রোহিঙ্গাদের মতো আসামের মুসলিমদের অত্যাচারের হুমকি!

    0
    241

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৪সেপ্টেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ   ‘মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের যেভাবে মেরে-কেটে বিতাড়ন করা হচেছ, অনুরুপভাবে ভারতের আসামের মুসলিম অধ্যুষিত চারটি জেলায় চলবে মুসলিমদের ওপর অত্যাচার। ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে (এনআরসি) নাম নেই এবং ডি-ভোটার (সন্দেহজনক ভোটার) মুসলিমদের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের বিশেষ ক্যাডাররা ধরে ধরে বাংলাদেশে পাঠাবে।’

    এ ধরণের গুজবে আসামের দক্ষিণ শালমারা-মানকাচার জেলাসহ হাটশিঙিমাটি এলাকার জনসাধারণের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছড়ানো বার্তা সম্পর্কে তদন্ত করে একে গুজব বলে জানিয়ে এতে কাউকে ভীত-সন্ত্রস্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। গুজবটি কোন দুষ্টচক্র ছড়িয়েছে তার সন্ধানে নেমেছে প্রশাসন। এ কথা জানিয়েছেন পুলিশ সুপার অমৃতকুমার ভূঁইয়া।

    রোববার ভারতের প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক যুগশঙ্খ এমন খবর দিয়েছে। পত্রিকাটি লিখেছে, গত দুই মাস আগে আরএসএস-ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে আসামের সংখ্যালঘু অঞ্চলে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করেছিল। এবার নতুন করে জেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আরএসএস-এর স্পেশাল আর্মি গুজবে নতুন এক আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।

    গুজবে বলা হয়েছে, আসাম রাজ্য সরকার নাকি সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে মুসলমানদের ডি-ভোটারের তকমা দিয়ে আরএসএস-এর বিশেষ আর্মির মাধ্যমে শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে তাদের বাংলাদেশে পাঠাবে। তাছাড়া চলমান এনআরসি (জাতীয় নাগরিকপঞ্জি)তে ভুল প্রমাণপত্র দাখিল করা হয়েছে বলেই এই গুজব রটানো হয়েছে। আর এ সবকিছুই হবে মিয়ানমারের আদলে।

    এ ঘটনাকে সম্পূর্ণ গুজব বলে জানিয়ে মানকাচারের পুলিশ সুপার অমৃতকুমার ভূঁইয়া বলেন, সমাজে কতিপয় অশুভ চক্র সক্রিয় এসব গুজব ছড়াচ্ছে। এসব গুজবে কান না দেয়ার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

    প্রসঙ্গত, গত ২০ সেপ্টেম্বর অসমীয়া ভাষার প্রভাবশালী দৈনিক অসমীয়া প্রতিদিনের একটি প্রতিবেনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যায় আড়ালে থেকে কাজ করছে ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ (আরএসএস)। দীর্ঘদিন এই সংগঠনটি মিয়ানমারে নাম পরিবর্তন করে ‘সনাতন ধর্মসেবক সংঘ’ নামে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান রোহিঙ্গা নির্যাতন ও গণহত্যার সময় মিয়ানমারের বৌদ্ধদের সঙ্গে আরএসএস ছিল।

    পত্রিকাটি লিখেছে, ভারত, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মুসলিম বিরোধী করে তোলার জন্য আরএসএস উঠে পড়ে লেগেছে। এই লক্ষ্যে আরএসএস মোগল শাসকদের সময় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের ওপর চালানো নির্যাতনের কাহিনীসমুহ ব্যবহার করছে। ভারতের হিমাচল প্রদেশে থাকা তিব্বতী বৌদ্ধরা এই কাজে আরএসএসকে সহযোগিতা করেছে। মিয়ানমারে আরএসএসের শাখা সংগঠনটি সেদেশটির বৌদ্ধদের মাঝে এ ধরণের প্রচার চালানোর জন্য কাজ করেছে। এ জন্য তারা মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছে।

    পত্রিকাটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সনাতন ধর্ম স্বয়ং সেবক সংঘ নামের সংগঠনটির পঞ্চাশতম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে ইয়াংগুনের ন্যাশনাল থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানে মিয়ানমারের ‘স্টেট পিচ এন্ড ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সচিব লে. জেনেরেল থিন উ, মিয়ানমারের সেই সময়ের বাণিজ্যমন্ত্রী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী, তথ্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, আরএসএস এই সংগঠনটি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

    পত্রিকাটি আরো লিখেছে, শ্রীলঙ্কার বৌদ্ধ সংগঠন বডু বালা সেনা (বিবিএস) আরএসএসের মিয়ানমারের শাখা সংগঠনের সঙ্গে কাজ করছে। রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নির্যাতনের সময়ও তারাও সেখানে অবস্থান করেছে। আর এই পুরো বিষয়টি ভারতের ক্ষমতাসীন বিজিপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব দেখভাল করেছেন।আমাদের সময়।