নিজস্ব প্রতিনিধি,সাদিক অাহমেদঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের ন্যায় জাতীয় সংসদের ২৩৮ নম্বর অাসন অর্থাৎ মৌলভীবাজার-০৪ অাসনটিও জমে উঠেছে নির্বাচনি অামজে।চা বাগানের রাজ্য,বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গল উপজেলা ও প্বার্শবর্তী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অঞ্চল খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের এই অাসনটি।
দুই উপজেলা নিয়ে এই আসনের মোট আয়তন ৮৫১ দশমিক ৮৭ বর্গ কিলোমিটার। ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭শ’ জন। বলা হয়ে থাকে মৌলভীবাজার-০৪ অাসনটি মূলত অাওয়ামিলীগের বিশ্বস্ত একটি ঘাঁটি।কেনো না বিগত ৫ টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-০৪ অাসনের সাংসদ হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন অাওয়ামিলীগের উপাধ্যক্ষ ড. মোঃঅাব্দুস শহীদ।মূলত শ্রীমঙ্গল উপজেলা চা বাগানে ভরপুর একটি অঞ্চল।এ অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বসবাস বেশী।চা বাগানের বেশীর ভাগ জনগোষ্ঠীই সংখ্যালঘু।
নৌকার প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকায় প্রার্থী যেই হোক না কেনো নৌকার পক্ষেই ভোট দিয়ে থাকেন তারা।এমনটাই হয়ে অাসছে বিগত ৫ সংসদ নির্বাচন ধরে।মূলত এই অাসনের এমপি নির্বাচিত হয় সংখ্যালঘু,চা বাগানের জনগোষ্ঠী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভোটেই।যে কারণে মৌলভীবাজার-০৪ অাসনে নৌকার জয় মূলত প্রতিবারই অাগে থেকেই ধরে নেয়া হয়।সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অাসনটিতে অাওয়ামিলীগের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া খুব একটা কঠিন হবেনা বলেই ধারণা করছে স্থানীয় মহল।
অপরদিকে দীর্ঘ প্রায় দশ বছরের ক্ষমতাহীন বিএনপি মৌলভীবাজার জেলা শাখার নেতাকর্মীদের নিজেদের মধ্যকার অন্তর্কোন্দল ও বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের মধ্যে রয়েছে অনেকটাই ঐক্যের ফাটল। বিএনপি মৌলভীবাজার শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে মূলত বিএনপি দুটি ভাগে বিভক্ত।যার কিছুটা রেশ শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জেও রয়েছে।অাগের নির্বাচনগুলোর জরীপে,সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ অাসনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি।
বিগত ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী উপাধ্যক্ষ ড.মোঃআব্দুস শহীদ ৯৬,৩২৯ ভোট পেয়ে এই অাসনের এমপি নির্বাচিত হন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন বিএনপির মনোনয়ন না পাওয়া মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)।তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে পেয়েছিলেন ৭০,৩৬৪ ভোট।এ আসনে বিএনপির মনোনিত প্রার্থী বর্তমান শ্রীমঙ্গল পৌরসভা মেয়র মহসিন মিয়া মধু পান ৩৪,৭২৬ ভোট।২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ অাসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ আব্দুস শহীদ ১,৩১,৭৪০ ভোট পেয়ে পূণরায় এমপি নির্বাচিত হন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) ৭৯,৫৯৯ ভোট পান।
তাছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অাবারো এমপি নির্বাচিত হোন উপাধ্যক্ষ ড.মোঃঅাব্দুস শহীদ।তবে দীর্ঘদিন ধরে এ অাসনটিতে একাধারে অাওয়ামিলীগের জয়লাভ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে ভিন্ন কথা।জনমত জরীপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব) এর জনপ্রিয়তা মোটেও কম নয়।প্রতিবারের মতো এবারও সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে এ অাসনটির এবারের চিত্র পাল্টে যেতে পারে এমনটা অাশা করছেন বিএনপির দলীয় নেতৃবৃন্দ।
বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীগণ ও জনমত জরীপ
অাওয়ামিলীগঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-০৪ অাসনের মনোনয়ন ফর্ম কিনেছেন সর্বমোট ৬ জন প্রাথী।তারা হলেনঃ বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ অাব্দুস শহীদ(ইতিমধ্যে তার মনোনয়ন সম্পর্কে পজিটিভ ধারনা শুনা যাচ্ছে),অাওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ রফিকুর রহমান,বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলর এর সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী,হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব, দ্বারিকা পাল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ,মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মনসুরুল হক ও মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজাদুর রহমান।
এই অাসনে এবার বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ অাব্দুস শহীদের বিপরীতে অাওয়ামিলীগের অারোও ৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন।মূলত বর্তমান সাংসদের প্রতি অাস্থা হীনতা ও গ্রুপিং রাজনীতির কারণে অাসনটির এমপি হবার প্রত্যাশী অারও পাঁচজন।বর্তমান মৌলভীবাজার-০৪ অাসনে অাওয়ামিলীগের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে গ্রুপিং রাজনীতি।ইতোমধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একাধীক গ্রুপের প্রচারণা করতে দেখা গেছে।বিশেষ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগ,যুবলীগের একটি অংশকে দেখা গেছে মনোনয়ন প্রত্যাশী মনসুরুল হকের পক্ষে প্রচারণা চালাতে।তবে অাসনটিতে মূলত লড়াই হতে পারে অাব্দুশ শহীদ ও রফিকুর রহমানের মধ্যে বলছে স্থানিয়রা।অর্থাৎ জনমত জরীপে শহীদ-রফিক দ্বৈরথেই বেরিয়ে অাসতে পারে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবাচনে নৌকার মাঝি হচ্ছে কে ? সাধারন জনমত জরীপে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে অাছেন বর্তমান সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মোঃ অাব্দুস শহীদ।
তিনি মৌলভীবাজার-০৪ অাসনে একাধারে ৫ বারের নির্বাচিত এমপি।অত্যন্ত পরিশ্রমী,অাওয়ামী রাজনীতির একান্ত বিশ্বস্ত তিনি।মূলত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের উন্নয়নের রূপকার বলা হয়ে থাকে অাব্দুস শহীদকে।এই দুটি উপজেলার উন্নয়নের পেছনে যার নামটি সবার উপরে তিনি ড.মোঃঅাব্দুস শহীদ। তিনি মৌলভীবাজার জেলা অাওয়ামিলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।তাছাড়া তিনি বর্তমান সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি নবম জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইফ ছিলেন এবং সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।প্রবীণ এই অাওয়ামিলীগ নেতা ৮ম জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইফ ছিলেন।অাওয়ামিলীগের দুর্দীনেও যেসব নেতার ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত অপরীসিম তার মধ্যে অন্যতম নেতা হচ্ছেন অাব্দুস শহীদ।প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিস্বস্ত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে মোঃ অাব্দুস শহীদকে মনোনয়ন দিলে অাসনটিতে অাওয়ামিলীগের জয়লাভ মোটামুটি দিব্যালোকের মতো স্পষ্ট এমনটাই ধারণা করছে বেশির ভাগ ভোটার।
এদিকে প্রবীণ অারেক অাওয়ামিলীগ নেতা রফিকুর রহমানও রয়েছেন মনোনয়ন বোর্ডের জরীপে।মূলত ঠান্ডা মাথা ও কোমল মনের মানুষ হিসেবে খ্যাত রফিকুর রহমান অাওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।তাছাড়া অাওয়ামী পরিবারের অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও ত্যাগী নেতা হিসেবে রফিকুর রহমান যদি মনোনয়ন পান তবে সেটা অকল্পনীয় কিছু হবে না।
অন্যদিকে হ্যাভীওয়েট নেতা হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে অাব্দুল অাহাদ চৌধুরী।একজন ত্যাগী ও সুক্ষ্ণ মাথার রাজনিতীবিদ হিসেবে অনেকটাই প্রতিষ্ঠিত প্রবীণ এই অাওয়ামী নেতা।
বেশ ভালোভাবে এগিয়ে অাছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান রনধীর কুমার দেব।এ অাসনটির জন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬ জনের মধ্যে একমাত্র সংখ্যালঘু প্রার্থী রনধীর কুমার দেব।মূলত মৌলভীবাজার-০৪ অাসনের এমপি নির্বাচিত হয়ে থাকেন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ভোটে।তাই জনপ্রিয়তা ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর একচেটিয়া ভোটের কথা চিন্তা করে রনধীর কুমার দেবকে অাওয়ামিলীগ মনোনীত করলে সেটা খুব অস্বাভাবিক কিছু হবে না যদিও নির্বাচিতদের মনোনয়ন দিবেন না বলে জানিয়েছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
অপরদিকে এগিয়ে রয়েছেন মনসুরুল হক ও এড.অাজাদুর রহমানও।ইতোমধ্যেই বেশ ঢালাও ভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন মনসুরুল হক।অন্যদিকে চমক হিসেবে এগিয়ে অাছেন অাজাদুর রহমানও।একজন আইনজীবী রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রার্থী হবার দাবীদার তিনিও।
বিএনপিঃএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৪ অাসনে বিএনপির একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব)।একজন পরিপাটি রাজনীতিবিদ হিসেবে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে হাজী মুজিবের।বিভিন্ন মামলায় জর্জরিত বিএনপির পক্ষে এ অাসনটিতে এবার একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি।বুঝাই যাচ্ছে অন্তর্কোন্দলে বিভক্ত বিএনপি মোটামুটি বর্তমানে ঐক্যবদ্ধ।যার প্রমাণ মিলে অাসনটিতে কেবল বিএনপির পক্ষে একমাত্র মনোনয়ন সংগ্রহ থেকে।অাসনটিতে হাজী মুজিবের রয়েছে ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা।৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নতুন হয়েও স্বতন্ত্র হিসেবে দাড়িয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া থেকেই বুঝা যাচ্ছে অাসনটিতে বিএনপির ভোটারদের যতটা না প্রিয় ধানের শীষ মার্কা তার চেয়ে বেশী প্রিয় তাদের কাছে হাজী মুজিব।
জাতীয় পার্টিঃজাতীয় পার্টির পক্ষে লাঙ্গল এর জন্য মৌলভীবাজার-০৪ অাসন থেকে একমাত্র মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন মহিবুল কাদির চৌধুরী পিন্টু।অামার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা নিশ্চিত করেছেন মৌলভীবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীমঙ্গল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী কামাল হোসেন।
উল্লেখ্য,ষোষিত পূণঃতফসিল অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অাগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর।