মৌসুমের প্রথম ওয়ানডেতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ

    0
    225

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,২৬সেপ্টেম্বরবাংলাদেশের কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল সফরকারী আফগানিস্তান। শেষ অবধি নিজেদের প্রতিরোধটা ধরে রাখতে পারেনি সফরকারীরা। অবশেষে অনেক নাটকীয়তার পর বছরের ও মৌসুমের প্রথম ওয়ানডেতে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশের টাইগাররা। রোববার রকেট সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।

    তৃতীয় উইকেটে রহমত শাহ ও হাসমত উল্লাহর ১৪৪ রানের জুটি ভাঙার পরই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। দলীয় ১৯০ রানে রহমত শাহ আউট হওয়ার পরের ৬৮ রানে শেষ ৭ উইকেট হারায় আফগানরা। শেষ তিন ওভারে তাসকিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ জিতে মাশরাফি বাহিনী। দুই ওভারে তাসকিন তুলে নেন চার উইকেট। তাতেই জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। প্রথমে ব্যাট করে ২৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ২৫৮ রানে গুটিয়ে যায় আফগানরা।
    অনাতিক্রম্য না হলেও ২৬৬ রানের টার্গেট সহজ ছিল না আফগানদের জন্য। বোলিং অ্যাকশন শুধরে ফেরা তাসকিনের সঙ্গে বাংলাদেশও হাসতে পারতো ইনিংসের অষ্টম বলেই। স্লিপে শেহজাদের সহজ ক্যাচ ফেলেন ইমরুল। সেই শেহজাদকে ফিরিয়েই আফগানদের ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন মাশরাফি সপ্তম ওভারে। মুশফিকের কাছে ক্যাচ দেয়া শেহজাদ ৩১ রান করেন। বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় বলেই সাকিব এলবির ফাঁদে ফেলেন সাবির নুরীকে (৯)।

    এরপরই তৃতীয় উইকেটে বড়সড় প্রতিরোধ গড়েন রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ শাহিদি। তাদের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিংয়ে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। যদিও ৪০তম ওভারে তাইজুলের বলে হাসমতউল্লাহর (তখন তিনি ৬৩ রানে ছিলেন) সহজ ক্যাচ ফেলেছেন মাহমুদউল্লাহ ডিপ মিড উইকেটে। প্রানান্তকর চেষ্টার পর ৪১তম ওভারে উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ। সাকিবের বলে স্ট্যাম্পড হন রহমত শাহ। ভাঙে ১৪৪ রানের জুটি। রহমত শাহ ৯৩ বলে ৭১ রান (২ চার, ৩ ছয়) করেন।

    জীবন পাওয়া হাসমতউল্লাহ ফিরেছেন তাইজুলের বলেই। ৭২ রান করে ৪৪তম ওভারে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দেন তিনি। নিজের শেষ ওভারে মাশরাফি ফেরান নাজিবউল্লাহ জাদরানকে (৭)। তবে নবীর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং টিকিয়ে রেখেছিল আফগানদের। শেষ ১৮ বলে ২৭ রান দরকার ছিল তাদের। তাসকিনের করা ৪৮তম ওভারেই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। তাসকিনের শিকার হন বিপদজ্জক নবী ও আজগর স্ট্যানিকজাই। চতুর্থ বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেন ৩০ রান করা নবী।  শেষ বলে আজগর (১০) ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহর হাতে।

    ৪৯তম ওভারের শেষ বলে রুবেল বোল্ড করেন রশিদ খানকে (৭)। শেষ ৬ বলে ১৩ রান দরকার ছিল আফগানদের। তাসকিনের দ্বিতীয় বলেই মিরওয়াইস আশরাফ (৩) এলবির ফাঁদে পড়েন।  শেষ বলে দৌলত জাদরানও (২) সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেন। ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। তাসকিন ৪টি, মাশরাফি-সাকিব ২টি করে উইকেট নেন।

    এর আগে ১০ মাস বিরতির ছায়া স্পষ্ট ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে। প্রতিপক্ষ আইসিসি সহযোগী আফগানিস্তান হলেও পছন্দের ফরম্যাটে রয়ে সয়ে ব্যাটিং করেছেন টাইগাররা। ইনিংসের শুরু থেকেই সতর্ক ব্যাটিং করেই এগিয়েছেন তামিম-মাহমুদউল্লাহরা। কৌশলী ব্যাটিংয়ে বড় না হলেও চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। ইনিংসটা গড়ে উঠেছে তামিম ও মাহমুদউল্লাহর হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে। তাদের সঙ্গ যুগিয়েছে সাকিব, ইমরুলের দুটি কার্যকরী ইনিংস।

    টসজয়ী বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ইনিংসের প্রথম ওভারেই। দলীয় ১ রানে সৌম্য (০) ক্যাচ দেন পুল খেলতে গিয়ে। সেই ধাক্কাটা অনুভূত হয়নি তামিম-ইমরুলের ব্যাটিং দৃঢ়তায়। তাদের নির্ভেজাল ব্যাটিংয়ে ছেদ পড়ে ১৯তম ওভারে। নবীর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ইমরুল ৩৭ রান করেন। ইনিংসের শুরু থেকেই স্থিতধী ব্যাটিং করা তামিম ১৫ রান করতেই পাড়ি দিয়েছেন নতুন মাইলফলক। এদিন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটে ৯ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি।

    ক্যারিয়ারের ৩৩তম হাফ সেঞ্চুরি পেয়ে যান ৬৩ বলে। মনোসংযোগে চিড় ধরায় সেঞ্চুরিটা আর হয়নি। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে তার ৭৯ রানের জুটিটা থেমে যায় ৩৬তম ওভারে। লং অফে ক্যাচ দেয়ার আগে ৯৮ বলে ৯টি চারে ৮০ রান করেছেন তামিম। রয়ে-সয়ে শুরু করা মাহমুদউল্লাহও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন ৩৮তম ওভারে। দৌলত জাদরানের ওই ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারার সঙ্গে পূর্ণ করেন নিজের ১৫তম হাফ সেঞ্চুরি। নবীর শিকার হওয়ার আগে ৭৪ বলে ৬২ রান (৫ চার, ২ ছয়) করেন মাহমুদউল্লাহ। ব্যাটিং অর্ডারে একধাপ অবনমন হওয়া মুশফিক (৬) ও সাব্বির (২) ফিরেন লেগ স্পিনার রশিদ খানের বলে।

    ২ রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করা সাকিব স্বরুপেই ছিলেন। ৪০ বলে ৪৮ রান করেন তিনি। ইনিংসের শেষ বলে তাইজুল (১১) রহমত শাহর হাতে ক্যাচ দিলে অলআউট হয় বাংলাদেশ। আফগানদের পক্ষে দৌলত জাদরান ৪টি, নবী-রশিদ খান ২টি করে উইকেট পান।