লোকালয় থেকে ২ টি গন্ধ গোকূল আটকঃঅধরা আরও ৪ টি

    0
    255

    শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ দিন রাতের বিশেষ বিশেষ সময়ে বাড়ির লোকদের নাকে হঠাৎ ভেসে আসতো পোলাওয়ের চালের গন্ধ। মনে হতো কোথাও কালিজিরা, চিনিগুঁড়া ধান দিয়ে পোলাও রান্না হচ্ছে। কিন্তু আশেপাশের ঘর বাড়িতে খবর নিয়ে জানা যেত পোলাওয়ের চাল কিংবা পোলাও রান্না হচ্ছে না। বাড়ির লোকেদের অনেকে ভৌতিক চিন্তা-ভাবনা কল্পনায় আসতে থাকলো তার কয়েকদিন পরই তারা পোলাও চালের রহস্য খোঁজে পেল। ভৌতিক কোন ঘটনা নয় পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ ছড়াতো একটি প্রাণী। তার নাম হচ্ছে গন্ধগোকুল। এরকম গন্ধ ছড়ায় বলেই এদের এমন নামকরণ করা হয়েছে। প্রাণীটিকে দেখার পর বাড়ির লোকেদের ভৌতিক ভয় চলে গেলে প্রাণীগুলোর উপস্থিতি সকলকে অসস্তিতে ফেলে দিচ্ছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কলেজ রোডস্থ একটি বাড়িতে গিয়ে এমন গল্পই শুনা যায়।

    পরিবারের লোকজন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘরের ছাদের সিলিং এ বাসা বেধে একটি গন্ধগকূল পরিবার অনেক দিন থেকেই আছে। সেখানে রয়েছে বড় দুটি গন্ধগকুল ও চারটি বাচ্চা। সারা দিন-রাত বাড়ির সিলিং এর ভিতর ছুটাছুটি করে বেড়ায় এই গন্ধগকুল গুলো। তাদের কারনে বাড়িতে থাকাটা একটা অস্বস্থিতে পরিনত হয়েছে বাড়ির লোকদের। মাঝে মাঝে বাশ দিয়ে সিলিং এ শব্দ করলে তারা কিছুক্ষণ শান্ত থাকে কিন্তু পরক্ষনেই আবার ছুটাছুটি করে। তাছাড়া বাড়িতে থাকা ছোট শিশুরা এই গন্ধগোকুল গুলোর জন্য সারক্ষন ভয়ে থাকে।

    মো. শরিফ নামে এই বাড়ির একজন সদস্য এ প্রতিনিধিকে জানান, গন্ধগোকূল গুলো বনে থাকার কথা থাকলেও তাদের বাড়িতে বাসা বেধেছে। এই গন্ধগোকূল গুলোর যন্ত্রনায় বাড়িতে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক সময় এই গন্ধগকুূল গুলো টয়লেট করে পুরো ঘর বাড়ি নোংরা করে দিচ্ছে। এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার গন্ধগকুলের দুটি ছোট বাচ্চাকে আটক করে খাঁচায় রেখেছি। এখন বড়গুলোকে ধরতে পারলে বন বিভাগ কিংবা বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বনে ছেড়ে দিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো। বন্যপ্রাণীদের তো মারতে পারি না,তাই কষ্ট হলেও তাদের সাথেই বাস করছি।

    শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব বলেন, আমরা ঐ বাড়িতে গিয়েছি। গন্ধগোকূল গুলো টিনের ছাদের নিচের সিলিং এর ভিতর। সেখান থেকে তাদের ধরাটা সহজ নয়। যেহেতু প্রাণীগুলো সুস্থ ও স্বাভাবিক তাদের ধরতে গেলেই পালিয়ে যায়। বাড়ির সদস্যরা গন্ধগোকূলের দুটি বাচ্চা ধরে খাঁচায় রেখেছেন। আমরা চেষ্ঠা করছি এই বাচ্চার মাধ্যমে বড় দুটি গন্ধগোকূলকে উদ্ধার করে বনে নিয়ে ছেড়ে দেবার।

    বাংলাদেশ বন্যপ্রানী সেবা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সিতেশ রঞ্জন দেব প্রথম আলোকে বলেন, গন্ধগোকুল ঠরাবৎৎরফধব গোত্রের নিশাচর ও স্তন্যপায়ী প্রাণী। শরীরটা বিড়ালের ন্যায়, লেজ লম্বা ও মুখ দেখতে বেজি অথবা ভোঁদরের মতো। পশম ধুসর বা বাদামী বর্ণে হয়ে থাকে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের রংয়ের সারি ও কালো ছোপ ছোপ দাগ থাকতে পারে। লম্বায় ১৬-৩৪ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। লেজের দৈর্ঘ্য ৫-২৬ ইঞ্চি হয়। সাধারণত ১.৫-১১ কিলোগ্রাম পর্যন্ত ওজনের হতে পারে এরা। বাংলাদেশে ৫টি প্রজাতি গন্ধগোকুল রয়েছে, যার মধ্যে ৩টি বিলুপ্তির পথে।

    এরা একাকী নির্জন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। সাধারণত গভীর রাতে শিকার এবং খাবার সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আসে। নিশাচর এ প্রাণীটি ভূমিতেই বেশি বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করে। গন্ধগোকুল সর্বভুক, কিন্তু প্রাথমিকভাবে মাংসাশী প্রাণী। ইঁদুর, আম, কফি বীজ, আনারস, তরমুজ, কলা, ছোট পাখি, টিকটিকি, ছোট সাপ, ব্যাঙ, শামুক ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রয়েছে।