মৌলভীবাজার জেলার বন্যা কবলিত মানুষের করুণ হাল

    0
    229

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৯জুলাই,আশরাফ আলী:মৌলভীবাজার জুড়ে চলছে হাহাকার। বন্যা স্থায়ী রুপ নেওয়ায় দূর্গত এলাকায় বেড়েই চলেছে হাহাকার। বন্যাদূর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। বন্যা ওদের পিছু নিয়েছে। বন্যায় সবকিছু গিলে খেয়েছে। ঘরে চাল, ভাত, পানি কিছুই নেই।  নেই জিনিষ  ছাড়া আছে জিনিষ বলতে কিছুই নেই। শুধুই নেই আর নেই। চারদিকে আছে শুধু হাহাকার। দফায় দফায় বন্যায় হাওর পারের মানুষগুলো নিঃস্ব।

    মৌলভীবাজার জেলার হাওর পারের মানুষের করুণ চিত্র।  হাকালুকি হাওর পারের শাহপুর, সাদিপুর, মিরশংকর, মহেশঘরি, ভূকশিমুল, বেলাগাঁও, জাঙ্গিরাই, ইউসুফ নগর, নয়াগ্রাম ও বাছিরপুর  গ্রামের মানুষগুলো হয়ে পড়েছে নির্বিকার। বন্যা ওদের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। ওদের পিছু ছাড়ছে না বন্যা।

    হাওর পারের মানুষদের সাথে কথা হলে অনেকেই তাদের দুর্ভোগের কথাগুলো তুলে ধরেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন তাদের চরম অসহায়ত্বের কথা। বোরো ধান হারানোর পর থেকে এবছর কিভাবে একের পর এক বন্যায় তাদের সব কেড়ে নিয়েছে। সব হারিয়ে কিভাবে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ৩য় দফার এই বন্যা প্রায় মাস দিন। কিন্তু পানি কমার কোনো লক্ষণই নেই। উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে বন্যা।

    হাকালুকি হাওর পারের বাসিন্দারা জানান, দিনে পানি কিছু কমতে দেখা গেলে রাতের বৃষ্টিতে আবার যেই সেই। কিছু কিছু এলাকায় পানি কমলেও নিচু এলাকায় পানি আগের মতোই রয়েছে। আবহাওয়ার অবস্থাও বেশ ভালো নয়। এ অবস্থায় বন্যার কিছুটা উন্নতি হলে, বৃষ্টির কারণে আবারো অবনতি হচ্ছে। হাকালুকি হাওর পারের ৩ উপজেলার বন্যার পানি আগের মতোই রয়েছে।

    জেলার কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার প্রায় ২৫টি ইউনিয়নের দুই শতাধিক গ্রামের রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, ঘরবাড়ি, মসজিদ-মন্দির পানির নিচে রয়েছে। প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বেলাগাঁও এলাকায় গেলে দেখা যায় রাস্তায় বুক পানি। এবং অনেক বাড়ি পানির নিচে রয়েছে।

    ঘরবাড়ি বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের কষ্টের শেষ নেই। বন্যার কারণে যেমন তাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে, তেমনি রান্নাঘর, টিউবওয়েল আর টয়লেটও পানিতে তলিয়ে গেছে। হাকালুকি হাওর পারের মানুষগুলো চৈত্রের ভয়াবহ অকাল বন্যার ধকল সামলে ওঠার আগেই পর পর বন্যা। এভাবে বন্যার কারণে তারা একের পর এক সব কিছুই হারিয়েছেন। আর এ বন্যায় তাদের শেষ আশ্রয়স্থল বাড়িঘরও পানিতে তলিয়ে গেছে।

    এখন হাকালুকি হাওরের চারদিকে শুধু থৈ থৈ পানি আর পানি। যাদের ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানেও ভালো নেই তারা। তাদের সঙ্গী হয়েছে নানা সমস্যা। হাওর পারের কৃষক ও মৎস্যজীবীদের কাজ না থাকায় নেই আয় রোজগারও। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে তারা এখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। চরম অসহায় আবস্থায় পড়েছে হাওর পারের মানুষগুলো।

    মানুষের মতো অসহায় ওই এলাকার গৃহপালিত পশুগুলোও। খাদ্য আর বাসস্থান হারিয়ে তারাও পড়েছে চরম সংকটে। খাদ্যহীন, গৃহহীন মানুষগুলোর দুর্ভোগ আর মানবেতর জীবনযাপন এখন তাদের নিত্যসঙ্গী। বন্যায় অসহায় মানুষগুলো রাত পোহালেই ত্রাণের আশায় পথের পানে চেয়ে থাকেন জীবন বাঁচাতে ও পেটের দায়ে। কিন্তু তারা হতাশ। কারণ তারা দুর্দিনে পাচ্ছেন না আশানুরূপ সাহায্য। সরকারি তরফে যে সহযোগিতাগুলো আসছে তা যেমন পর্যাপ্ত নয়। তেমনি যে বরাদ্দগুলো আসছে তাও পুরোপুরি ভাবে পৌঁছাচ্ছে না তাদের হাতে।

    এখন পর্যন্ত জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। ফলে  জেলার হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওর পারের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর ও মৌলভীবাজার এই পাঁচটি উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। কুশিয়ারা নদী, হাকালুকি, কাউয়াদীঘি ও হাইল হাওরে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৩০টি ইউনিয়নে বন্যা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও তা স্থির থাকছে না। প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ায় তা আগের অবস্থায় চলে আসছে।

    জানা যায়, জেলার ৩০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৩০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক পরিবার। এছাড়া ২ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত থাকায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শতাধিক মৎস্য খামার। বন্যায় মৌসুমি সবজি, আউশ ও রোপা আমনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সবাই আশা প্রকাশ করেন আবহাওয়া ভালো হলে, বৃষ্টি থামলে বন্যার পানি কমতে শুরু করবে।