যেখানে ১০ফুট পানি থাকার কথা সেখানে রাষ্ট্রপতি প্রাইভেট কারে

    0
    273

    নিজস্ব প্রতিনিধিঃ  “ভাঁটির রত্ন” রাষ্ট্রপতি আলহাজ্জ মোঃ আবদুল হামিদ সপ্তাহব্যাপী নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ সফরের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শন করেছেন। তিনি বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত প্রাইভেট কারে চড়ে নির্মাণাধীন সারাবছর চলাচল উপযোগী অষ্টগ্রাম-মিঠামইন-ইটনা “অলওয়েদার” রোডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ঘুরে দেখেন।

    এ সময় রাষ্ট্রপতিকে বহনকারী গাড়িটির চালক ছিলেন রাষ্ট্রপতির বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।

    এ সময় রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে শত শত নারী-পুরুষ কিশোর কিশোরী  রাষ্ট্রপতিকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। রাষ্ট্রপতিও গাড়ি থেকে তাদের হাত নেড়ে হাসি মুখে শুভেচ্ছার জবাব দেন।

    রাষ্ট্রপতি আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অষ্টগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনে বের হন। অষ্টগ্রাম সদর থেকে ধলেশ্বরী নদীতে নির্মিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সেতুর উপর দিয়ে তিনি প্রাইভেট কারে চড়ে প্রথমে বাঙ্গালপাড়া ইউনিয়নের নোয়াগাও যান।

    তিনি হাইওয়ে সড়ক পরিদর্শন ছাড়াও নোয়াগাঁও অংশের মেঘনা নদী পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সেখানে সমবেত জনসাধারণের সাথে কথা বলেন।

    সেখান থেকে পরে তিনি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার সড়কের কাস্তুল ইউনিয়নের ভাতশালা কাটাগাং রোড পর্যন্ত সড়ক পরিদর্শন করেন।

    এ সময় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, “অল্প কিছুদিনের মধ্যে অলওয়েদার রোডের কাজ শেষ হবে। তখন আপনারা সহজেই কম সময়ে অষ্টগ্রাম থেকে মিঠামইন-ইটনা ছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে গাড়িতে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন।”

    পরে রাষ্ট্রপতি পর্যায়ক্রমে বাহাদুরপুর বাজার এবং পূর্ব অষ্টগ্রাম বাজারের উত্তর পাশে তিন রাস্তার মোড় পর্যন্ত পরিদর্শন করেন। পূর্ব অষ্টগ্রাম  আখড়া বাজারের উত্তর পাশে তিন রাস্তার মোড়ে একটি গোলচত্বর করার ব্যাপারে ও নির্দেশনা দেন।

    এসময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া,জেলা প্রশাসক মোঃ সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), অষ্টগ্রাম সরকারি রোটারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোজতাবা আরিফ খান, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চুসহ স্থানীয় অন্যান্য আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ ছিলেন।

    দুপুরের খাবার ও বিশ্রাম শেষে রাষ্ট্রপতি বিকাল ৪টায় অষ্টগ্রাম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

    এর আগে গতকাল সোমবার  বিকালে অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম খেলার মাঠে নাগরিক কমিটির  সুধি সমাবেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন বন্ধু বান্ধবদের বলতাম, “চলো আমাদের এলাকায় হাওরে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই”। তখন তাদের নাক বেশ উঁচু ছিল। তারা বলতো, হাওরে গিয়ে কী করবো, কী দেখবো ? কত অবহেলা, অবজ্ঞা তারা আমাদের করতো। তাদের দাওয়াত দিয়ে আনতে চাইলেও তারা আসতে চাইতো না। এখন আমাদের অবহেলা করার আর সুযোগ নেই।

    তিনি আরও  বলেন, “যখন আমি ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম অলওয়েদার রোডের কাজ শুরু করলাম। তখন বিভিন্ন  এলাকার বড় লোকেরা তারা কেউ একশ’ একর, তিনশ’ একর, পাঁচশ’ একর এমনকি এক হাজার একর পর্যন্ত জমি কেনা শুরু করলো। এ ধরনের কথা যখন শুনলাম, আমি নেতৃবৃন্দকে(আওয়ামীলীগ) বলেছি, কর্মকর্তাদের বলেছি, হাওরে জমি কেনাবেচা চলতে পারে কিন্তু অষ্টগ্রামের জমি অষ্টগ্রামের মানুষ কিনতে পারে। ইটনার জমি ইটনার মানুষ কিনুক তাতে কোনো সমস্যা নেই।মিঠামইনের মানুষ মিঠামইনের জমি কিনতে পারে। তবে কোন রাঘব বোয়াল যেন যারা এসব জমি খেয়ে ফেলবে তারা যেন কিনতে না পারে।

    রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে হাওরে অবিশ্বাস্য উন্নয়ন হয়েছে। হাওরের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় সাবমার্সেবল রোড, সারা বছর চলাচল উপযোগী অলওয়েদার রোড, ঘরে ঘরে বিদুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। হাওরবাসী এক সময় এসব ভাবতেও পারতো না। কিন্তু আজ সবই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে হাওরবাসী।

    এসময় সাবমার্সেবল রোড, অলওয়েল ওয়েদার রোডসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জনসাধারণকে সচেতন হওয়ারও আহ্বান জানান।

    এ মাসের ৯ অক্টোবরে এক সপ্তাহের সফরে রাষ্ট্রপতি  নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে আসেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত সাত দিনের এই সফরে তিনি তাড়াইল, কিশোরগঞ্জ সদর, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টগ্রাম এই পাঁচ উপজেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

    তবে রাষ্ট্রপতির এবারের সফরে অন্যান্য সময়ের চেয়ে অতিরিক্ত সিকিউরিটির ফলে উনার ভক্তদের অনেকেই দেখা করতে না পারায় খুব ব্যাথিত হয়েছেন।

    অপর দিকে অষ্টগ্রাম থেকে সোহেল আহমদ তালুকদার ও মাওলানা আব্দুস সামাদ আমার সিলেট প্রতিনিধিকে জানান, “যে রাস্তা দিয়ে মহামান্য প্রাইভেট কার চড়ে গিয়েছেন এই রাস্তায় নদী এলাকা ছাড়া নিচু উঁচু হাওর মিলিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট পানি থাকে বর্ষার সময় অথচ একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির একান্ত ইচ্ছায় এবং উনার ছেলে এমপি তৌফিক সাহেবের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় আজ শহরের চেয়েও অনেক সুন্দর এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত আমাদের অষ্টগ্রাম-ইটনা-মিঠামইন ভাঁটি এলাকা।”

    আরও জানা গেছে গত ১৩ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে তিনি অষ্টগ্রাম, ইটনা, মিঠামইনে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল করার ঘোষণা দিয়েছেন এবং বলেছেন ওই স্কুল গুলোর সব শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের হোস্টেলে থাকতে হবে। স্কুল গুলোকে ক্যাডেট কলেজের আদলে করা হবে বলে বক্তৃতায় বলেছেন।

    অপর একটি সুত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মিঠামইন সেনানিবাসের দক্ষিণ থেকে চার কিলোমিটার ফ্লাইওভার করে মরিচখালী-কিশোরগঞ্জ সড়কের সাথে সংযোগ করে দেয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে এবং দেশের সব হাওরেই এই রকম রাস্তা পর্যায় ক্রমে করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।