রাজা ফিশারিজ মালিকের মরদেহ মর্গে,বুধবারে পুন:দাফন

    0
    528

    মিনহাজ তানভীরঃ মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার মতিগঞ্জ এলাকাধীন হাইল হাওরে অবস্থিত “রাজা ফিশারিজ এন্ড হ্যাচারী কমপ্লেক্সে”র সাবেক প্রতিষ্ঠাতা স্বত্বাধিকারী মাস্টার গোলাম মোস্তফা রাজা মিয়ার মৃতদেহ বহু জল্পনা-কল্পনার অবশেষে তদন্তকারী কর্মকর্তার বারবার নোটিশ প্রদানের পর বিজ্ঞ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা রহমান’র উপস্থিতে স্থানীয় সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের সরেজমিন থেকে মৃত্যুর প্রায় তিন বছর পর আজ মঙ্গলবার (৯ফেব্রুয়ারী) সকাল  ১১টা থেকে বিকাল পৌনে তিনটা পর্যন্ত আইনি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরদেহ উত্তোলন কাজ শেষ করে এম্বুলেন্স যোগে প্রথমে শ্রীমঙ্গল থানায় আইনি প্রক্রিয়ার পর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

    এসময়  শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আলী তানভীর হক রাহাত উপস্থিত থেকে লাশ উত্তোলনের পর ময়না তদন্তের প্রাথমিক সকল প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করেন।

    মরদেহ উত্তোলন সংক্রান্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার এসআই মোহাম্মদ আলমগীর আমার সিলেটকে জানান, মরহুম মাস্টার গোলাম মোস্তফা রাজা মিয়ার মৃত্যু নিয়ে তারই ছেলে গোলাম মোরসালিন মোস্তফার করা হত্যা মামলার তদন্ত সাপেক্ষ ন্যায়বিচারের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত মৃতদেহ উত্তোলন করে অধিকতর ফরেনসিক তদন্তের প্রয়োজনে পোস্টমর্টেম করার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা সুত্রে তিনি আরো বলেন, মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে মৃত রাজা মিয়াকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী অর্থাৎ অভিযোগকারী গোলাম মুরসালিনের সৎ মা নুরজাহান রানী ও তার সহযোগীদের নিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে,বিষ প্রয়োগ করে কিংবা অন্য কোন উপায়ে হত্যা করে থাকতে পারে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার সাধারণ প্রক্রিয়া অনুযায়ি সঠিক কারণ নির্নয় করার সার্থে ন্যায় বিচারের লক্ষ্যে আদালত তার মৃতদেহ উত্তোলন করে ময়না তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আদালতের নির্দেশে লাশ উত্তোলন করে আমরা তদন্তের জন্য বারবার নোটিশ করা হলেও মামলার বাদী পক্ষ আমাদেরকে কোন সহযোগিতা করেনি এমনকি আজ তাদের কেহ এখানে উপস্থিত ও হয়নি অথচ আমাকেই এই মামলা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে মরদেহ উত্তোলনের আরও তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে,কারণ হিসেবে আমার বাদী পক্ষের একজন প্রবাস থেকে আসছেন বলে জানানো হয়েছিলো,শেষ পর্যন্ত আজ তাদের কাউকেই উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে না।

    অপরদিকে মরদেহ উত্তোলনে বাদী পক্ষের অসহযোগিতার ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা রহমান দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলনের জন্য মামলার বাদী পক্ষের অসহযোগিতার কারনে আমরা এক ঘন্টার উপরে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে।শেষ পর্যায়ে বাদী পক্ষের প্রতিনিধি রাজা ফিশারিজ এর ম্যানেজার জামান আব্দুল্লাহ ঘটনাস্থলে আসলে তিনি সাংবাদিকদের তুপের মুখে পরলে তিনি অন্যত্র ফিসারির কাজে ব্যাস্ত ছিল বলে জানান। আমারসিলেট প্রতিনিধি বাদীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সাক্ষাত করতে পারেনি।

    সর্বশেষ ৮ জানুয়ারি বিকালে রাজা ফিসারিজ মালিকের মরদেহ উত্তোলনের নোটিশ ২য় বারের মত ঘরের ওয়ালে টাঙ্গিয়ে দেওয়া হয়। পুর্ব ঘোষিত নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারী) দুপুর ১ টা থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা রহমানের উপস্থিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আলমগীর এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্কটের মাধ্যমে মৃতদেহ উত্তোলনের কাজ আরম্ভ হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন আশিদ্রোন ইউপি চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ জহর,স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শহীদ,শ্রীমঙ্গল অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি আনিছুল ইসলাম আশরাফী,সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক  সম্পাদক ইয়াছিন তালুকদার,সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রুহেল খান আশরাফুলসহ বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিক ও স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গ।

    প্রসঙ্গত, মাষ্টার গোলাম মোস্তফা রাজা ৩১ জানুয়ারী ২০১৭ ইং তারিখে মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুর প্রায় আড়াই বছর পর গত বছর ২৬/০৮/২০২০ তারিখে মৃত রাজা মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী নুরজাহান রানীকে প্রধান আসামি ও তার ভাই দেওয়ান আলামিন রাজা, দেওয়ান সেলিম, দেওয়ান জান্নাতুল ফেরদৌস লিখন ও নাছির মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা আরো বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আদালত দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করে আরজি বা নালিশকে গত ০৭/০৯/২০২০ তারিখের মধ্যে এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নির্দেশ দেওয়া হয় এবং এরই প্রেক্ষিতে আদালত লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।

    উল্লেখ্য, মরহুম মাস্টার গোলাম মোস্তফা রাজা মিয়া হাওরপারের লোকদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন।স্থানীয়রা খুব মর্মাহত তার লাশ উত্তোলন নিয়ে,তবে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তাদের কিছু জানা নেই,তিনি শ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানান তারা।সুত্রে জানা যায়,মরহুম রাজা মিয়া অসুস্থ হয়ে পরলে রাস্তা খারাপ থাকায় তার নিজের গাড়ী (prado car) নিতে অসম্ভব থাকায় একটি সিএনজি যোগে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়, তাও পুকুরের পাড় দিয়ে,এ সময় রাস্তা ভাঙ্গা ছিল সংস্কার কাজে তখন বড় গাড়ীর যাতায়াত হতনা।