রাজকান্দি রেঞ্জের বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মসহ বন বানিজ্যের নানা অভিযোগ

0
816
রাজকান্দি রেঞ্জের বিট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মসহ বন বানিজ্যের নানা অভিযোগ

শাব্বির এলাহী,কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজারঃ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি রেঞ্জের আওতাধীন আদমপুর বনবিটের সংরক্ষিত বনে গাছ চুরি থামছেই না। ফলে উজাড় হচ্ছে সংরিক্ষত বনাঞ্চল।

অভিযোগ উঠেছে বিট কর্মকর্তা ও বন কর্মীদের সহযোগীতায় এলাকার সংঘবদ্ধ চোরচক্র গাছ পাচারে সক্রিয় । তারা সামাজিক বনায়নসহ বিটের আগর ও সেগুন গাছ কেটে পাচার করছে। আর এসবে বনবিট কমর্কতা হেলাল উদ্দীনে মদদেই হচ্ছে।

গত শুক্রবার(১ অক্টোবর ২০২১) বনবিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে আগর গাছ কেটে টুকরো করে বিদেশ ফেরত এক সিএনজি চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার সিএনজিতে গাছের টুকরো তুলে বিট অফিসে নিয়ে যায়। রহমত মিয়া,আনোয়ার আলীসহ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, শুক্রবার(১ অক্টোবর ২০২১)  সকালে আব্দুস সালাম আদমপুর বিট অফিসে আটক করা হয়েছে শুনে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় বেঁধে রাখা দেখেন। সিএনজিসহ তাকে ছাড়িয়ে আনতে বিট অফিসে বনপ্রহরী জয়নাল মিয়াসহ অন্যান্য প্রহরীদেরদের সাথে কথা বললে তারা  প্রথমে ১ লক্ষ টাকা দাবী করেন। পরে ৫০ হাজার টাকায় চুড়ান্ত হলে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সালামকে ছাড়িয়ে আনেন। বাকী ২৫ হাজার টাকা দিয়ে সিএনজি ছাড়িয়ে আনার কথা।

সিএনজি চালক আলীনগর ইউনিয়নের চিৎলীয়া গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, তিনি দীর্ঘ দিন বিদেশে ছিলেন। করোনায় দেশে এসে একটি সিএনজি কিনেছেন। সেটা তিনি নিজে চালান। শুক্রবার (১ অক্টোবর ২০২১)  সকালে তিনি সিএনজি নিয়ে আদমপুরের কাউয়ারগলা গ্রামে তার আত্মীয়ের বাড়ীতে যাওয়ার সময় বিট কর্মকর্তা তাকে আটকিয়ে জোর করে সিএনজিতে গাছ তুলে বিট অফিসে নিয়ে যান। সে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধোর ও মামলার ভয় দেখান।

চালক আব্দুস সালাম আরও জানায়, তাকে আটকানোর সময় আরো ২ টি সিএনজি অটো গাড়ি ছিল। তারা মোটা অংকের টাকা দিয়ে সিএনজি ২ টি ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। বিট কর্মকর্তা তার কাছে  ৫০ হাজার টাকা দাবী করলে পুরোটা না দিয়ে ২৫ হাজার টাকা দেন। সংবাদ লেখা পর্যন্ত সিএনজি (অটো) বিটে আটক আছে।

আগর গাছ আটকের ঘটনার ৪ দিন অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারনে এখনো কোন মামলা হয়নি।

এতে এলাকাবাসী ও সামাজিক বনায়নের সমিতির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আদমপুর বিটের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির সভাপতি মোঃ হাজির বক্স থেকে জানা যায়,রাজকান্দি রেঞ্জের আওতাধিন আদমপুর বিট কৃর্তক অংশীদ্বারীত্বের আওতায় ২০০০-২০০১ অর্থ বছরে সৃজিত আগর বাগানের সামাজিক বনায়ন তৈরী করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ বাগানের আগরগাছ চুরির ঘটনা ঘটছে। এলাকার কিছু অসাধু গাছচোর চক্র ভিলেজার ও বনবিভাগের লোকজনকে ম্যানেজ করে গাছ পাচার করছে। বিষয়টি স্থানীয় বনবিভাগকে অবহিত করলেও পাচার বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে আদমপুর বনবিটের কাউয়ারগলা সংলগ্ন সাঙ্গাইসাবি এলাকা থেকে ২০০০-২০০১ সালের সামাজিক বনায়ন থেকে আগর গাছ কেটে পাচারের সময় বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে একদল বনপ্রহরী প্রায় ৭০ টুকরা বা ৩৫ ঘনফুট কাঠসহ ৩টি সিএনজি আটক করে। আগর গাছ কেটে পাচারের সময় গাছসহ ৩টি গাড়ী ও চালক আটকের খবর শুনে একাধিক বার ফোন দিলেও বিট কর্মর্কতা ফোন রিসিভি করেননি।

ঘটনা শুনে সরেজমিনে রোববার ৩ অক্টোবর আদমপুর বিটে গিয়ে দেখা যায়,  বিট অফিসের সামনে ১ টি সিএনজি ভিতরে কিছু আগর গাছের টুকরা আর বাকী কিছু টুকরা নিচে ফেলে রাখা হয়েছে।

শুক্রবার সকালে মূল্যবান আগর গাছ কেটে পাচারের সময় চালকসহ সিএনজি আটকের বিষয়ে জানতে চাইলে বন প্রহরী জয়নাল মিয়া ১ টি সিএনজি আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, গাছের টুকরো বেশী থাকায় আরেকটি সিএনজি ভাড়া করে বিট অফিসে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু বিস্তারিত জানতে বিট কর্মকর্তার খোঁজ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

পরে খবর নিয়ে জানা যায়, আসলে বিট কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সামনেই আসতে চাননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় লোকজন ও ভিলেজার জানান, আদমুপর বিটে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন বিট অফিসার হেলাল উদ্দীন। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বনায়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত, সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের মাধ্যমে লাখ টাকার বন বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনের দায়িত্বে যারা আছেন তারাই গাছ পাচার করছে। গাছ পাচারের বিষয়ে বন বিট অফিসারকে জানিয়ে কোনও কাজ হয় না। উল্টো হয়রানির শিকার হতে হয়। এ ভয়ে এখন কেউ প্রতিবাদ বা কথা বলতে রাজি না।

এদিকে আগর গাছ আটকের ৪ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো কোন মামলা দায়ের করা হয়নি।

আদমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবদাল হোসেন জানান, হেলাল উদ্দিন আদমপুর বিটে যোগদান করার পর থেকেই সঙরক্ষিত বনের গাছ চুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বনায়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাত, সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায় করে লাখ লাখ টাকার বন বাণিজ্য করছেন। তার বিরুদ্ধে বন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উর্ধ্বতন মহলে একাধিক লিখিত অভিযোগ প্রেরণ করা হয়েছে। আদমপুর বিট কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন এর মুঠোফোনে (০১৭১৬-৪৩৭০৬৬) দুই দিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে রিং হলেও রিসিভ করেননি।

কমলগঞ্জ রাজকান্দি রেঞ্জের ফরেষ্টার নজরুল ইসলাম বলেন, আগর গাছ আটকের কথা শুনেছেন। মামলার কাগজ পত্র রাজকান্দি অফিসে এখনো আসেনি। অর্থ আদায়ের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে অপরাগতা স্বীকার করেন।

কমলগঞ্জ রাজকান্দি রেঞ্জের দায়িত্বে থাকা সহকারী বন সংরক্ষক এসিএফ নাজমুল আলম(০১৩২৩৬২৬৬২১) সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।