রংপুর ছাত্রনেতা রনির নামে প্রতারণার অভিযোগ শিক্ষিকার

    0
    266

    রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান রনির বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিয়ে, নির্যাতন, মিথ্যা মামলা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন তানিয়া আক্তার নামের একজন স্কুল শিক্ষিকা ও মুক্তিযোদ্ধার কন্যা। এ বিষয়ে স্থানীয় থানায় মামলা এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি। বরং রনি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রাণনাশের হুমকিতে পরিবারসহ জীবন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তানিয়া। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নিজের জীবন ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ছাত্রলীগ নেতা রনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা ও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি।

    মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মোছা: তানিয়া আক্তার এসব কথা জানান। রংপুর মিঠাপুকুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত তানিয়া আক্তার নগরীর কোতয়ালী আরপিএমপি থানার বসুনিয়া রোডের কেরানীপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: হাফিজুর রহমানের মেয়ে। তার মায়ের নাম মোছা: সবেদা বেগম।

    সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তানিয়া আরও বলেন, রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রনি আমার পূর্ব পরিচিত। দীর্ঘদিন দেখাশোনা আর কথা বার্তায় আমাদের মাঝে বন্ধুত্বও হয়। এই বন্ধুত্বের বেশ কয়েক বছরের মাথায় রনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমি সময় নিয়ে তার প্রস্তাবে রাজি হই। কিন্তু সে ছাত্রলীগের সভাপতি পদে থাকায় আমাদের বিয়ের বিষয়টি ‘অতি গোপন’ করতে শর্তে জুড়ে দিলে আমি প্রথমে বারণ করি। কিন্তু বার বার আমাকে অনুরোধ, তার বন্ধুদের দিয়ে বোঝানো, রনির রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বিষয়টি নিয়ে নানানভাবে বোঝাতে শুরু করে এবং ছাত্রলীগের মেয়াদকাল শেষ হওয়া মাত্রই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা দৃশ্যমান করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে আমি বিয়ে করতে রাজি হই। গত বছরের ১৮ এপ্রিল নীলফামারী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজল কুমারের বাড়িতে রনির পরিচিত কাজী ও স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতেই আমাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়।

    তানিয়া বলেন, বিয়ের পর আমরা দেশে ও ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হানিমুনে গিয়েছি। হোটেল থাকা, এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়ানো, গাড়ি ভাড়ায় ভ্রমণসহ স্বামী-স্ত্রীর সুন্দর জীবন যাপন চলেছে। আমি, আমার পরিবার এবং রনি ও রনির বন্ধুবান্ধব বিয়ের বিষয়টি গোপন রেখেছি, ছাত্রলীগের সভাপতি পদ-পদবীর কারণে যা আগেই শর্ত ছিল। এসময়ে সে যখন যা চেয়েছে-আমি স্ত্রী হিসেবে স্বাধ্যমত তাকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করেছি। কিন্তু হঠাৎ রনি তার ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে আমাকে ২০ লাখ টাকা জোগাড় করতে চাপ দিতে থাকে। রনির কতিপয় বন্ধু মহলও আমাকে ওই টাকা দিতে হবে বলে নানানভাবে জোর দাবি করতে থাকে। আমাদের দুইজনের হিসাব মতে এই পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ টাকা সে নিয়েছে। কিন্তু সে কোনো কথাই শুনতে চায় না বরং আমাকে আরও ২০ লাখ টাকা জোগাড় করতে বার বার মানসিক চাপের পাশাপাশি মাঝে-মধ্যে শারীরিক নির্যাতনও শুরু করে। এর পর শুরু হয় আমার উপর অমানসিক নির্যাতন। শারীরিক আঘাতসহ নানান ধরণের গালাগাল। শুধু তাই নয়, সে অন্যত্র বিয়ে করার জন্য পাত্রী দেখতে যাওয়ার খবরটি আমি জেনে প্রশ্ন করার আমাকে নির্মমভাবে শারীরিকভাবে আঘাত করে।

    তিনি বলেন, একপর্যায় আমি আমার বিয়ের কাবিন দিতে বলায় রনি হাসতে হাসতে বলে, ‘কিসের বিয়ে? কিসের কাবিন? সবই আমার সাজানো। কাজিও আমি, স্বাক্ষীও আমি আর বরও আমি। তুই একটা রাস্তার মেয়ে। ইচ্ছে হয়েছে ব্যবহার করেছি। আমার ইচ্ছে শেষ, প্রয়োজন শেষ আর তানিয়া নামের অধ্যায়ও শেষ। আমি ছাত্রলীগের রংপুর জেলার সভাপতি। আমার কথায় প্রশাসন, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ উঠা-বসা করে। আমাকে তুই কিচ্ছু করতে পারবি না। যেহেতু বিয়ের কাগজ নেই অতএব বিয়েও হয়নি।’

    তানিয়া বলেন, রনি মানসিক চাপে রেখে পরিকল্পিতভাবে আমাকে পাগল বানাতে চেষ্টা করলো। কিন্তু কোনো উপায় অন্তর না পেয়ে একদিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর নিল এবং আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়ে গেল। আমি থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে আমার মামলা গ্রহণ করা হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে সাংবাদিকদের নিয়ে থানায় গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ৫ সেপ্টেম্বর বিকালে রংপুর কোতয়ালী নং ০৯/৪৬৮ মামলাটি এজহারভুক্ত করা হয়।

    তিনি বলেন, মামলা দেওয়ার পর থেকে একের পর এক হত্যার হুমকি, মামলা তুলে নিতে আমাকে ও আমার বাবা-মাকে নানা ধরনের গালাগালসহ মেরে-কেটে লাশ গুম করার কথা শোনানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমি রাষ্ট্রের কাছে আইনী সহায়তা চাওয়ায় উল্টো আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও জুড়ে দিয়েছে। আমার বাবা হার্টের অসুস্থ রোগী। আমার মা-ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কখন যে আমার বাবা-মাকে মেরে ফেলে-সে ভয়-আতঙ্ক নিয়ে আমার ও আমার পরিবারের দিন যাচ্ছে। আর আমি তো রীতিমত পালিয়ে আছি ঢাকায়।

    তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টচার্য্য-এর সরনাপন্ন হয়েছিলাম। বিস্তারিত ডকুমেন্টও দিয়েছি। পুরো বিষয়টি তাকে জানিয়েছি এবং তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে মিডিয়ায় তার বক্তব্য আমাকে এবং আমার পরবিারকে আহত করেছে। এদেশকে শত্রুমুক্ত করতে আমার বাবা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। আর এখন এদেশেই কতিপয় ছাত্রনেতার কারণে আমাদের জীবন-জীবিকা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় জীবন-যাপন করছি।

    তানিয়া বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই, রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রনির দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা অন্যান্য অপরাধীরা যেন রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান রনির কঠোর শাস্তি উদাহরণ হোক। আপনাদের মাধ্যমে আমি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

    সংবাদ সম্মেলনে সংহতি প্রকাশ করতে মোবাইল কলে যুক্ত হয়ে লেখক, গবেষক, কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আমাদের সবার উচিত হবে প্রতারণার শিকার তানিয়ার পাশে দাঁড়ানো। তানিয়া যাতে সুবিচার পেতে পারে-এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। সেসাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত হবে অপরাধী রনিকে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত গ্রেফতার করে সুসাশন প্রতিষ্ঠার করতে আন্তরিক হওয়া।

    বাংলাদেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় সংহতি প্রকাশ করে বলেন, রনি শুধু তানিয়ার সাথে প্রতারণা করেনি, সে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাথে প্রতারণা করেছে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বিবাহের নামে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো এক অজানা কারণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এতো কিছু জানার পরেও রংপুর জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রনির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

    তিঁনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সাংবিধানিক পালন করতে বদ্ধ পরিকর। যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত রনিকে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তানিয়া ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কার কী পরিচয়, কে কোন দল করে এটাকে বিবেচনায় না নিয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ প্রশাসনের উচিত হবে অভিযুক্তকে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অপরাধীর চোখে বিবেচনা করা।

    এ সময় অন্যান্যদের মাঝে সংহতি প্রকাশ করেন লেখক, গবেষক ও কলামিষ্ট বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা প্রমুখ।