লাউয়াছড়া উদ্যানে টিলায় টিলায় চলছে বৃক্ষ নিধন

    0
    214

    আমারসিলেট24ডটকম,২১ডিসেম্বর,শাব্বিরএলাহীমৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের টিলায় টিলায় চলছে বৃক্ষ নিধন। বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত এ বনাঞ্চল স্থানীয় কিছু লোভী মানুষের কাছে যেন সোনার খনি। গাছ কাটলেই পকেট ভরে ওঠে কাঁচা টাকায়। তাই তারা মেতে ওঠেন গাছ কাটার মহোৎসবে। রক্ষকরা দেখেও না দেখার ভান করেন নয়তো নিজেই শামিল হন এ উৎসবে। বেপরোয়া গাছ কাটার ফলে অনেকটাই হুমকির মুখে ৯০ বছরে গড়ে ওঠা লাউয়াছড়া। প্রায়শই লাউয়াছড়ার বয়সী বৃক্ষের গায়ে করাতের আঁচড় পড়ে। বাইরে থেকে দেখে বোঝা না গেলেও ভেতরে ঢুকলেই এ অরণ্যের গায়ে ক্ষত চিহুগুলো চোখে পড়ে। লোভী মানুষের নির্মমতা জানান দেয় ভেতরে পড়ে থাকা কাটা গাছের গুঁড়িগুলো।

    সবুজের সমারোহ আর বিচিত্র প্রাণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মৌলভীবাজার রেঞ্জের আওতাধীন কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া বন বিটকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। তবে বন হিসেবে লাউয়াছড়ার যাত্রা শুরু বিশ শতকের প্রথম ভাগে। ১৯২৫ সালে কমলগঞ্জের ভানুগাছে তৎকালীন বৃটিশ সরকার এ বনায়নের সূচনা করে। তবে অরণ্যের প্রাণ বৃক্ষরাজি বিপন্ন হয়ে পড়ায় হুমকির মুখে পড়েছে পুরো লাউয়াছড়াই। জাতীয় ই তথ্যকোষের হিসাবে লাউয়াছড়ার জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে আগর, সেগুন, চাপালিশ, জারুল, আকাশমণি, আওয়াল, লোহাকাঠ সহ ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে।

    তবে সরজমিন দেখে এলে যে কারও মনে হবে হিসাবটা নতুন করে মেলাতে হবে। বনের পথে অনেক দূর পাড়ি দিয়েও এর বাসিন্দাদের সাক্ষাৎ মেলে না। অরণ্যে ঢুকলেই দর্শনার্থীদের যে স্বাগত জানাতো লাউয়াছড়ার অন্যতম আকর্ষণ সে উল্লুকের দেখাও এখন আর সহজে মেলে না।

    গাছও যে কমছে তার প্রমাণ অরণ্যজুড়ে সারি সারি পড়ে থাকা কাটা গাছের গুঁড়ি। নভেম্বরের প্রথম ভাগেই উদ্যানের মাগুরছড়ার পশ্চিম এলাকা, তেরঘরি, ফুট ট্রেইল, ডরমিটরি এলাকা, জারুলি লুংড়া, রিং-ভাঙা, বড়খলা, নার্সারি, অক্সিডেন্টাল এলাকা, জানকিছড়া, ফাটাবট, জোড়া সাইন বোর্ড, তলউনী, গোলটিলা, ছনখলা, বাঘমারা, টিকিট কাউন্টারের সামনের ১ নম্বর নামে পরিচিত এলাকা, গাড়ি ভাঙা ও এর আশপাশ এলাকা থেকে সেগুন, আগর, চাপালিশ, আওয়ালসহ বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ কেটে পাচার করা হয়েছে।

    স্থানীয়রা জানান, ক্ষমতার পালা বদলে যে ভাবে নেতারা দল বদল করেন লাউয়াছড়া বনের গাছ পাচারেও সে রকম দল বদল হয়ে থাকে। বর্তমানে বনের গাছ পাচারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চলে ওই বলয়ের লোকজনের দাপটই বেশি। সাথে রয়েছে সাবেক চিফ হুইপ  এর নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চলে সেই বলয়ের অপর একটি দল। সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চলছে ওই বলয়ের গাছ চোর সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের সাবেক দুই ছাত্র নেতা এমন অভিযোগ ও করছে একটি সুত্র।

    সুত্রের আরও অভিযোগ অপর দিকে সাবেক চিফ হুইপ এর নাম ভাঙ্গিয়ে যারা চলছে ওই বলয়ের রয়েছেন স্থানীয়  আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় চলা এক নেতার সন্তান ও কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুই আওয়ামী লীগ নেতা। বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই লাউয়াছড়া থেকে কেটে নেয়া হয় বনের বাছাই করা গাছগুলো।

    স্থানীয়রা বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষীদের যোগসাজশেই পাচার হচ্ছে শ’ শ’ কোটি টাকার গাছ। এমন অভিযোগে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট বিট ও রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও নিধনযজ্ঞ থেমে থাকেনি।

    অল্প সময় বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয় গাছ পাচারের প্রতিযোগিতা। কাঠ পাচারের মাধ্যমে নিরাপদে অধিকতর ‘মুনাফা’ থাকায় লাউয়াছড়া বন বিটে পোস্টিংয়ের জন্য প্রতিযোগিতাও জমে ওঠে। বনের পরিবেশ রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি কাজ করছে ক্রেল নামের একটি সংগঠন।

    যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে তারা বনের সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করছে। বনরক্ষায় তারা স্থানীয় অধিবাসীদের প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গড়ে দিয়েছে সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি (সিএমসি)।

    সিএমসি’র তত্ত্বাবধানে কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপ (সিপিজি) নামে একটি টহল দল বাগান প্রহরার কাজ করছে। অভিযোগ, এদের অনেকেই এলাকার চিহ্নিত গাছচোর ও পাচারকারী দলের সদস্য।

    লাউয়াছড়া বন বিট কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন বলেন গাছচোরদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান, বনজুড়ে সরকারি পাহারাদার রয়েছে ৩ জন আর দু’টি ক্যাম্পে আছে আরও ৩ জন। এর বাইরে ২৪-২৫ জন পাহারার দায়িত্বে রয়েছে। তিনি জানান, গাছচোরদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা  করা হচ্ছে।