রাজনগরে এক চেয়ারম্যান’র পিতাকে পিস কমিটির সদস্য বলে দাবী সংবাদ সম্মেলনে

0
416
রাজনগরে এক চেয়ারম্যান'র পিতাকে পিস কমিটির সদস্য বলে দাবী সংবাদ সম্মেলনে
রাজনগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপি’র সদস্য টেংরা ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম

আলী হোসেন রাজন, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের রাজনগরে কয়েক দিন আগে নানা নাটকিয়তায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হলেও এর রেশ এখনও কাটেনি। আলোচনা, সমালোচনা, বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ চলছেই বিজয়ী ও পরাজিতদের মধ্যে। তাই নির্বাচন শেষ হলেও বা তার ফলাফল প্রকাশ পেয়ে খানিকটা বাসি হয়ে গেলেও তার রেশ কাটেনি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে রাজনগরের ৬ নং টেংরা ইউনিয়নে। নির্বাচনের পর থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগে ঘটেছে কয়েকটি অপ্রতিকর ঘটনা।

রাজনগরের ৬নং টেংরা ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আহমেদ ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ৬নং টেংরা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান টিপু খান। এর আগে সাত জানুয়ারি রাত ১১টায় টিপু খানের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় পরাজিত চেয়ারম্যান সেলিম আহমেদ ও তাঁর পরিবার জড়িত ছিলো দাবী করে চেয়ারম্যান টিপু খান তাদের বিরুদ্বে মামলা করেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে চেয়ারম্যান টিপু খানের সমর্থকরা দশ জানুয়ারি মানববন্ধন করেন।

এসব কিছু চেয়ারম্যান টিপু খানের মিথ্যা অপপ্রচার দাবী করে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ নিয়ে রাজনগর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করেন উপজেলা বিএনপি’র সদস্য টেংরা ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি লিখিত অভিযোগ করে বলেন শুধুমাত্র নির্বাচনে টিপু খানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারনে তাঁর ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন টিপু খান সন্ত্রাসী কার্যক্রম আর প্রভাব বিস্তার করে জয়ী হয়েছেন, একথা আগেও বারবার তিনি বলেছেন, সেই সূত্র ধরেই তিনি অভিযোগ করে বলেন চেয়ারম্যান টিপু খানের ভাই সায়েদ খান ও দিপু খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মামলা হয়েছে। চেয়ারম্যান টিপু খানের পিতা পাকিস্তান আমলে পিস কমিটির সদস্য ছিলেন। টেংরা ইউনিয়নে একটি মাত্র রাজাকার পরিবার সেটা চেয়ারম্যান টিপু খানের। টিপু খানের পিতার উপর থেকে রাজাকার নাম মুছে ফেলার জন্য তিনি আওয়ামীলীগেও যোগ দেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে টেংরা ইউনিয়নের কান্দিরকূল গ্রামের সেনের বাড়ী ডা: আশুতোষ দেবের বাড়ী যে লুটপাট হয়,সেই লুটপাটের হোতা বর্তমান চেয়ারম্যান টিপু খানের পিতা আব্দুল হামিদ থান ও তার চাচা সৈয়দ খানের নামে মামলা হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৯৬ সালে হত্যা চেষ্টা ও সন্ত্রাসী মামলায় ৫মাস জেল খাটেন টিপু খান,এছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে রাজনগর থানায় জিআর-৪০৩-২০০১ ও ৪০৪-২০২১ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী মামলা ছিল। টিপু খান যে দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত এর প্রমান রাজনগরের সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শ্যামল বণিকের দেয়া তথ্যের ভিডিও আছে। মামলা দিয়ে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগে সম্প্রতি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তাঁর ভাই দিপু খানকে জামিনে নিয়ে এসে তিনি একই কায়দায় এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব প্রমান থাকলেও প্রভাবশালীদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায়না।

সাত জানুয়ারি রাতে টিপু খানের বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা প্রসঙ্গে সেলিম আহমদ বলেন, ঐদিন টিপু খান আমাকে ফোনে জানান তার ভাইয়ের সাথে কয়েকজনের বাজারে জামেলা হয়েছে। বিষয়টি আমি সমাধান করতে কুলাউড়া থেকে টেংরা বাজারে আসি। এসময় দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি ও তার বাসায় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মামলায় আমাকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে জড়ানো হয়েছে। যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। পরে বাজারে মানববন্ধন করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে টিপু খানের ভাই সায়েদ খান ও তার অনুসারীরা বক্তব্য দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশাসনের প্রতি ন্যায় বিচারের জোরদাবী রেখে বলেন ওই দিনের হামলার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে। তাঁর পরিবারের প্রতি ন্যায় বিচার দাবী করে তিনি বলেন ইউনিয়নের উন্নয়নে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক অবদান রেখেছেন, যা এলাকার মানুষ প্রত্য্যক্ষ দেখেছেন।

এসময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন আরজান খান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও টেংরাবাজার বনিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রব, টেংরা বাজারের ব্যবসায়ী জিল্লু আহমেদ ও কাতার প্রবসী জগলু চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে রাজনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি,সাধারন সম্পাদক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ২৬ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে চতূর্থ ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।