রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম অব্যবস্থাপনা,অ্যাপেও নেই টিকেট

    0
    279

    পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের জন্য রেলওয়ের আগাম টিকিট বুধবার থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে যেভাবে প্রচারণা চালিয়েছিল, শুরুটা সেভাবে হয়নি। প্রথমদিন ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। যাত্রীদের ভোগান্তি এড়াতে এবারই রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনের বাইরে আরো ৪টি জায়গা থেকে টিকিট বিক্রি চলছে। পাশাপাশি ই-টিকেটিংয়ের জন্য ৫০ শতাংশ টিকিট বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। কিন্তু বুধবার সকাল থেকেই রেলসেবা অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট কাটতে চরম বিপত্তি ঘটে। আর ই-টিকিট সংগ্রহ করতে না পেরে অনেকেই উপস্থিত হন রেলস্টেশনে। কমলাপুর স্টেশনে কাউন্টারে মঙ্গলবার রাত থেকে অপেক্ষমাণ টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগ দেন তারা।

    বুধবার বিক্রি হয়েছে ৩১ মে যাত্রার টিকিট। আজ বৃহস্পতিবার বিক্রি হবে ১ জুনের টিকিট। আর শুক্রবার ২ জুনের, ২৫ মে ৩ জুনের এবং ২৬ মে ৪ জুনের টিকিট দেওয়া হবে।

    কমলাপুর রেলস্টেশন পরিদর্শনে রেলপথমন্ত্রীঃ এ দিকে বেলা সাড়ে দশটার দিকে কমলাপুর স্টেশনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম পরিদর্শনে যান রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। এসময় তিনি (রেলপথ মন্ত্রী ) নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে আগামী ৩১মের ঢাকা-পঞ্চগড়ের টিকিট কেনেন। পরে তিনি আগাম টিকিট কিনতে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। শোনেন তাদের নানা অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা। সব অভিযোগ ছিল রেলসেবা অ্যাপ নিয়ে।তিনি অ্যাপের মাধ্যমে রেলের কাঙ্খিত টিকিটসেবা দিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

    রেলসেবা অ্যাপসের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রেলপথমন্ত্রী বলেন, অ্যাপসে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিএনএসের সঙ্গে ২০০৭ সাল থেকে চুক্তি। তারা সেবা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এজন্য তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আর বাড়ানো হবে না। তবে ব্যর্থতার দায় আমরাও এড়াতে পারি না। আমরা দুঃখিত। শিগগিরই সিএনএসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ও অ্যাপসের মাধ্যমে আসন থাকা সাপেক্ষে অবশিষ্ট টিকিট ২৭ মে বিক্রি করা হবে। অপর এক প্রশ্নের ব্যাপারে রেলপথমন্ত্রী বলেন, টিকিট কালোবাজারি রোধে কঠোর ব্যবস্থা ও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতির নেওয়া হয়েছে।

    দুদকের অভিযান এর আগে বেলা ১০টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল। তারা যাত্রীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ শুনেন। তারপর তারা রেল স্টেশন ম্যানেজারসহ রেলের ও সিএনএসবিডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সাড়ে ১২টার দিকে তারা চলে যান।

    যাওয়ার আগে দুদকের উপসহকারী পরিচালক মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, টিকিট না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে আমরা এসেছি। তবে অভিযোগগুলো অ্যাপের মাধ্যমে ও অনলাইনে টিকিট কিনতে না পারার; কাউন্টারে টিকিট বিক্রি নিয়ে তেমন অভিযোগ নেই। এ বিষয়ে আমরা সিএনএসবিডির কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাইনি। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমিশনে আমাদের প্রতিবেদন জমা দেব।

    পাঁচ স্থান থেকে টিকিট বিক্রি: রাজধানীর পাঁচ স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব জায়গায় পর্যাপ্ত বুথ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে কমলাপুর স্টেশন থেকে থেকে যমুনা সেতু হয়ে পশ্চিমাঞ্চলগামী সবকটি ট্রেনের টিকিট। বিমানবন্দর স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট। তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন, বনানী স্টেশন থেকে নেত্রকোণাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন। ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলভবন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট।

    এখানে টিকিটের সুপারিশ করা হয় নাঃঈদ টিকিট পেতে রেলমন্ত্রীকে তার নিজের মেয়েই একটি তালিকা দিয়েছিলেন, যা তিনি গ্রহণ করেননি। আর মন্ত্রীর একান্ত সচিবের (পিএস) আতিকুর রহমান স্ত্রীর মাধ্যমে অনুরোধ এসেছিল টিকিটের। পিএস সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন।

    রেলপথমন্ত্রীর পিএস রেলভবনের তার অফিস কক্ষের দরজায় লিখেও রেখেছেন- ‘এখানে টিকিটের সুপারিশ করা হয় না।’ এ ব্যাপারে রেলমন্ত্রী নিজেই বললেন, মন্ত্রী হিসেবে চাপ আমার ওপর বেশি। কিন্তু আমাকে তো একটা সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। অনিয়মটাকে তো আর নিয়মে পরিণত করতে পারি না।

    রেলপথমন্ত্রী আরো জানান, তার মেয়ের কাছে টিকিটের জন্য অনেক অনুরোধ এসেছে। সে অনুযায়ী মেয়ে তার কাছে আগাম টিকিট চেয়ে একটি তালিকা দিয়েছিলেন। আমি বলে দিয়েছি এভাবে টিকিটের কোনো সুযোগ নেই। মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করলে এই অনুরোধের প্রয়োজন নেই।

    অপরদিকে, পিএস আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন টিকিট দেওয়ার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করতে করতে বহু বন্ধু-আত্মীয়-সহকর্মীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে।ইত্তেফাক