রোহিঙ্গারা বাসস্থান ও যুবতীদের নিয়ে দালালদের ঝুঁকিতে

    0
    218
    “অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছে সরকারী জমি প্রতি টুকরা  ৩ হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে,টাকা না থাকলে অন্য (?) কিছু দিয়ে  বিনিময়, অপরদিকে স্থানীয় ও বহিরাগত দালালের বিষাক্ত কালো  থাবা রোহিঙ্গা যুবতীদের উপর ! এদেরকে বন্ধুবেশী প্রতারক জালেমদের হাত থেকে বাচাতে সতর্ক থাকা জরুরী বলে সচেতন মহল আশা করছে তাদের বাচাতে সকল প্রকার মিডিয়া, সচেতন মহলসহ প্রশাসনকে পুর্ণ সতর্ক থাকতে হবে”

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১২সেপ্টেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ  কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে বালুখালী এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে এ রকম অসংখ্য বসতি যা বন বিভাগের মালিকানাধীন পাহাড়ি জমি। এ জমিতে ১০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্থের এক টুকরো জায়গায় আশ্রয় নিতে রোহিঙ্গাদের দিতে হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা। তবে এ টাকা জমির মালিক বনবিভাগকে নয়, দিতে হচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রকে।

    কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে কুতুপালং, পালংখালী, বালুখালী, থাইংখালী ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যংয়ের পাহাড় এলাকায় এভাবে ইতিমধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিদিন নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে এভাবে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র।
    তবে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষ করে কুতুপালং স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধিসহ বেশ কিছু চক্র বনভূমি বিক্রি করে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছেও এসেছে। তাই এসব প্রভাবশালী কিংবা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক দালালকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সাজাও দিয়েছে প্রশাসন।
    অভিযোগ উঠেছে, যারা টাকা দিতে পারছে তাদের ঘর নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। টাকা দিতে না পারলে ঠাঁই হচ্ছে রাস্তার ধারে কিংবা খোলা মাঠে।
    সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে কুতুপালং এলাকায় কয়েক শ’ একর বনভূমি দখল করে কাঁটাতারসহ বিভিন্নভাবে ঘেরা দেয়া হয়েছে। এসব বনভূমিতে পাহাড় ও গাছ কেটে বসতি নির্মাণ করতে দখলস্বত্ব বিক্রি করছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য ও তার সিন্ডিেেটর নুরুল কবির ভুট্টোসহ অন্যরা। পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করা একাধিক রোহিঙ্গা এমন অভিযোগ করেছেন এ প্রতিবেদকের কাছে।
    সরেজমিন দেখা যায়, কুতুপালং এলাকায় পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন মিয়ানমারের মংডুর রাইম্যারঘোনা এলাকা থেকে আসা কামাল আহমদ (৬০) ও তার ছেলে মো. হোসেন (৩০)। মো. হোসেন জানান, এ জমি পেতে তিন হাজার টাকা দিতে হয়েছে জমির মালিক দাবিদার স্থানীয় নুরুল কবির ভুট্টো ও বখতিয়ার মেম্বারকে। তাদের ১০ হাত দৈর্ঘ্য ও ৮ হাত প্রস্তের একটি ঘর নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে কাউকে ঘর তৈরি করতে দেওয়া হচ্ছে না।
    তিনি জানান, ‘গত রোববার মিয়ানমারের শীলখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করি। এখানে নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। কোথাও থাকার জায়গা হয়নি। রাস্তার পাশে পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে কাটাতে হয়েছে দুই দিন। এরপর জমির মালিক দাবি করা লোকজনকে টাকা দিলে তারা ঘর নির্মাণের অনুমতি দেন।’
    অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহম্মদ বলেন, ‘স্থানীয় কিছু লোক আমাকে বিপদে ফেলার জন্য সাংবাদিকদের এসব নাম বলছে। আসলে এসব কাজে আমি কোনভাবেই জড়িত নই।’
    এর একটু দূরে পালংখালী এলাকায় পাহাড়ে রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরির জন্য জমি পরিমাপের কাজ করছিলেন আব্দুল খালেক ও আলী হোসেন। তারা জানান, এ পাহাড়টির মালিক আলী আহম্মদ, আনোয়ার হোসেন, শুক্কুর মেম্বার, মফিদুল আলম, জয়নাল উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন মেম্বার, শাহাব উদ্দিন, নুরুল আলম। তাই তারাই টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের কাছে দখলস্বত্ব বিক্রি করছে।
    একইভাবে এর পাশে তাজনিরমার খোলা এলাকায় পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের কাছে দখলস্বত্ব বিক্রি করছে নুরুল আমিন ও জায়নাল আবেদিন।
    অভিযোগ রয়েছে- টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের রইক্ষ্যংয়ের পাহাড় এলাকায় রোহিঙ্গাদের ঘর তৈরির জন্য জমি মাপার কাজ করছিলেন স্থানীয় শাহাব মিয়া, মীর কাশেম ও অমিয় বড়ুয়াসহ কয়েকজন। এ পাহাড়গুলো ও পাশের সমতল জমিটি তারা সকলে নিজেদের জমির মালিক বলে দাবি করেন। শাহাব মিয়া জানান, তাদের ৬০ জনের একটি ভূমিহীন সমিতি রয়েছে। ওই ৬০ জন ভূমি অফিস থেকে এই জমি বন্দোবস্তি নিয়েছেন। প্রত্যেকের সাত কানি করে জমি রয়েছে। তারা সেখানে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করতেন। প্রতি বিঘা জমি থেকে মাসে দুই লাখ টাকা আয় হতো। এখন রোহিঙ্গারা আসায় জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সেখানে রোহিঙ্গারা ঘর নির্মাণ করছে। তারা এই জমিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তাই ক্ষতি পোষাতেই রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
    একই কথা জানান রইক্ষ্যংয়ের বাসিন্দা কালা মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি দুই দাগে মোট ৭১ শতক জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। ওই জমিতে চাষাবাদ করতাম। এখন সেখানে রোহিঙ্গারা বসতি তৈরি করছে। আমরা এর জন্য ক্ষতিপূরণ চাই।’
    দুপুরে খোলা জায়গায় দুইটি খুঁটি গেড়ে সেখানে পলিথন দিয়ে ঝুঁপড়ি তৈরি করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিয়ানমারের মংডুর বলিবাজার থেকে আসা আব্দুর রশিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি জানান, থাকার জায়গা পাচ্ছেন না। যে জায়গায় খুঁটি গেড়েছে সেখানে থাকার জন্য জমির মালিক দাবি করা লোকজন এসে ৩ হাজার টাকা চাচ্ছে। অন্যথা চলে যেতে বলছে। টাকা না দিলে এখানে থাকতে দেবে না। আমরা একদিন সময় নিয়েছি।
    তিনি জানান, মঙ্গলবার পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে তিনি শীলখালী সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আসার সময় নৌকার মাঝিকে দিতে হয়েছে ১০ হাজার কিয়াট (মিয়ানমারের টাকা)। এপারে এসেও থাকার জন্য টাকা দিতে হচ্ছে।
    রইক্ষ্যংয়ের বাসিন্দা, সবজি চাষী ছৈয়দুর রহমান জানান, এখানে ৬০ জনের জমি রয়েছে। রোহিঙ্গারা ওই জমিতে ঘর তৈরি করছে। জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে মালিকরা প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দুই হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। তবে তিনি যে জমিতে চাষ করেছেন সেখানে কাউকে থাকার জায়গা দেননি বলে জানান তিনি।
    হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল বাসেত বলেন, ‘দুই দিনে রইক্ষ্যংয়ের পাহাড়ি জমিতে ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিনিয়ত আশ্রয় নিচ্ছে আরও রোহিঙ্গা। এ পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে রোহিঙ্গাদের কোন সাহায্য-সহযোগিতা করা হয়নি। তারা অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে সেখানে। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। সেখানে যাদের জমি আছে তারা ঘর নির্মাণের সুযোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলেও জানতে পেরেছি।’
    কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আলী কবির বলেন, কুতুপালং থেকে পালংখালী এলাকার মধ্যে দেড় হাজার একর বনভুমিতে সব রোহিঙ্গার একসাথে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে যদি কেউ জমি বিক্রির নামে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
    এদিকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মুখপাত্র ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদ জানান, যত্রতত্র অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীতে আবাসনের ব্যবস্থা করবে সরকার। বন বিভাগের ১৫০০ একর জমিতে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই ‘সেফ জোনের’ নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০০ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। এছাড়া পুরো এলাকায় বসানো হবে সিসিটিভি। এমনকি বাংলাদেশে আসা নির্যাতিত ও অসুস্থ রোহিঙ্গাদের চিকিৎসায় মেডিকেল টিম গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিদেশি কোনো এনজিও রোহিঙ্গাদের সহায়তা করলে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করতে হবে বলে তিনি জানান।সুপ্রভাত