মৌলভীবাজার বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব

    0
    293

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৮জুন,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত কমিটির সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানকে মানছেন না অধিকাংশ নেতা কর্মীরা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে যে বলয়ে ছিলেন এই বলয়ের নেতাদেরও প্রবল বিরোধীতার মুখে পড়েছেন। তাদের দাবী বিএনপির মত একটি সংগঠনের জেলায় নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা তার অর্জন হয়নি।

    অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতির তার প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতাদের বক্তব্য তিনি সরকার দলের নেতাদের দালাল। সেকারণে উভয়মুখী চাপে পড়ে নতুন সম্পাদকের এখন নাস্তা নাবুদ অবস্থা।

    গত ২৫ মে বিএনপির মহা সচিব স্বাক্ষরিত ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষনা করেন। ঐ কমিটিতে বিবদমান দু’গ্রুপ থেকেই সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক মনোনিত করা হয়। ভাবা হয়েছিল দীর্ঘ ৮ বছরের গ্রুপিং এর অবসান হবে। কিন্তু কমিটি ঘোষনার পর নতুন আরেক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে।

    সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি মূলত: দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর এক ভাগে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন প্রয়াত সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র সাবেক এমপি এম নাসের রহমান। অন্য অংশে নেতৃত্ব দেন মহিলা আসনের সাবেক সাংসদ বেগম খালেদা রব্বানী। বর্তমান কমিটির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ছিলেন খালেদা রব্বানীর অনুসারী। এই অংশে আরো ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও তিনবারের ইউপি চেয়ারম্যান ফয়ছল আহমেদসহ উল্লেখ যোগ্য আরো নেতারা।

     এদিকে নতুন কমিটি ঘোষনার পর মিজানের অনুসারিরা শহরে আনন্দ মিছিল করলেও জেলা বিএনপির বৃহৎ অংশ ও ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, শ্রমিকদলসহ সকল অংগসংগঠনের নেতাকর্মীরা সরকারী দলের দালাল আখ্যা দিয়ে তার বিপক্ষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএপির সিনিয়র নেতা মৌলভী আব্দুল ওয়ালি সিদ্দিকী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মুকিত,বকসী মিছবাউর রহমান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মতিন বকসসহ বিএনপি ও সহযোগি সংগঠনের আরো অনেকে।

    প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মিজান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো তার কোন যোগ্যতা নেই। ষড়যন্ত্র করে তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামের নেতা কর্মীদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে মিজান সরকার দলের এজেন্ট ছিলেন। তিনি বলেন আগামী নির্বাচনে সাইফুর রহমানের উত্তরসূরী হিসাবে এম নাসের রহমানই মৌলভীবাজার সদর আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। তিনি বলেন, মিজানকে জেলা বিএনপির সম্পাদক করায় সরকারী দলের এজেন্ডাই বাস্তাবায়ন হবে আর দলের আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম নির্বাচন কর্ম পরিকল্পনা আগাম ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

    বিগত দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামের তার উপর কোন একটি মামলা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সাথে আতাঁত করে তিনি রাজনীতি করেন। অনেক ত্যাগি ও সিনিয়র নেতাকর্মীদের রেখে সরকার দলের একজন দালালকে বিএনপিরমতো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ত্যাগি নেতাকর্মীরা কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারছেন না।

     জানা গেছে,গত প্রায় ৮ বছর ধরে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির ৩ সদস্যের একটি অপুর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। ঐ কমিটির সভাপতি ছিলেন এম নাসের রহমান সাধারন সম্পাদক খালেদা রব্বানী ও প্রথম যুগ্ম সম্পাদক এম এ মুকিত। তারাই বিগত ৮ বছর ধরে জেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম  পরিচালনা করেন। তবে দৃশ্যত সাংগঠনিক কার্যক্রম দুই ধারায় পরিচালিত হয়। নাসের এর সঙ্গে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক এম এ মুকিত। অন্যদিকে খালেদার সঙ্গে ছিলেন মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন, চেয়ারম্যান ফয়ছল আহমেদ ও মিজানুর রহমান মিজান।

    এদিকে জেলা বিএনপির নুতন কমিটি ঘোষনা করার পর দলের জন্য মামলা হামলা ও নির্যাতনের শিকার ত্যাগী নেতা কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের স ারিত হয়। তাদের অভিযোগ,বিগত সময়ে সরকার বিরোধী সকল আন্দোলনে মিজানের ভূমিকা ছিল দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ। আন্দোলন সংগ্রামের কারণে সাবেক অর্থমন্ত্রী পুত্র এম নাসের রহমানসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ত্যাগী অনেক নেতা কর্মীরা পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ঐসব নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দেওয়া হয়। তখন সময় জেলার নেতারা পুলিশের তারা খেয়েও আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করেন। অন্যদিকে বর্তমান কেন্দ্র ঘোষিত কমিটির সাধারন সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজানের উপর সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময়ের কোন মামলাই হয়নি। জনশ্রতি রয়েছে সরকার দলের নেতাদের সঙ্গে আতাঁত করে লোক দেখানো মিছিল হয়েছে পৌরসভা থেকে চৌমোহনা পর্যন্ত। তাও করা হয়েছে পুলিশের অনুমতি নিয়ে। এসব অভিযোগে নতুন কমিটির সম্পাদককে কোন পক্ষই মেনে নিতে পারছেন না।

    জেলা বিএনপি  নেতা ফয়ছল আহমদ বলেন,‘আমরা খালেদা রাব্বানীর বাসায় বসে বিএনপির কমিটির তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। নতুন কমিটিতে কিভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে আমরা প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি আরও বলেন,মিজানুর রহমান ছাত্র নেতা হিসাবে ঠিক থাকলেও জেলা বিএনপির মতো একটি কমিটিতে তাকে সেক্রেটারী করা হয়েছে তা যোগ্য হিসাবে আমি মনে করি না। আমরা কেন্দ্রে এ কমিটিকে অবিলম্বে বাতিলের জন্য সুপারিশ করব।

    জেলা বিএনপির নতুন কমিটির  সহ-সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, হঠাৎ করে কিভাবে কমিটি হয়েছে তা আমি জানি না। আমরা যেভাবে তালিকা দিয়েছি সেভাবে কমিটি হয়নি। অনেক নেতাকর্মী আছেন যারা দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, তাদেরকে করা হয়েছে জেলা কমিটির সদস্য। অন্যান্য নেতা আছেন যারা যোগ্য পোষ্টে থাকার কথা তাদের নাম দেয়া হয়নি। আবার যারা ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখেন তাদের নাম কমিটিতে নাই।

    তিনি আরও বলেন,আমি দীর্ঘদিন জেলা বিএনপির সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেছি। এখন আমাকে দলের সহ সভাপতি করা হয়েছে। এটি দলের কেউ মানতে পারছেন না। বর্তমান সম্পাদকের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন এদের দিয়ে বিএনপির মত বৃহৎ সংগঠন পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আমি দু তিন দিনের মধ্যে নেতাদের নিয়ে বসবো। নতুন কমিটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অনাস্থা পাঠাব।

    উল্লেখ্য, গত ২৫ মে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে সাবেক এমপি এম নাসের রহমানকে সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভিপি মিজানুর রহমান মিজানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৮ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী কমিটি’র অনুমোদন দেয়া হয় এবং আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে নির্দেশ দেয়া হয়।