালয় পাহাড় ঘেষা তাহিরপুর উপজেলায় উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে অবস্থিত এ দৃষ্টি নন্দন লেকটির। ২১ জুলাই শুক্রবার বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এর অর্থায়নে ’নীলাদ্রি’ ডিসি পার্ক এর উন্নয়ন কাজের ভিত্তি প্রস্তর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাাম। ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেইসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে জেলা ও স্থানীয় পর্যায়ে নামকরন নিয়ে দেখা যায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

    এনিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও জনগন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ,লেকটির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িত। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এ লেকটির নামকরন করা হয়েছে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে। এতদিন গুটি কয়েক পর্যটক লেকটির নাম নীলাদ্রী দিলেও এবার খোদ প্রশাসন লেকটির নাম নীলাদ্রী ডিসি পার্ক নামকরণ করে তাহিরপুরে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে।

    লেকটি ২০১৩সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে লেকটি কখনো বাংলার কাশ্মীর,কখনো নিলাদ্রী,কখনো সীমান্ত লেক,কখনো পরিতাক্ত চুনাপাথর কোয়ারী নামে পরিচয় পায় শুধুমাত্র পর্যটকদের কাছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড তাহিরপুর উপজেলার একাধিক স্থানে পর্যটন কেন্দ্র তৈরী করার উদ্যোগ গ্রহন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ট্যাকেরঘাট খনিজ প্রকল্প এলাকায় লেকটির ভাইরাল নাম ’নীলাদ্রীর’ সাথে মিল রেখে”নীলাদ্রী” ডিসি পার্ক নাম করন করে আনুষ্টানিক ভাবে ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

    আনুষ্ঠানিক ভাবে নীলাদ্রী ডিসি পার্ক নাম করনের পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। সাদেক আলী,আপু তালুকদার সহ স্থানীয় লোকজন ও সুনামগঞ্জ জেলার সচেতন মহল বলেন,লেকটির নামকরণ করা হয়েছিল একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে ”শহীদ সিরাজ লেক’। স্থানীয় কৃষ্টি,সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে লেকটির নামকরণ করা হলে তাহিরপুরের ঐতিহ্য বহন করতো। বর্তমানে এই কাল্পনিক নীলাদ্রি নামটি বড় বেমানান। নিজস্ব স্বকীয়তাও ইতিহাস ঠিক রেখে এই লেকটির নাম নামকরণ করা হলে তাহিরপুর তথা সুনামগঞ্জের সুনাম আরো বাড়বে তাহিরপুর উপজেলাও আরো পরিচিতি পাবে।

    তাহিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল ইসলাম বলেন,এ লেকটির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক স্মৃতি বিজড়িত। একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের লেকটির নাম করন করা হয়েছিল শহীদ সিরাজ লেক। আমরা চাই পার্কটিও শহীদ সিরাজের নামেই হোক।

    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,তাহিরপুরের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন ও সমৃদ্ধ । আমরা চাই তাহিরপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সংগতি রেখে এই পার্কটির নামকরন করা হোক।

    সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাবিরুল ইসলাম বলেন,এর আগে এই “লেক”টির নামকরণের বিষয়ে আমার জানা ছিলনা। উদ্বোধনের সময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও এলাকার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কেউ আমাকে এই বিষয়টি জানাননি যে এটি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করা হয়েছিল।আমরা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিতে চাই সে চিন্তা থেকেই খনিজ প্রকল্পের পুরো এলাকাটাকে’ সিরাজ ভ্যালী ’নামে নামকরন করে দেব।