শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়তে দৃঢ় অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর

    0
    229

    আমারসিলেট 24ডটকম , সেপ্টেম্বর  : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপপ্রচার আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্ঠি করে একটি মহল দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। যে কোনো মূল্যে তাদের অপপ্রচার আর বিভ্রান্তিকে রুকে জনগণের সাংবিধানিক ও ভোটাধিকার রক্ষা করবেন বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন । নবগঠিত ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের পতাকা উত্তোলনের পর আজ ঢাকা সেনানিবাসের ২০ বীর-এর প্রশিক্ষণ মাঠে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রধানমন্ত্রীর দরবারে ভাষণকালে তিনি একথা বলেন। “দরবারে” সেনাবাহিনী প্রধান ইকবাল করিম ভুঁইয়াও বক্তৃতা করেন। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে নবগঠিত সদর দপ্তর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো।
    প্রধানমন্ত্রী একটি দক্ষ, সুশৃংখল, সুসজ্জিত ও শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতিক হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে তার সরকারের সুস্পষ্ট ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সম্ভব সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
    পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন, ৫৮ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ৩৪ বাংলাদেশ আর্টিলারি রেজিমেন্টকে নিয়ে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। এরআগে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসস্থ এডহক আর্মি এভিয়েশন গ্রুপের হ্যাংগারে এক অনুষ্ঠানে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেডের পতাকা উত্তোলন করেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৫৮ ইস্টবেঙ্গলের পতাকা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ৩৪ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টের পতাকা এবং সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুঁইয়া ২০ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্টাকশন ব্যাটেলিয়নের পতাকা উত্তোলন করেন।
    মন্ত্রিসভার সদস্য, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারী, সংসদ সদস্য এবং পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। দরবারে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল-২০০৩-এর আলোকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য নতুন ইনফ্যান্টারি, আর্মার, আর্টেলারি, বিমান প্রতিরক্ষা ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর ভিত রচনা এবং প্রতিরক্ষা নীতি ১৯৭৪ প্রণয়ন করেন। তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মেয়াদে সেনাবাহিনী সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বেশ কয়েকটি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি এবং একে বিশ্বমানের আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পুনর্র্নিমাণ কর্মসূচি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের কল্যাণে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে সেনাবাহিনীর সদস্যের চিকিৎসার জন্য অনুদানের পরিমাণ ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সিপাহী থেকে মেজর পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের চাকরির বয়সসীমা ২ বছর বৃদ্ধি করার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেসিওকে প্রথম শ্রেণীর এবং সার্জেন্টকে দ্বিতীয় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নত খাবার ও দুপুরে রুটির বদলে ভাত সরবরাহসহ সেনাবাহিনীর সদস্যদের রেশনের স্কেল বাড়ানো হয়েছে। পরিবার ছাড়া সিপাহীদের, পরিবার নিয়ে বসবাসকারী সিপাহীদের সমান রেশন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
    শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর থেকে সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরে নারীদের ভর্তির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া ওষুধ সরবরাহের জন্য অতি সম্প্রতি মেডিকেল ডিসপেনসারী চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার প্রশিক্ষণ কাজে ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে চর কেরিংয়ে ৯ হাজার একর জমি বরাদ্দের জন্য ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরদিকে চরজাহাজ্জিয়া হস্তান্তরের কাজ চলছে। তিনি আরও বলেন, এর পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস নির্মাণের জন্য রামুতে ৬৫৭ দশমিক ১৭ একর এবং রুমাতে ৯৯৭ একর জমি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাগত দক্ষতার কারণেই সেনাবাহিনীকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ পর্যবেক্ষণ এবং অন্যান্য কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার সব সময় জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চায়, কখনই তাদের শাসক হতে চায় না। তিনি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।