যশোরে শার্শায় এনজিও’র প্রতারনার ফাঁদে সর্বশান্ত মানুষ

    0
    288

    এম ওসমান, বেনাপোল (যশোর) : যশোরের শার্শায় এনজিও’র প্রত্যারনার ফাঁদে পড়ে সর্ব শান্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ। প্রতিনিয়িত এনজিও গুলো গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করে চলেছে। এসব নামী-বেনামী এনজিও গুলোর অতিদ্রুত লাগাম ধরতে না পারলে সর্বশান্ত হবে এ এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষ। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার পরেও এনজিও ছোবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। পরিবার গুলোর উপর চালানো হচ্ছে অমানবিক অত্যাচার। তবে এ এলাকার এনজিও গুলো কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছে অনেকে! স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক করার পিছনে ইন্দন দিচ্ছে ইউএনডিপিসহ দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থা। তার ধারবাহিকতায় যশোরের শার্শায় এনজিও গুলোর দুর্নীতির আখড়া পরিণত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এনজিও ব্যুরো নিয়ন্ত্রণ নেই।

    গত কয়েক বছর থেকে সরকারের বিভিন্ন উপজেলায় এনজিও গুলোর উপর নজরদারীর নির্দেশ দিলেও বাদ পড়েছে যশোরের শার্শা। সরকারি ভাবে এনজিও গুলোর উপর তেমন কোন নজরদারী নেই। আর এ সুযোগ কে কাজে লাগিয়ে এনজিও গুলো দুর্নীতির আখড়া পরিণত করেছে। মানব সেবার আর্দশ নিয়ে গঠিত হলেও বাস্তবে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে এসব এনজিও গুলো। এ কারনে দরিদ্র জনগোষ্ঠির ভাগ্য পরিবর্তন না হলেও এনজিও প্রতিষ্ঠাতাদের আর্থ-সামাজিক ও অবস্থান গত মর্যাদার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে।
    অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, দীর্ঘদিন ধরে যশোরের শার্শা এলাকায় সুনিদিষ্ট নীতিমালা প্রনয়নের বিষয়টি সরকারের নজরদারী না থাকার ফলে এনজিও গুলোর দুর্নীতি সীমাহীন বৃদ্ধি পেয়েছে। এনজিও গুলোর স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নিবন্ধন প্রক্রিয়া কঠোর করা হয়নি। এসব এনজিও রেজিস্ট্রশন হয় দ্য সোসাইটিজ রেজিস্ট্রশন আক্ট, ১৯৮০ এর অধিনে। এ আইনে স্বচ্ছতা, জবাবদিতিা নিশ্চিতকরণও দুর্নীতিরোধের কোন দিকনির্দেশনা নেই।
    সুত্রে জানায়, আন্তর্জাতিক সাহায্যে সাহায্যেকারী এনজিও গুলো দ্যা ফরেন ডোনেশনস রেগুলেশন রুলস-১৯৭৮ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়ের ২০০১ সালের ২৯ মে জারিকৃত পরিপত্রের অনুয়ায়ী চলে আসছে। উক্ত আইনে নিবন্ধনের পর হতে পাচঁ বছর পর্যন্ত প্রত্যেক বেসরকারি এনজিও কে নিবন্ধন নবায়নের আবেদন করার বিধি নিষেধ রয়েছে। এবং আবেদনের সঙ্গে এনজিও’র পাঁচ বছরের কার্যক্রম, বার্ষিক প্রতিবেদন ও নিরিক্ষা প্রতিবেদন দাখিল করার বিধান রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বছরের পর বছর যশোরের শার্শা এলাকার এনজিও গুলোর সামগ্রিক কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি হচ্ছে না। যার ফলে এনজিও গুলো নিজের ইচ্ছে মত কাজ করে চলেছে। কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে অনিয়ম দুর্নীতি করে চলেছে। শার্শায় এনজিও ঋণের জালে জড়িয়ে সর্বসান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। ভিটে মাটি বিক্রি করেও এনজিওর টাকা পরিশোধ করতে না পেরে পথে বসেছে উপজেলার শত শত পরিবার।

    অনেকে এনজিওগুলোর উপর্যুপরি চাপে ঘর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মানুষের দরিদ্রতাকে পুঁজি করে এ অঞ্চলে এনজিও সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বেশকিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সমিতি সমাজসেবা থেকে নিবন্ধন নিয়ে রীতিমত প্রতারণায় নেমে পড়েছে। এরা পল্লী কর্ম সংস্থান ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে ৬ শতাংশ হারে সুদে অর্থ সংগ্রহ করে এনজিওর আদলে মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে ২৫ থেকে ৪২ শতাংশ সুদ আদায় করছে।

    ফলে এ অঞ্চলের মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এনজিও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে দরিদ্র জনগণ ঋণ পরিশোধে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে, আবার অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে অন্য এনজিও থেকে নতুন ঋণ নিচ্ছে, আবার পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এনজিও কর্মীদের অব্যাহত চাপের মুখে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা যোগাড় করতে এখন সুদী মহাজনদের দারস্থ হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এনজিও হলো অলাভজনক, অরাজনৈতিক, সেবামূলক সংস্থা। অথচ স্বল্প সংখ্যক এনজিও বাদে সব এনজিওই লাভজনক সংস্থা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।

    ক্ষুদ্র ঋণের নামে এনজিও গুলো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণজালে জড়িয়ে ফেলছে। বর্তমানে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে এনজিও গুলোর দৌরাত্ম্য কাবুলিওয়ালাদের দৌরাত্ম্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে শার্শায় ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, আশা, রুরাল রিকন্স্ট্রাকশন ফাউন্ডেশন (আর,আর,এফ), জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, বন্ধু কল্যাণ ফাউন্ডেশন, নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশনসহ কয়েক ডজন এনজিও এবং সমিতি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ এনজিও ক্রম হ্রাসমান পদ্ধতির স্থলে সমন্তরাল পদ্ধতির মাধ্যমে ৪২ শতাংশ সুদ আদায় করছে আর নওয়াবেকী গণমুখী ফাউন্ডেশন সুদ আদায় করছে ৪৪ শতাংশ। এরা কোন নিয়মনীতির ধার ধারে না। এর মধ্যে কোন কোন এনজিওর মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম ছাড়া অন্য কোন প্রোগ্রাম নেই। কোন কোন এনজিওর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পশুপালন বিষয়ক প্রোগ্রাম থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল।

    নিয়মানুযায়ী কোন এনজিওকে মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম চালু করতে হলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটার অথরিটি আইন ২০০৬ এর সনদ প্রাপ্ত হতে হয়। অথচ বর্তমানে শার্শায় হাতেগোণা কিছু এনজিও ছাড়া অনেক এনজিওর মাইক্রোক্রেডিট অথরিটি আইন ২০০৬ এর সনদ নেই। তারা স্থানীয়ভাবে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস থেকে সমিতি নিবন্ধন করে এনজিওর আদলে সুদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ঋণ গ্রহীতা মোট ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ টাকা প্রথম কিস্তিতে পরিশোধ করছে সেই সম পরিমাণ টাকা শেষ কিস্তিতেও পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে এনজিও গুলোর সর্বোচ্চ ৭% হারে সুদ নেয়ার বিধান থাকলেও এরা শতকরা ২৫ থেকে ৪২ টাকা পর্যন্ত সুদ আদায় করছে। আর এই হিসাব গ্রামের অশিক্ষিত, সহজ-সরল অনেক মানুষ জানে না।

    ফলে শার্শায় ফ্রি-স্ট্রাইলে চলছে মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম। আর এনজিওগুলো সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাকে পুঁজি করে নিজেরা রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার এনজিওর ঋণদান কর্মসূচি শুধু মহিলা কেন্দ্রীক। শুধু মহিলা সদস্যরাই ঋণ পাওয়ার যোগ্য। ফলে এনজিও কর্মীরা কৌশলে এ সকল মহিলাদের কিস্তির টাকা ও সঞ্চয়ের টাকার হিসাবে গড়মিল সৃষ্টি করে ঠকানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ গ্রহীতাকে এনজিও কর্মীদের হাতে চরম লাঞ্চিত হতে হয়। এছাড়া একটি প্রতারকচক্র বিভিন্ন এনজিওর নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে গ্রামের এসব অশিক্ষিত, অসহায় মহিলা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।