যুবতী হত্যাকান্ড,৭ মাস পর চাঞ্চল্যকর তথ্য উৎঘাটন

    0
    261

    “স্ত্রীকে খুশি রাখতে পরকীয়া প্রেমিক কর্তৃক প্রেমিকাকে ধর্ষণের পর হত্যার স্বীকারোক্তি” 

    মিজানুর রহমান,চুনারুঘাট থেকেঃ  বাসায় সাবলেট থাকা তরুণীর সাথে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন মো. আফসার মিয়া কাওছার। কিন্তু বিষয়টি জেনে ফেলেন কাওছারের স্ত্রী রিপা বেগম। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এক পর্যায়ে রিপা স্বামীর সাথে অভিমান করে বাবার বাড়ি চলে আসেন। কয়েকদির পর কাওছার তার স্ত্রীকে বাসায় ফিরিয়ে নিতে চাইলে রিপা বেগম প্রেমিকা মিষ্টিকে তার জীবন থেকে সড়াতে হবে বলে শর্ত দেয়।
    এক পর্যায়ে দু’জন পরিকল্পনা করে মিষ্টিকে মৌলভীবাজার থেকে চুনারুঘাট নিয়ে আসে এবং পরিকল্পা অনুযায়ী রাতের আধারে যোগী টিলায় নিয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যাকান্ডের ৭ মাস পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উৎঘাটন করেছে পুলিশ।
    বুধবার (০৯ সেপ্টেম্বর) হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা নিজ কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন।
    এ সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারী চুনারুঘাট উপজেলার যোগীর আসন টিলা থেকে অজ্ঞাত এক তরুণীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিচয় শনাক্তসহ ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশের একটি চৌকশ টিম। দীর্ঘ তদন্ত শেষে এ হত্যাকান্ডে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। উৎঘাটন করা হয়েছে নিহত তরুণীর পরিচয়।
    নিহত তরুণী রোকশানা আক্তার মিষ্টি নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার কামালপুর গ্রামের মৃত খোরশেদ আলী মজুমদারের মেয়ে। এছাড়া আটককৃত আফসার মিয়া কাওছার (২৮) চুনারুঘাট উপজেলার পাচারগাঁও গ্রামের মো. আব্দুল খালেকের ছেলে ও তার স্ত্রী রিপা বেগম। তারা দুজনেই মৌলভীবাজারে বসবাস করেন।
    পুলিশ সুপার বলেন, নিহত মিষ্টি মৌলভীবাজার শহরে একটি বেসরকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করত। হত্যাকান্ডের প্রায় এক মাস আগে (চলতি বছরের জানুয়ারিতে) ঘটনাচক্রে আসামি রিপার সাথে ভিকটিম মিষ্টির পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে বাসা ভাড়া নিয়ে কথাবার্তা হয়। এক পর্যায়ে রিপা মিষ্টিকে তাদের বাসায় সাবলেট হিসেবে থাকার প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি হয় মিষ্টি।
    পরে মিষ্টি মৌলভীবাজার শহরের দূর্গা মহল্লায় রিপার ভাড়া বাসায় উঠে। এ সময় মিষ্টির সাথে রিপার স্বামী আফসার মিয়া কাওছারের পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা গড়ায় দৈহিক সম্পর্কে। বিষয়টি জেনে ফেলেন কাওছারের স্ত্রী রিপা। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে চরম দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে স্বামীর সাথে ঝগড়া করে রিপা বেগম সৎ বাবার বাড়ি হবিগঞ্জ শহরতলীর ধুলিয়াখালে চলে আসেন।
    পরদিন কাওছার তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে রিপা স্বামীকে শর্ত দেন পরকিয়া প্রেমিকা মিষ্টিকে তার জীবন থেকে সড়াতে হবে। স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে ও খুশি করতে এ প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান কাওছার। এক পর্যায়ে দু’জন পরিকল্পনা করে মিষ্টিকে মৌলভীবাজার থেকে চুনারুঘাট নিয়ে আসে এবং পরিকল্পা অনুযায়ী রাতের আধারে যোগী টিলায় নিয়ে যান। সেখানে কাওছার আবারো স্ত্রীর সহযোগিতায় মিষ্টিকে ধর্ষণ করে এবং শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
    পরে হাতে থাকা ছুরি দিয়ে মিষ্টির গলায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্বামী-স্ত্রী দুজনে মৌলভীবাজার চলে যায়। এ সময় মিষ্টির সাথে থাকা মোবাইলটি নিয়ে যায় এবং মৌলভীবাজারের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে এবং ৭ মাস পর মূল রহস্য উৎঘাটনসহ ঘাতকদের আটক করে।
    পুলিশ সুপার আরো বলেন, গ্রেফতারকৃতরা ওই তরুণীকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে বুধবার দুপুরে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। এ সময় তারা হত্যাকান্ডের সম্পূর্ণ বর্ণনা দিয়েছে আদালতকে। পরে ঘাতক স্বামী-স্ত্রীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
    এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।